ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুই মেয়র তাদের পাঁচ বছর মেয়াদের চার বছর পূর্ণ করেছেন সম্প্রতি। একই সঙ্গে দুই করপোরেশনের মোট ১২৯ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদেরও চার বছর মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে। আগামী বছর মে মাসের মধ্যে দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর পদে আবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
দুই মেয়রের চার বছর মেয়াদপূর্তির পর তাদের সাফল্য ও ব্যর্থতা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে। নগরবাসীও হিসাব করে দেখছেন কী তাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল, আর কী তারা পেয়েছেন এ চার বছরে। নগর বিশেষজ্ঞরা পর্যালোচনা করেছেন দুই মেয়রের নির্বাচনি-প্রতিশ্রুতি কী ছিল, তার কতটুকু পূরণ হয়েছে। ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) পরিচালক আদিল মুহাম্মদ খান তার এক নিবন্ধে দুই মেয়রের চার বছরের কার্যকাল পর্যালোচনা করেছেন। নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়, ‘নির্বাচনি ইশতেহারে উত্তরের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম একটি সুস্থ, প্রাণবন্ত ও আধুনিক শহর গড়ে তোলার জন্য ৩৮টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অপরদিকে দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস তার নির্বাচনি ইশতেহারে ঐতিহ্যবাহী, সুন্দর, প্রাণবন্ত সুশাসিত ও উন্নত ঢাকা গড়ে তুলতে প্রায় ৫০টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। উভয় মেয়রই ঢাকার ভয়ানক যানজটের উন্নতি, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও মশার উপদ্রব নির্মূলসহ সাহসী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।’
দুই মাননীয় মেয়র চার বছর আগে নির্বাচনের সময় যেসব সাহসী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার অর্ধেকও যদি বাস্তবায়িত হতো, তাহলে ঢাকা মহানগরীর চেহারা অনেকটাই পালটে যেত। বিশেষজ্ঞরা তাদের মেধা-অভিজ্ঞতা দিয়ে প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়নের চুলচেরা বিশ্লেষণ করবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দুই কোটি নগরবাসী, যারা ভোট দিয়ে দুই মেয়র ও কাউন্সিলরদের নির্বাচিত করেছেন, তাদের প্রাপ্তি কতটুকু, সেটাই প্রধান বিবেচ্য বিষয়।
নগরবাসী দেখতে চান যানজট ও জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির কতটা উন্নতি হয়েছে। নগরবাসী জানতে চান মশার উপদ্রব, বর্জ্যদূষণ, বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, ফুটপাত বেদখল সমস্যা দূর হয়েছে কিনা। এসব প্রশ্নের উত্তর মেয়র-কাউন্সিলরদের কাছ থেকে পাওয়ার দরকার নেই। নগরবাসী নিজের চোখেই তো সবকিছু দেখছেন। চার বছর আগে নগরীর পরিস্থিতি-পরিবেশ যা ছিল, তা থেকে উন্নতি হয়নি, বরং পিছিয়ে গেছে। এটাই বাস্তবতা। দুই নগরপিতা চার বছরে তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে পারেননি, বাকি এক বছরে কতটুকু পারবেন?
দুই মেয়র অবশ্য তাদের ব্যর্থতা স্বীকার করবেন না, এটাই স্বাভাবিক। ব্যর্থতা স্বীকারের সংস্কৃতি আমাদের দেশে গড়ে ওঠেনি। উভয় মেয়রই বলেছেন, প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে তাদের উদ্যোগ ছিল। বাস্তবায়নের কাজও কিছু হয়েছে। কিন্তু এসব উদ্যোগ ও বাস্তবায়ন নগরবাসীর কাছে কতটা দৃশ্যমান, সেটাই প্রশ্ন।
যানজট
নগরবাসী দেখছেন মেট্রোরেল ও এক্সপ্রেসওয়ে চালু হওয়ার পরও ঢাকা শহরে যানজট একটুও কমেনি, বরং বেড়েই চলেছে। ঢাকা নগরবাসীর কাছে যানজটই প্রধান সমস্যা, তাই এ সমস্যা নিয়ে প্রথমে কিছু বলা যাক। যানজট নিয়ে অনেক গবেষণা, আলোচনা-পর্যালোচনা, লেখালেখি অতীতে হয়েছে, এখনো হচ্ছে। উদ্যোগ হয়তো নেওয়া হয়েছিল যানজট কমানোর, কিন্তু তা দৃশ্যমান হয়নি। যানজটের আতঙ্কে নগরবাসী ঘর থেকে বের হতে চান না। কিন্তু প্রয়োজনের তাগিদে বের হতেই হয়, আধঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে অনেক সময় ২-৩ ঘণ্টাও লেগে যায়। যানজটে আটকা পড়ে রাস্তায় গরম ও ধুলার মধ্যে বসে থাকা কতটা কষ্টকর তা ভুক্তভোগীরাই বোঝেন।