এই পৃথিবীর জন্য মায়া
পৃথিবী প্রত্যেক মানুষের প্রয়োজন মেটাতে যথেষ্ট, কিন্তু প্রত্যেক মানুষের লোভ নয়- বলেছিলেন প্রিয় মানুষ মহাত্মা গান্ধী। আজকের পৃথিবী কেমন আছে? উত্তরে খুব ভালো আছে, তা বলার সুযোগ কম। কোভিড-১৯ থেকে মানুষ শিক্ষা নিতে পেরেছে কি না, তা বড় প্রশ্ন। উন্নত চিন্তায় পরিবেষ্টিত থাকা বিদগ্ধজনরা হালে বলছেন, "নৈতিকতার ধর্মগুলো ধীরে ধীরে মানুষের অভ্যাস থেকে সরে যাওয়ায় খোদ প্রকৃতি প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠছে কি না- তা নিয়েও চিন্তা করার সময় হয়েছে।"
অন্যদিকে বৈশ্বিক রাজনীতির বৈষয়িক আদ্যপান্তের ফলাফল খুঁজতে অযাচিত জৈব অস্ত্রের অত্যধিক ব্যবহারে এই পৃথিবীর আয়ু কতদিন আছে, তা নিয়েও মানবগোত্রকে ভাবতে হবে। তবে সুপ্রিয় সত্তা গান্ধীজির চিরন্তন মতবাদে সিক্ত হওয়ার যথেষ্ট উপলক্ষ আছে। বায়োফিজিক্যাল পরিবেশের সামঞ্জস্য রক্ষার জন্য অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে সারাবিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতা। চলুন, পাঠক এগোতে থাকি।
জার্মান শব্দ এনভায়রন থেকে পরিবেশ শব্দটির উৎপত্তি। অন্যদিকে বায়োফিজিক্যাল পরিবেশ প্রকৃতির কিছু সপ্রতিভ উপাদান ঘিরে সজীব এবং নির্জীব বিবর্তনের রূপ, যা পরখ করতে বাধ্য হয় জনমানুষ। সমুদ্র, বায়ুমণ্ডল এবং স্থলজ পরিবেশ অন্তর্ভুক্ত হয়ে বায়োফিজিক্যাল পরিবেশের সংখ্যা অযুত। মানুষের সংস্কৃতি তথা মানবিক সম্পর্কের মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক পরিবেশ এই পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্ব করছে বলে মনে করা হলেও অপরাপর জীব ও জড় পদার্থের সম্পর্ক জানান দেয় অন্য বার্তা। যেখানে জলবায়ু কোনো নির্দিষ্ট স্থানের সুদীর্ঘ সময়ের আবহাওয়ার গড় বা সামগ্রিক অবস্থার ফলাফল হিসেবে উত্তীর্ণ হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা প্রায় দেড় যুগের অধিককাল সময় থেকেই ঘোষিত। তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রভৃতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত প্রকৃতি জলবায়ুর স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার আওতাভুক্ত হলেও উল্লেখিত উপাদানগুলোর স্থায়ী পরিবর্তন হলে, তা জলবায়ু পরিবর্তন। যেমন, বাংলাদেশের জলবায়ু মোটামুটি উষ্ণ, আর্দ্র ও সমভাবাপন্ন। মৌসুমি বায়ুর প্রভাব অত্যধিক, সে কারণে, এখানকার জলবায়ু 'ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু' নামে পরিচিত।
এদিকে আজকের পৃথিবীতে সব জীবকুলকে অবশ্যই নিজেদের পরিবেশের পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে টিকে থাকতে হচ্ছে। অক্সিজেননির্ভর উদ্ভিদ ও প্রাণী স্বস্তিতে তখনই থাকতে পারবে, যখন অক্সিজেন নিরপেক্ষ আণুবীক্ষণিক জীবের মাধ্যমে কার্বন ডাই অক্সাইডের ভাঙনের সংঘটিত বাস্তবতা দৃশ্যমান হবে। বলাবাহুল্য, বিশ্বব্যাপী গড় তাপমাত্রার বর্তমান বৃদ্ধি প্রাথমিকভাবে মানুষের জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর কারণে ঘটেছে।
অন্যদিকে প্রকৃতির চমকপ্রদ মিথস্ক্রিয়াগুলোর অনিয়মিত ফলাফল ও স্থায়ী পরিবর্তনের রূপগুলোর যোগফল হলো জলবায়ুর পরিবর্তনের নমুনা।
কোনো সন্দেহ নেই যে, পরিবেশবাদ একটি বিস্তৃত সামাজিক এবং দার্শনিক আন্দোলন, যার একটি বড় অংশ বায়োফিজিক্যাল পরিবেশের ওপর মানুষের খারাপ প্রভাব হ্রাস এবং ক্ষতিপূরণের চেষ্টা করে। জলবায়ু পরিবর্তন, প্রজাতি বিলুপ্তি, দূষণ এবং পূর্ণবিকশিত বনাঞ্চল ধ্বংস করার মধ্য দিয়ে জনশ্রেণি সভ্যতা খুঁজতে গিয়ে বিপদে পড়ে গেছে।