ব্যবসার পরিবেশ সূচকের অবনতির জন্যও কি বিশ্ব পরিস্থিতি দায়ী

বণিক বার্তা আবু তাহের খান প্রকাশিত: ০৪ জুন ২০২৪, ১১:১১

দেশে বিরাজমান অসহনীয় মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের কথা উঠতেই রাষ্ট্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা এর জন্য তোতা পাখির মতো শেখানো উচ্চারণে করোনা মহামারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও অন্যান্য পণ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করতে শুরু করেন, যদিও তথ্যগতভাবে এর কোনোটিই মূল্যস্ফীতি বা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রকৃত কারণ নয়। করোনার প্রভাব বিশ্ব ও বাংলাদেশ থেকে ২০২১-২২ সালের মধ্যেই বহুলাংশে মিটে গেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব ২০২২ সালের পর আর নেই বললেই চলে। অন্যদিকে ২০২১ সালের পর থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য অধিকাংশ সময়েই আরো হ্রাস পেয়েছে। ফলে এটি খুবই স্পষ্ট যে, দায়িত্বশীলদের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও অপকর্ম থেকে সৃষ্ট অর্থনৈতিক দুরবস্থার দায় এড়ানোর জন্যই তারা এসব কথা আপ্তবাক্যের মতো উচ্চারণ করে থাকেন। আর তা করতে গিয়ে সেসব বক্তব্যকে কখনো কখনো তারা রীতিমতো হাস্যকর পর্যায়েও নিয়ে যাচ্ছেন।


গত ৩০ মে রাতের এক টেলিভিশন টকশোতে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিধাভোগী এক প্রাক্তন উপাচার্য সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের দুর্নীতির বিষয়ে বলছিলেন যে, এ ব্যাপারে সরকারের কোনো দায় নেই—এর জন্য দায়ী হচ্ছে বিশ্বব্যাপী প্রসারমাণ দুর্নীতি। আর ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি গণহত্যার প্রসঙ্গ টেনে  অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়াজনিত পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য জাতীয় সংসদ ও মন্ত্রিসভা বৈঠক থেকেও একই সঙ্গে সবাইকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে, যা সারা পৃথিবীর মধ্যেই এক বিরল ব্যতিক্রমী ঘটনা। কারণ ইসরায়েলকেন্দ্রিক মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এর বড় ধরনের কোনো বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে—এ রকম কোনো কথা বা ভবিষ্যদ্বাণী বাংলাদেশের বাইরে আর কোথাও কোনো রাজনীতিক বা অর্থনীতিবিদ উচ্চারণ করেছেন বলে এখন পর্যন্ত চোখে পড়েনি।


তো এই যখন রাষ্ট্র-সংস্কৃতি, তখন গত ৩০ মে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) কর্তৃক প্রকাশিত ব্যবসা পরিবেশ সূচকের (বিজনেস ক্লাইমেট ইনডেক্স- বিসিআই) তথ্য নির্দেশ করছে যে, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে দেশে ব্যবসার পরিবেশ সূচক ৪.২ পয়েন্ট নিচে নেমে গেছে। এক্ষেত্রে নির্ধারিত ১১টি সূচকের মধ্যে সাতটির ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য অবনমন ঘটেছে এবং তিনটির ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটলেও পরিমাণে তা খুবই সামান্য। আর একটি সূচক (পরিবেশগত নিয়মনীতি ও মান) এবারই প্রথম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বিধায় এর অগ্রগতি-অনগ্রগতির বিষয়টি হয়তো আগামী বছর বোঝা যাবে। উল্লিখিত অবনমিত সূচকগুলোর মধ্যে পয়েন্টের হিসাবে সবচেয়ে বেশি পতন ঘটেছে যে দুটি ক্ষেত্রে তার একটি হচ্ছে ‘‌ব্যবসা শুরু করা’ এবং অন্যটি হচ্ছে ‘‌ঋণের প্রাপ্যতা’। এখন ব্যক্তি মাত্রই স্বীকার করবেন যে, বাংলাদেশের মতো শিল্পে অনগ্রসর একটি দেশে উদ্যোক্তার জন্য ঝক্কি-ঝামেলাবিহীন ও হয়রানিমুক্ত পরিবেশে ব্যবসা শুরু করতে পারাটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সে রকম একটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা সংক্রান্ত সূচকের অবনমনই যদি সবচেয়ে বেশি মাত্রায় ঘটে তাহলে বুঝতে হবে যে, এ দেশের ব্যবসা ও শিল্পের সঙ্গে নতুন উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ ও সম্ভাবনা ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে। তাহলে যে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে মাঝে মাঝেই দেশের শিক্ষিত তরুণদের  চাকরির খোঁজ না করে উদ্যোক্তা হওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে, সেটি কি তাহলে কেবলই কথার কথা?


ব্যবসা শুরু করার সূচকের অবনমনের সঙ্গে বৈদেশিক বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ার বিষয়টিও বহুলাংশে জড়িত। অথচ দুষ্প্রাপ্য ও উচ্চ মূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিরা নিরন্তর দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছেন বিদেশীদের  এ কথা বলার জন্য যে, বাংলাদেশ হচ্ছে বিদেশী বিনিয়োগের জন্য পৃথিবীর সেরা স্বর্গভূমি। কর্তাদের এমন বক্তব্যের মুখে লক্ষ্য বিদেশীর কেউ যদি জিজ্ঞাসা করেন যে, বাংলাদেশ যদি বিনিয়োগের এমন স্বর্গভূমিই হবে তাহলে অভ্যন্তরীণ জরিপেই (এমসিসিআইয়ের   জরিপ) মাত্র এক বছরের ব্যবধানে ব্যবসা শুরু করার পরিবেশ সূচক কেন ৮.০৪ পয়েন্ট নেমে গেল? আর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য পাস করে বেরোনো তরুণই-বা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পরামর্শে চাকরি না খুঁজে ব্যবসা বা শিল্প স্থাপনের আশায় প্রয়োজনীয় অলিগলি খুঁজে পাবে কেমন করে? আর সেসব না পেয়েই যে তারা বন্যার স্রোতের মতো বিদেশমুখী হচ্ছে—গন্তব্যস্থলের বর্তমান হালচাল কিংবা ভবিষ্যতের হালহকিকত কিছু না জেনেই—সে বিষয়ে সন্দেহ পোষণের এতটুকু কোনো অবকাশ আছে কি? আর একই কারণে দেশের বিদ্যমান উদ্যোক্তারাও যে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে বা নতুন ব্যবসায় হাত দেয়ার ব্যাপারে প্রায়ই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন, সেটাও তো বিদ্যমান বাস্তবতারই অংশ। তাহলে এ পরিবেশে নতুন ব্যবসা শুরুর কাজটিও কি বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ পরিস্থিতির মতোই ক্রমান্বয়ে কেবলই পতনের দিকে ধাবিত হতে থাকবে?

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও