![](https://media.priyo.com/img/500x/https://samakal.com/media/imgAll/2024June/untitled-19-1717617501.jpg)
চ্যালেঞ্জিং সময়ে বাজেট আকাঙ্ক্ষা
সন্দেহ নেই, শত বাধাবিঘ্ন পেরিয়েও বাংলাদেশ এগোচ্ছে। নীতি বাস্তবায়নকারীদের মাঝে দ্বিধাদ্বন্দ্ব আর বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ না থাকলে হয়তো আরও এগোতে পারতাম। আমাদের কৃষি অনেক বছর ধরে ভালো করছে, রপ্তানি এবং প্রবাসী আয় না বাড়লেও পিছিয়ে নেই। তবে যেভাবে সরকারের ব্যয় বাড়ছে, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প এসে ব্যয় পরিকল্পনাকে ভারাক্রান্ত করছে, সে তুলনায় আয় বাড়ছে না। দেশি-বিদেশি মুদ্রার তারল্য সংকটে শিল্প ও বিনিয়োগের চাকা শ্লথ হয়ে পড়ছে। এরই মধ্যে আজ সংসদে আসছে আগামী অর্থবছরের বাজেট।
দুই বছর ধরে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ঘরে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানাই বাজেটে সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। এ জন্য কমিয়ে আনা হবে বাজেট ঘাটতি। একই উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে ঘোষিত সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির সফল বাস্তবায়নে সরকারের রাজস্বনীতিতেও ব্যয়সাশ্রয়ী পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে। সার্বিকভাবে আগামী বাজেট হবে কিছুটা সংকোচনমূলক। মূল্যস্ফীতির প্রভাব থেকে স্বল্প আয়ের মানুষকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিতে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির পরিধি বাড়ানোর বিষয়টি খোদ সরকারপ্রধান বলেছেন।
নানামুখী সংকটে রয়েছে দেশের প্রায় সব শিল্প খাত। দাম বাড়ার পরও ডলারের তারল্য সংকট পুরোপুরি কাটেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, শিল্পের কাঁচামাল থেকে শুরু করে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমছে। পাশাপাশি গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে ভুগছে শিল্পকারখানা। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। বাড়ছে না পণ্য রপ্তানির ক্রয়াদেশও। শিল্পকারখানার উৎপাদন কমছে। এসব কারণে বেসরকারি খাতে নতুন বিনিয়োগ ও বিদ্যমান ব্যবসা সম্প্রসারণে গতি নেই। এ পরিস্থিতিতে বেসরকারি খাতের কর্মকাণ্ড চাঙ্গা করে কর্মসংস্থান বাড়ানোই মূল চ্যালেঞ্জ হবে বলে উন্নয়ন সহযোগীরা ইতোমধ্যে মতামত দিয়েছে।
আগামী বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৫ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা এনবিআরকে আদায় করতে হবে। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী, আগামী অর্থবছরে ৪ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার কর রাজস্ব আদায় করতে হবে।
‘ক্রলিং পেগ’ চালুর পর এখন ডলারের দর দাঁড়িয়েছে ১১৭ টাকা ৯০ পয়সা। গেল ৮ মে পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক দর ছিল ১১০ টাকা। একবারে প্রতি ডলারে ৮ টাকা বেড়েছে। এতে সরকারের বিদেশি দায় পরিশোধে চাপ আরও বাড়বে, সন্দেহ নেই। অর্থ পাচার, হুন্ডি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ না নিয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডলারের বাজার বাগে আনার চেষ্টা করলেও বস্তুত কাজ হচ্ছে না। একদিকে বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ দ্রুত কমছে, অন্যদিকে আগে নেওয়া বিদেশি ঋণ ও বিনিয়োগ ফেরত নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। বিদেশিদের অনেকে এখন বিনিয়োগ ফেরত নিয়ে ইউএস ট্রেজারি বিল ও বন্ডে খাটাচ্ছেন। এতে চাপে পড়েছে আর্থিক হিসাব। গত মার্চ পর্যন্ত আর্থিক হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরে একই সময়ে যা ছিল মাত্র ২ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার। এর আগে সব সময় আর্থিক হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল। এতে আমদানি নিয়ন্ত্রণের পরও ধারাবাহিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে। ২০২১ সালের রিজার্ভ এখন ১৮ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। আর আড়াই বছর আগের ৮৫ টাকার ডলার এখন আমদানিকারকদের ১১৮ থেকে ১২২ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
দাতা সংস্থার শর্ত– সঠিক বাজেট ব্যবস্থাপনার স্বার্থে, বিশেষ করে জ্বালানি ও বিদ্যুতে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে হবে। একই সঙ্গে ভর্তুকি কমানোর টাকায় সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি সম্প্রসারণের পরামর্শও রয়েছে। ইতোমধ্যে সরকার ভর্তুকি তুলে দিতে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে পর্যায়ক্রমিক সূত্রভিত্তিক মূল্য সমন্বয়ের ব্যবস্থা নিয়েছে। চলতি অর্থবছরে কয়েক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পাশাপাশি আগামী অর্থবছরে চারবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতি মাসে সরকারকে বিদ্যুতে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। মূল্য বৃদ্ধির পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হলে আগামী অর্থবছরের শেষের দিকে এ ভর্তুকি কমে আসবে। একইভাবে আগামী তিন অর্থবছরের মধ্যে এ খাতে ভর্তুকি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
- ট্যাগ:
- মতামত
- জাতীয় বাজেট
- অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ