সুশাসন ও জবাবদিহির ঘাটতিতেই ঋণমানের অবনমন

সমকাল ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রকাশিত: ০১ জুন ২০২৪, ১২:১৯

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি ফিচ বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়ে দিয়েছে। আগের ‘বিবি মাইনাস’ থেকে রেটিং কমিয়ে এবার ‘বি প্লাস’ দিয়েছে। এর আগে অপর দুই মার্কিন ঋণমান নির্ধারণ সংস্থা এসঅ্যান্ডপি ও মুডিসও বাংলাদেশের রেটিং কমিয়েছে।


দেশের অর্থনীতি মোটামুটি একটা সন্তোষজনক অবস্থার দিকেই যাচ্ছিল। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে অন্তর্ভুক্ত এবং বর্তমানে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ। কিন্তু এখন আমরা অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। বহির্বিশ্বের কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যেমন কভিড, ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যের সংকট ইত্যাদি। এসব ঘটনা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সবচেয়ে ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের দেশীয় প্রতিবন্ধকতা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ কমে যাওয়া, ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য হ্রাস পাওয়া, ব্যাংক খাতে অস্থিরতা, স্থবির বিনোয়োগ অবস্থা, কর্মসংস্থানের অভাব ইত্যাদি। চলমান পরিস্থিতি দেখে মনে হয়, অর্থনীতি সামাল দিতে গিয়ে আমাদের প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন সবকিছু বানচাল হয়ে যাচ্ছে। সার্বিকভাবে উন্নয়ন বলতে বোঝায়, মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের ব্যাপারে আমরা সমস্যায় রয়েছি। 


আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থাগুলো ইচ্ছামতো তারা রেটিং বসিয়ে দেয় না; কঠোরভাবে কিছু শর্ত বিবেচনা করে দেখে। সম্প্রতি বাংলাদেশ রেটিংয়ের প্রায় সর্বক্ষেত্রে খারাপ করেছে। রেটিং কম হলে বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ দিতে পারে, কিন্তু সে ক্ষেত্রে রিস্ক প্রিমিয়াম লাগবে। ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেনের জন্য কোনো ঝুঁকির দরকার নেই। কারণ এসব দেশে কোনো দুর্নীতি নেই কিংবা ব্যাংক খাতের এত অস্থিরতাও নেই। ঋণমান রেটিংয়ের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশটির ঋণ ফেরত দেওয়ার যোগ্যতা, রিজার্ভ, সঠিক খাতে অর্থ ব্যয় হবে কিনা ইত্যাদি বিষয় দেখা হয়। এর বাইরে তারা অনেক কিছু পর্যবেক্ষণ করে, যেগুলো হয়তো তারা প্রকাশ করে না। যেমন দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সুশাসন, জবাবদিহি, স্বচ্ছতা, দুর্নীতি ইত্যাদি। মূলত রেটিং নির্ধারণে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির চিত্র বিবেচনায় নেওয়া হয়। এটা শুধু দেশের ঋণ দেওয়ার জন্য নয়। এ কারণে বৈশ্বিক কিংবা অভ্যন্তরীণ অবস্থা বোঝার ক্ষেত্রে রেটিং গুরুত্বপূর্ণ। রেটিং ভালো হলে আমরা ঢাকঢোল পেটাব। আবার খারাপ হলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে পাত্তা দেব না। দেশের কোনো কর্তৃপক্ষকে এ ধরনের মনোভাব দেখানো উচিত নয়। আমাদের দেশের ভেতরে কিংবা বাইরের সার্বিক পরিস্থিতির সঙ্গে রেটিংয়ের মান জড়িত। সুতরাং আমাদের রেটিং ঠিক করতে হবে। 


বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এখানকার পরিস্থিতি ব্যবসাবান্ধব নয়। অথচ অর্থনীতি সচল রাখার জন্য দেশে কিংবা বিদেশে একটা সহায়ক পরিবেশ অপরিহার্য। আমরা রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনও স্থিতিশীল করতে পারিনি। প্রশাসনে শৃঙ্খলা, দক্ষতা, সততা ও নিষ্ঠার অভাব রয়েছে। অন্যদিকে রয়েছে দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ, টাকা পাচার। এ অবস্থায় বাইরের দেশ থেকে বিনিয়োগে অনাগ্রহ দেখা যাওয়াটা স্বাভাবিক। দেশের সুযোগ-সুবিধা, ব্যাংক ঋণ কুক্ষিগত হয়ে গেছে। বিনিয়োগের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে কমে যাচ্ছে। এই পরিবেশ তৈরি করতে হলে দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরের কিছু দিক ঠিক করতে হবে। বিদেশ থেকে ঋণ এনে দেশের অবকাঠামো নির্মাণ কিংবা অর্থনীতি চাঙ্গা করে তুলতে হলেও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। ঋণদানের ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠান দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতার ওপর জোর দেবে। কিন্তু অন্যান্য বিদেশি প্রতিষ্ঠান দেখবে মুদ্রামাণ, ব্যাংক খাত, লভ্যাংশ, বিনিয়োগ করলে টাকাটা তোলা যাবে কিনা ইত্যাদি। 


বিদেশি রিজার্ভের কথাই বলা যাক। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিগত কিছু ভুলের কারণে রেমিট্যান্স ঠিকভাবে আসছে না। হুন্ডি নিয়ন্ত্রণ, অর্থ পাচার বন্ধ করা গেলে রেমিট্যান্সের আকার বড় হবে। প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের অবস্থাও ভয়াবহ। আমাদের নিজেদের কিছু চেষ্টা ও পদক্ষেপ নিতে হবে। শেয়ার বাজার বা ক্যাপিটাল মার্কেট ঠিক করা, ব্যাংক খাত স্থিতিশীল করে গড়ে তোলা, আইনকানুন ঠিক করা, আদালতকে আরও গতিশীল করা ইত্যাদি পদক্ষেপ আমাদের নিতে হবে। এগুলো প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে দেশের অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলে। সব মিলিয়ে একটি দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ, বাণিজ্যিক আবহ তৈরি হয়। এসব পরিস্থিতি রেটিংকে প্রভাবিত করে। ব্যবসার আবহ সৃষ্টি করতে হলে পুরো আর্থিক ব্যবস্থায় গুরুত্বের সঙ্গে নজর দেওয়ার পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে ঢেলে সাজাতে হবে। 


ইতোমধ্যে আমরা আর্থিক খাত নিয়ে যেসব নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেগুলোর পরিণতি বর্তমানে ভুগতে হচ্ছে। রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলারের ওপরে ছিল, যা ২০২১ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে নিচে নামতে শুরু করে। এগুলো আমরা পর্যবেক্ষণ করিনি, এমন কিন্তু নয়। তবে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। বাংলাদেশ ব্যাংক সংকট সামলানোর নামে ১২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করে দিয়েছিল। এটার কোনো প্রয়োজন ছিল না। স্বাভাবিকভাবে আমাদের আমদানি সক্ষমতাও কমে গেছে। এসব সিদ্ধান্তের কারণে দেশের অর্থনীতি খারাপের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে এখনও আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ রয়েছে। 

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও