দূরদর্শিতার অভাবেই ব্যাংক একত্রীকরণের সিদ্ধান্ত
ড. জাহিদ হোসেন বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি, ডলার–সংকট, ব্যাংক একীভূতকরণ, মূল্যস্ফীতি, বিদ্যুতের ভর্তুকি তুলে নেওয়া, বাজেট—এসব বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন।
অর্থনীতি ঝুঁকিতে পড়বে, এমন আশঙ্কা বেশ আগে থেকেই করা হচ্ছিল, অর্থনীতিবিদেরাও সতর্ক করছিলেন। দেশের অর্থনীতির গত তিন-চার মাস আগের অবস্থা বিবেচনায় নিলে বর্তমান পরিস্থিতি কি আরও খারাপ হয়েছে?
ড. জাহিদ হোসেন: আগের চেয়ে যে ভালো হয়নি, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। যেসব সূচক দিয়ে অর্থনীতির পরিস্থিতি বিবেচনা করা হয়, সেগুলোর কোনোটার অবস্থাই ভালো নয়। মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ, রাজস্ব আয়, আর্থিক খাতের দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদ, ঋণাত্মক আমদানি, জিডিপি বা শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি—যেসব ক্ষেত্রে ডেটা পাওয়া যায়, সেগুলো বিবেচনায় নিলে বলা যায় পরিস্থিতি খারাপের দিকেই গেছে। শুধু এক ক্ষেত্রে স্বস্তি দেখা যায়, তা হচ্ছে রেমিট্যান্স। কয়েক মাস ধরে মাসে ২০০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসছে। রপ্তানির পরিসংখ্যান দেখলে অবশ্য মনে হয়, রপ্তানি খারাপ নয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই পরিসংখ্যান ঠিক কি না। বাস্তবতার সঙ্গে এর মিল পাওয়া যাচ্ছে না।
তার মানে কি অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি? নাকি যথাসময়ে ও যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি?
ড. জাহিদ হোসেন: আমি বলতে চাই যে সময়মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এখন কিছু নেওয়া হয়েছে, যেগুলোকে সঠিক বলে ধরে নেওয়া যায়। আবার কিছু ক্ষেত্র, যেমন বৈদেশিক মুদ্রার বাজার ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা বিভ্রান্তিকর। এটা সুফল দেবে কি না বলা যাচ্ছে না। মুদ্রানীতি, বিনিময় হার—এসব ক্ষেত্রে নানা প্রতিশ্রুতি এবং অনেক কিছু করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। সামনে বাজেটে এর কোনো প্রতিফল দেখা যায় কি না, সে জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
এ সময় কাঠামোগত সংস্কারের ক্ষেত্রে যে সক্রিয়তা দরকার ছিল, তা হয়নি। আর্থিক খাতের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো যথাযথ ভূমিকা নিতে পারেনি বা নেয়নি। অথচ দুর্বল প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে কী করা হবে, তা নিয়ে সক্রিয় ভূমিকা প্রত্যাশিত ছিল। মূল কথা হচ্ছে, পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে যেসব উদ্যোগ ও নীতি নেওয়া উচিত ছিল, তা হয়নি।
পদক্ষেপ নেওয়া গেল না কেন? আপনি কী মনে করেন?
ড. জাহিদ হোসেন: সমস্যা সমাধানের যে পথ ধরা হয়েছে, তা অনেক ক্ষেত্রেই যথাযথ নয়। আবার সরকার বা নীতিনির্ধারকেরা এসব না বুঝে করেছেন, এটাও আমি মনে করি না। একটি দৃষ্টান্ত দিই, সুদের হার ৯ শতাংশের যে সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল, তা এখন তুলে দেওয়া হয়েছে। আমরা আবার আগের নীতিতে ফিরে এসেছি। সুদের হার কম হলে ব্যবসা ভালো হবে, এটা আসলে ভুল ধারণা। কিন্তু কেন এটা করা হয়েছিল? বিশেষ স্বার্থে এবং বিশেষ শ্রেণিকে সুবিধা দেওয়ার জন্যই এটা করা হয়েছিল। সস্তায় ঋণ দিতে পারলে ক্ষমতায় থাকা যাবে, এটাই সম্ভবত বিবেচনা ছিল।
বাজার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও আমরা সেই ভুল নীতি দেখি। পেঁয়াজ বা এ-জাতীয় কোনো পণ্যের দাম বেড়ে গেলে আমরা বাজার কারসাজির কথা বলি। এ ক্ষেত্রে সরকার কী করে? খুচরা পর্যায়ে একটি দাম নির্ধারণ করে দেয়। এ ব্যবস্থা কখনো কাজে দিতে পারে না। আমদানিকারক, আড়তদার বা পাইকারি ব্যবসায়ীদের ওপর সরকার হাত দেয় না বা দিতে চায় না। আসল জায়গায় হাত না দিলে কাজ হবে কীভাবে?