কোন জাদুমন্ত্রে অপরাধীরা হাওয়া হয়ে যায়?
আমার এক ভাই পেশায় মেরিন ইঞ্জিনিয়ার কিন্তু নানাধরনের তুকতাক, জাদুটোনায় ছিল তার ব্যাপক আস্থা। এগুলো নিয়ে সে উদ্ভট সব গল্প ফেঁদে বসতো এবং আমরা সেগুলো শুনে খুব আনন্দ পেতাম। তাই ভাই জাহাজ থেকে নামার পরপরই আমরা তার গল্প শোনার জন্য বসে যেতাম। শুধু নাবিক জীবনের গল্পই নয়, দেশেও কিভাবে উনি বিভিন্ন দোয়া কাজে লাগিয়ে বিপদের হাত থেকে উদ্ধার পেয়েছেন, সেই গল্পও থাকতো।
বিপদে দোয়া যে কাজে লাগে, তা আমরা সবাই বিশ্বাস করি। কিন্তু তাই বলে এইভাবে? যেমন, ১৯৯২ সালের দিকে উনি চিটাগাং থেকে একটি আধাভাঙ্গা গাড়ি, ২৭ হাজার টাকায় কিনলেন। এরপর চালিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। গাড়ির কোনো কাগজপত্র নেই, ওনার লাইসেন্স আপডেট করা নেই, গাড়ি ঘঁর-ঘটর করে রাজপথে চালিয়ে উনি ঢাকায় এলেন। আমরা জানতে চাইলাম, পথে পুলিশ আটকালো না? বললো, আরে নাহ এমন দোয়া পড়েছি যে পুলিশ যে স্পটে দাঁড়ানো ছিল, সেখানেই আমার গাড়ি ভ্যানিস হয়ে যেতো। ভাইয়ের কাছে এরকম অনেক কাহিনী আছে। কিন্তু আজ এতবছর পর এই উধাও হয়ে যাওয়ার গল্প মনেহলো দেশের কিছু ঘটনার কথা শুনে।
এই দেশটায় বোধকরি জিন-ভূতের আছড় পড়েছে, তা না হলে এতসব আজগুবি কাণ্ড ঘটছে কিভাবে। কিছুদিন আগে যার ভয়ে বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খেতো, যিনি দুর্নীতিকে কবর দেয়ার কথা বলতেন, চারিদিকে অপরাধীরা যাকে দেখে পালিয়ে যেতো - সেই মানুষই নাকি একে-ওকে ভয় দেখিয়ে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়াতে জমি-বাড়ি কিনেছেন। ঢাকা শহরের অসংখ্য বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের মালিকও নাকি তিনিই! তিনি যে গোপনে গোপনে পাহাড় সমান সম্পদের মালিক হযে গেছেন, এ কথাও কেউ জানতো না।
জনগণ না হয় জানতে পারেনি, কিন্তু তাই বলে রাজা, সেনাপতি, মন্ত্রী, দ্বাররক্ষী, কোতোয়াল, পাইক, বরকন্দাজ এবং গুপ্তচর বাহিনী কেউ কিছু জানতে পারেনি। এটা কি আমাদের বিশ্বাস করতে হবে? একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা চুরিদারি করে প্রায় ৭০০ বিঘা জমি হাপিস করে ল্যান্ডলর্ড বনে গেলেন, অথচ কেউ কিছু টের পায়নি। বাহ অদ্ভুত। এখন প্রতিদিন নিত্য নতুন খবর বের হচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে যেন মাটি ফুঁড়ে খবর বের হচ্ছে। সেই বে নজীর নামের ব্যক্তি কি এমন জাদুটোনার সাহায্যে এইসব অন্যায় করতে পারলেন?
এতসব অভিযোগ প্রকাশিত হওয়ার পরেও সেই ‘জাদুকর ব্যক্তি’ পরিবার পরিজন, টাকা-পয়সা পকেটস্থ করে ভেগে গিয়েছেন, এবং সেইখবরও নাকি কেউ জানতে পারেনি। হয়তো বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে ফাঁকি দিয়ে সেইরকম কোন জোরদার মন্ত্র পড়ে হাওয়া হয়ে গিয়েছেন তিনি। কারণ একদা জনপ্রিয় ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব একজন মানুষ যদি কাউকে না জানিয়ে, গোপনে বিমানে আরোহন করতে চান, তাহলেতো তার বোরকা পরিধান করার কথা। তবে কি তিনি বোরকা পরেই পাড়ি দিয়েছেন?
শুধু কি নিজের? পত্র-পত্রিকা বলছে বেনজীর আহমেদকে পুঁজি করে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনও নাকি কোটিপতি হয়েছেন। তাদের বিষয়েও খোঁজ নিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। খোঁজ নিচ্ছে ভালো কথা কিন্তু ‘চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে’ কথাটিও কি এক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়? সাবেক পুলিশ প্রধানের এখন এমন সব স্থানে সম্পত্তি পাওয়া যাচ্ছে, তা সব দুর্নীতিকে হার মানছে। তার সম্পদের পরিমাণ দেখে পুলিশ কর্মকর্তারাও হতবাক হয়ে পড়ছেন। অথচ তিনি বক্তৃতায় প্রায়ই বলতেন পুলিশের কোনো সদস্য দুর্নীতি বা কোনো ধরনের অপরাধ করলে তার দায়ভার বাহিনী নেবে না। তিনি যে এ ধরনের অপরাধ করেছেন তার দায়ভার তাহলে কে নেবে? নেবে গৌরীসেন। এই গৌরীসেন সবসময় সকল অপরাধের দায়ভার গ্রহণ করে বলে আজকে এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।