কূটনৈতিক সফর নিয়ে অহেতুক রাজনৈতিক বিতর্ক
ডোনাল্ড লু হলেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। অর্থাৎ এ অঞ্চল তাঁর কর্মক্ষেত্র; সে সূত্রেই তাঁর ঢাকা আগমন। ভারত ও শ্রীলঙ্কা হয়ে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। তাঁর এবারের সফর ঘিরে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে যে বাদানুবাদ দেখেছি, তা নেহাতই অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বাগাড়ম্বর। এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি বা ডোনাল্ড লুর সফরের সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে হয় না।
এটা সত্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে স্পষ্ট কিছু মতামত দেওয়া হয়েছিল। নির্বাচনের পরও ওয়াশিংটন তার অবস্থান স্পষ্ট করেছে। এটা নিয়ে ক্ষমতাসীন দল বা সরকারের খানিকটা অস্বস্তি থাকতে পারে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক যতটা গভীর ও বিস্তৃত; নিছক রাজনৈতিক দলের পক্ষ-বিপক্ষ অবস্থানের মাধ্যমে তা নির্ধারিত ও পরিবর্তিত হওয়ার সুযোগ নেই।
আমরা জানি, বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির গন্তব্য দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এক নম্বরে। সেদিক থেকে ডোনাল্ড লুর সফরের সঙ্গে আমাদের রপ্তানির বিষয় জড়িত না থাকার কোনো কারণ নেই। রপ্তানি ছাড়াও কর্মসংস্থান ও বাণিজ্যের জন্যও বাংলাদেশে বিনিয়োগ প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্র সম্ভাব্য বিনিয়োগকারী হতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলার বিষয়ও আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রও বলছে, জলবায়ুর অভিঘাতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত; তা মোকাবিলায় প্রযুক্তি হস্তান্তর ও আর্থিক সহায়তার ক্ষেত্রেও আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বাইরেও আঞ্চলিক বিষয় ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’ যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকারে রয়েছে। তারা এ বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। আমাদের প্রয়োজন মাথায় রেখে আমরা যদি তাদের সঙ্গে কাজ করতে পারি, তবে সেখানেও লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। যেমন দুর্যোগ মোকাবিলা, আঞ্চলিক ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে আমরা ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলও কাজে লাগাতে পারি।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন, মার্কিন প্রশাসন থেকে যারাই বাংলাদেশ সফর করুক না কেন, আমরা সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যেই একসঙ্গে কাজ করব। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুটি বিশেষ আলোচনার বিষয়ে বলেছেন: ভিসা নীতি ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা। নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অযাচিত হস্তক্ষেপ বা প্রভাব বিস্তারের কারণে বাংলাদেশে এই ভিসা নীতি প্রয়োগ করা হতে পারে। এমনকি এরই মধ্যে বেশ কিছু ব্যক্তির ওপর এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে বলেও জানায় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ঠিক কাদের ওপর এই ভিসা নীতি প্রয়োগ হয়েছে, তা আমরা জানি না। তারা কিছু ক্যাটেগরি দিয়েছিল যে, যারা এ ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকবে, তাদের ক্ষেত্রে এটা প্রয়োগ হবে। তবে প্রয়োগটা যে জনসমক্ষে হবে না– তাও তারা বলে দিয়েছিল।
যে কোনো দেশের ভাবমূর্তির ক্ষেত্রেই মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। সে কারণে বাংলাদেশ সরকারও বিষয়টি নিয়ে আলোচনাকে অগ্রাধিকারে রেখেছে। আর র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা যে কারণে দেওয়া হয়েছিল, সেই মানবাধিকার বিষয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি ছাড়াই তারা তা উঠিয়ে নেওয়ার কথা ভাববে না। তবে এ ক্ষেত্রেও আলোচনার অবকাশ তো রয়েছেই।