তিন হাজার প্রকল্পের ভারে ন্যুব্জ এডিপি
আর্থিক সংকট দীর্ঘ হওয়ায় এডিপির আকার খুব বেশি বাড়ানো হয়নি। আগামী অর্থবছরের (২০২৪-২৫) বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার বেড়েছে গত অর্থবছরের তুলনায় মাত্র ২ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু লাগাম টানা যায়নি উন্নয়ন প্রকল্পের। সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৩২৫ প্রকল্পের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়ছে নতুন এডিপি। এদিকে অর্থনীতিবিদরা বারবার তাগাদা দিচ্ছেন রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প নেওয়া যাবে না। সরাসরি দেশের মানুষ ও অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে, সেরকম প্রকল্প নিতে তাগিদ দিচ্ছেন তারা। এদিকে পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালামও মনে করেন প্রকল্প যাচাই-বাছাইয়ে আরও কঠোরতা প্রয়্নোজন। সম্প্রতি এনইসি বৈঠক শেষে অনুষ্ঠিত ব্রিফিংয়ে এমন মত দেন তিনি।
জানতে চাইলে পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিত কর্মকার রোববার যুগান্তরকে বলেন, আগামী অর্থবছরের এডিপিতে প্রকল্প নির্ধারণের ক্ষেত্রে ব্যাপক যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। এই প্রথমবার বাছাই কমিটি করে প্রকল্পের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাই এবার যেনতেন প্রকল্প যুক্ত হয়নি। তবে যেসব প্রকল্প অনুমোদনহীন ও বরাদ্দহীন, সেসব প্রকল্পের বিষয়ে কোনো কথা বলাই ঠিক নয়। কেননা পুরো অর্থবছরে এই সবুজ পাতা থেকে প্রায় ২০ শতাংশ প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি হয় এবং অনুমোদন করা হয়। বাকি ৮০ শতাংশই পড়ে থাকে। সুতরাং এসব যোগ করে প্রকল্পের সংখ্যা ৩-৪ হাজার ধরা ঠিক হবে না। এভাবে হিসাব করলে ধারণাগত ভুল হবে। তিনি আরও বলেন, এবার মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো প্রায় ২ হাজার ২০০টির মতো প্রকল্প পাঠিয়েছিল। আমরা সেটি যাচাই-বাছাই করে কমিয়ে এনেছি। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক মোস্তফা কে. মুজেরী যুগান্তরকে বলেন, শুধু প্রকল্প নিলেই তো আর উন্নয়ন হয় না। সত্যিকার অর্থে এসব প্রকল্প কতটা পর্যালোচনা করে দেখা হয়েছে, সেটি বড় প্রশ্ন। এর আগে আমরা দেখেছি অনেক প্রকল্প বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে গুরুত্ব নির্ধারণ করা হয়েছিল। এটা নিঃসন্দেহে পরিকল্পনা প্রক্রিয়ার একটা বড় দুর্বলতা। কেননা যদি গুরুত্বহীনই হয়, তাহলে এসব প্রকল্প এডিপিতে কেন ঢুকানো হলো? আবার প্রকল্প নিয়ে বরাদ্দ না দিয়ে বা সামান্য বরাদ্দ দিয়ে রাখা হয়। এর ফলে ওইসব প্রকল্প কখনোই সময় ও নির্ধারিত ব্যয়ে শেষ হয় না। ফলে হাজার হাজার কোটি টাকা অপচয় হয়। কাজেই যেসব প্রকল্প জনকল্যাণ ও অর্থনৈতিক দিক থেকে আউটকাম আসবে না, সেসব প্রকল্প নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। প্রকল্প বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সম্পদের সঙ্গে সমন্বয় ঘটাতে হবে। এভাবে একটা দেশের উন্নয়ন হতে পারে না। তাই উন্নয়ন প্রকল্প বাছাই প্রক্রিয়া ঢেলে সাজাতে হবে।