কিশোর-তরুণদের ধূমপানের নেশামুক্ত রাখতে হবে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস পালনে এ বছর প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে-‘Protect Childreen from Tobacco Industry Interfearence’. প্রতিপাদ্যের বাংলা ভাবানুবাদ করা হয়েছে-‘তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ প্রতিহত করি, শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করি’। বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রতিপাদ্যটি যথার্থ ও অত্যন্ত সময়োপযোগী। কারণ, শিশু-কিশোর-তরুণরা ধূর্ত তামাক কোম্পানিগুলোর প্রধান টার্গেট। আর বাংলাদেশ শিশু-কিশোর ও তারুণ্যের দেশ। বর্তমানে জনগোষ্ঠীর ৪৯ শতাংশ বয়সে তরুণ, যে কারণে বাংলাদেশকে ‘ইয়ুথ ডিভিডেন্ট’ হিসাবে চিহ্নিত করেছে জাতিসংঘ। কিশোর-তরুণরাই আগামীর বাংলাদেশের রূপকার। এ কারণেই শৈশব ও কৈশোর পেরিয়ে যৌবন অর্থাৎ তারুণ্যে পদার্পণের সময়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণও বটে! ঝুঁকিপূর্ণ এজন্যই যে, অল্প বয়সেই বেশির ভাগ তরুণ-তরুণী কৌতূহলবশত কিংবা প্ররোচনায় ধূমপানসহ ভয়াবহ মাদকের নেশায় জড়িয়ে পড়ে, বিভিন্ন গবেষণায় যার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৭ সালের তথ্যমতে, দেশে ৩৫.৩ শতাংশ (৩ কোটি ৭৮ লাখ) প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ধূমপান ও তামাক সেবন করে। এর সঙ্গে আরও একটা অংশ রয়েছে, যারা এ গণনার বাইরে। অর্থাৎ শিশু-কিশোরদের মধ্যেও এ বদভ্যাস রয়েছে, যা একটি অশনিসংকেত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরিচালিত Global School Based Student Health Survey-2014 গবেষণা বলছে, বাংলাদেশে ১৩-১৫ বছর বয়সি শিশু-কিশোরদের মধ্যে তামাক ব্যবহার করে ৯ দশমিক ২ শতাংশ।
শৈশব-কৈশোর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়-যে সময়ে তারা নিজেকে গড়তে শেখে, যে সময়ে নিজেকে তৈরি করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে সুবর্ণ সময় পার করে। তারুণ্যে অনেক স্বপ্ন ও আশা থাকে। এটি উৎসাহের সময়, আত্মবিশ্বাসের উন্নতির সময়। যদি তারুণ্যের এ সময়ে সে কোনো ভুল করে বসে বা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারে, তাহলে তার পুরো জীবনটাই মূল্যহীন, বৃথা হয়ে যায়। তাই এ সময়ে যাতে তরুণরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং ভুল পথে পা না বাড়ায়, সেজন্য একটা সুন্দর দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। যেটা করতে পারেন শিল্পী ও কলাকুশলীরা। আর এরাই যদি অকারণে, অযাচিতভাবে বিনোদন মাধ্যমগুলোয় সিগারেট, অ্যালকোহল, মাদকের বিজ্ঞাপনে অংশগ্রহণ করে, তাহলে আমাদের আগামী প্রজন্ম রসাতলে যাবে। আইডলরা সচেতনভাবেই যদি শিশু-কিশোরদের মগজে ‘নেশার ইনজেকশন’ পুশ করতে থাকেন, তাহলে এর ফলাফল আরও ভয়াবহ হতে পার। তখন নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো সচেতনতা কর্মসূচি চালিয়ে আসা আমাদের মতো লোকদের চেষ্টা বৃথা হয়ে যায়। কারণ আমি ১০ জনকে তামাকের নেশা ছাড়তে উদ্বুদ্ধ করছি, কিন্তু তারা ১০০ জনকে এ নেশায় উৎসাহিত করছে! এতে আমাদের প্রচেষ্টা অনেকটা সমুদ্রে বালতি দিয়ে পানি সেচার মতো হয়ে যায়। এক্ষেত্রে মা-বাবার ভূমিকা অনেক বেশি। তারা সন্তানকে এ ব্যাপারে কথা বলবেন, সাবধান করবেন।
ইদানীং দেখা যায়, কিশোর-তরুণদের যাতায়াত বেশি এমন বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ‘ধূমপানের স্থান’ বেড়ে যাচ্ছে। মূলত রেস্টুরেন্ট মালিকদের সুবিধা দিয়ে সেগুলো তৈরি করছে সিগারেট কোম্পানিগুলো। সেখানে ধূমপান থেকে শুরু করে বিভিন্ন মাদকও সেবন করা হয়। ফলে তরুণদের মধ্যে সামাজিক রীতিনীতি, মূল্যবোধ উঠে যাচ্ছে। পাশাপাশি এসব স্থানে পরিবার-পরিজন নিয়ে উপভোগ্য সময় কাটাতে আসা মানুষজন ভয়াবহ স্বাস্থ্যগত ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। ধূমপানের আখড়া তৈরি করে ব্যবসা প্রসার করাই মূল উদ্দেশ্য সিগারেট কোম্পানির। লক্ষ করলে দেখবেন, স্কুল-কলেজসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, জনবহুল স্থান ও আশপাশে সিগারেটের দোকান, ভ্রাম্যমাণ দোকান বেশি। সিগারেট কোম্পানির কৌশলী বিজ্ঞাপন বাচ্চাদের চোখ সমান্তরালে প্রদর্শন করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ধারা-৫ অনুসারে, তামাকের সব ধরনের বিজ্ঞাপন, প্রচারণা ও পৃষ্ঠপোষকতা নিষিদ্ধ। স্থানীয় সরকার বিভাগের তামাক নিয়ন্ত্রণ নির্দেশিকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়কেন্দ্র নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তারপরও সিগারেট কোম্পানিগুলো যা করছে, তা রীতিমতো আইনের লঙ্ঘন ও রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ!
- ট্যাগ:
- মতামত
- ধূমপান
- তরুণ প্রজন্ম
- মাদকাসক্তি