ফারাক্কা লংমার্চের প্রাসঙ্গিকতা আজও ফুরায়নি

সমকাল ড. মো. ফখরুল ইসলাম প্রকাশিত: ১৬ মে ২০২৪, ১২:০২

আ জ থেকে ৪৮ বছর আগে, ১৯৭৬ সালের ১৬ মে ফারাক্কা অভিমুখে দীর্ঘ পদযাত্রায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। এটি ‘ফারাক্কা লংমার্চ’ নামে পরিচিতি পেয়েছিল। প্রতিবছর মে মাস এলেই দিনটি সবার নজরে আসে। সারাদেশে বৈরী তাপপ্রবাহ চলতে থাকায় অভিন্ন নদীর পানি-সুবিধার বঞ্চনা এ বছর আরও বেশি করে মনে পড়ছে।


মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন না। ছিলেন খেটে খাওয়া মানুষের কণ্ঠস্বর, মজলুম জননেতা। ফারাক্কায় বাঁধ নির্মাণের শুরু থেকেই তিনি এর প্রতিবাদে সোচ্চার ছিলেন। ১৯৫২ সালে ভারতের ফারাক্কায় বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে তৎপরতা শুরু হলে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার এর প্রতিবাদ করে। তখন ভারত বলেছিল, এটা অনুসন্ধান পর্যায়ে আছে। ১৯৬০ সালে এ বিষয়ে ভারত-পাকিস্তান বৈঠক হয়। তবে ১৯৬১-৬২ সালে ভারত গোপনে বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু করে। ফিডার খাল খননের কাজ ব্যতিরেকে ১৯৭০ সালে ফারাক্কা ব্যারাজের নির্মাণকাজ শেষ করে ভারত এবং পশ্চিমবঙ্গের মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলাকে সংযুক্ত করা ২ হাজার ২৪০ মিটার দীর্ঘ ফারাক্কা ব্যারাজ নির্মিত হয়ে চালু হওয়ার অপেক্ষায় থাকে।


বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ভারত ফারাক্কার সংযোগ খালের কাজ দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করে। ১৯৭৪ সালে পরীক্ষামূলক ফারাক্কা ব্যারাজ চালু করার ঘোষণা দেওয়া হয়। এর পর নানা কৌশলে ২১ এপ্রিল থেকে ৪১ দিনের জন্য পরীক্ষামূলক ফারাক্কা ব্যারাজ চালু করা হয়, যা আর বন্ধ হয়নি। ৪৮ বছর ধরে ‘পরীক্ষামূলকভাবে’ চালুই রয়ে গেছে সে ব্যারাজ। 


মওলানা ভাসানী ফারাক্কা ব্যারাজ চালু হওয়ার পর পদ্মায় একতরফা পানি প্রত্যাহারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলেন। ১৯৭৬ সালের ১৮ এপ্রিল তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে পত্র লেখেন। তিনি ফারাক্কার বিরূপ প্রতিক্রিয়া নিয়ে ‘ফারাক্কা লংমার্চ’ কর্মসূচি বিষয়ে তাঁকে অবহিত করেন। চিঠির উত্তরে ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন, ‘এটা ভাবতে কষ্ট হচ্ছে, যিনি আমাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন এবং পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও আত্মত্যাগের বেদনাকে একইভাবে সহমর্মিতা দিয়ে দেখেছেন, তিনি আমাদেরকে এত বেশি ভুল বুঝেছেন, এমনকি আমাদের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।’ (বিবিসি বাংলা নিউজ মে ১৭, ২০১৫)


মওলানা ভাসানীর প্রত্যুত্তর ছিল, ‘আপনার ৪ মের পত্র ফারাক্কার উপর সরকারি ভাষ্যেরই পুনরাবৃত্তি।...বাংলাদেশের উত্তরের জেলাগুলো সফর করে প্রকৃত চিত্রের প্রতিফলন দেখতে অনুরোধ জানাচ্ছি।...সমস্যার ব্যাপকভিত্তিক সমাধান প্রয়োজন। এটি শুধু মৌসুমের দু’মাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সারা বছরব্যাপী প্রবাহের যথাযথ বণ্টনভিত্তিক হওয়া উচিত।’ এভাবে সময় গড়িয়ে গেলেও প্রকৃত সমস্যা আড়ালে থেকে যায়। ফলে ১৯৭৬ সালের ১৬ মে ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চ ডাকতে বাধ্য হন মওলানা ভাসানী। 


লংমার্চ কর্মসূচির রুট ছিল– পদ্মাতীরের বিভাগীয় নগর রাজশাহীর মাদ্রাসা ময়দান থেকে ১৬ মে সকাল ১০টায় দীর্ঘ পদযাত্রা শুরু করে প্রেমতলী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পেরিয়ে কানসাট সীমান্ত দিয়ে ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার ফারাক্কা ব্যারাজ এলাকার পয়েন্টে গিয়ে সমাপ্তি। রাজশাহীর মাদ্রাসা ময়দানে বিশাল জনসভায় ৯০ বছর বয়সী মওলানা ভাসানী দু’জন লোকের কাঁধে ভর দিয়ে মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে বজ্রকঠোর ভাষায় বক্তব্য দিয়েছিলেন। বলেছিলেন– ‘শিশুর যেমন মায়ের দুধে অধিকার, পানির উপর তোমাদের তেমনি অধিকার। তোমরা জাগ্রত হও, তোমাদের প্রকৃতিপ্রদত্ত অধিকার যে হরণ করেছে তার বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়াও।’ লংমার্চ নিয়ে তিনি ফারাক্কা পয়েন্টে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও সরকারি পরামর্শে কানসাট স্থলবন্দরেই লংমার্চের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও