শিক্ষার্থীর মাধ্যমে শিক্ষক মূল্যায়ন: সাবধানতার পরিসর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সেমিস্টার থেকেই শুরু হচ্ছে পাঠদান শিক্ষা পদ্ধতির মূল্যায়ন। আপাত মনে হচ্ছে, খুবই ভালো উদ্যোগ। বিদেশের বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশেও অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু রয়েছে। এত দিন ধরে স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ মূল্যায়ন পদ্ধতি না থাকায় শিক্ষকদের দায়িত্ব, শিক্ষা কৌশল ও শিখন পদ্ধতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত সম্পর্কে দাপ্তরিকভাবে তেমন কিছু জানা যেত না। এ উদ্যোগকে অনেকেই স্বাগত জানিয়েছেন।
কারণ, বৈশ্বিক র্যাঙ্কিংয়ে ভালো স্থান পেতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য জ্ঞানতত্ত্বীয় বিষয়-আশয়ের পরিবর্তন, শিক্ষা ব্যবস্থাপনাকে শিক্ষার্থীবান্ধব এবং এর গুণগত মানের ইতিবাচক পরিবর্তনে এ মূল্যায়ন জরুরি হয়ে পড়েছিল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, শিক্ষকরা তাদের খামতি ফিরে দেখা এবং তা মেরামতের সুযোগ পাবেন। শিক্ষার্থীদের কাছে আরও বেশি শিক্ষাবান্ধব কৌশল নিয়ে হাজির হতে পারবেন। শিক্ষার্থী-শিক্ষক ক্ষমতা-সম্পর্ক নতুনভাবে মূল্যায়িত হবে।
অবশ্য বলে রাখা প্রয়োজন, বতর্মানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক মূল্যায়নের যে ছক করা হয়েছে, সেটি সব শিক্ষার্থী পূরণ করার সুযোগ পাবে না। শুধু ‘কলেজিয়েট’ শিক্ষার্থীরাই করতে পারবে। শ্রেণিকক্ষে অনিয়মিত শিক্ষার্থীরা এ সুযোগ গ্রহণ করতে পারবে না।
এই জরুরি বিষয়ের সঙ্গে আরও কিছু আলাপ জারি রাখা প্রয়োজন। এখন বিদেশে যে ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থাপনা রয়েছে, তার অনেক কিছুই দেশের সঙ্গে মিলবে না। তাই এ মূল্যায়নের সঙ্গে কিছু সতর্কতা অচ্ছেদ্য।
প্রথমে আসি শিক্ষার্থীদের প্রসঙ্গে। বর্তমান বাস্তবতায় শিক্ষার্থীরা আসলে কী চায়? বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর মূল আগ্রহের জায়গা বিসিএস। তাই অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার চেয়ে সার্টিফিকেটকেই গুরুত্ব দেয়। যেনতেন প্রকারে একটি সার্টিফিকেট পেলেই খুশি। সবাই হয়তো নয়; কিন্তু বেশির ভাগই চায় কম পড়াশোনা, কম ক্লাস, কিন্তু বেশি নম্বর। শিক্ষকদের বেশি ক্লাস নেওয়াকেও অনেকে তাদের ভাষায় ‘প্যারা’ দেওয়া মনে করে। ফলে যে শিক্ষক কম পড়াবেন, ক্লাস কম নেবেন কিন্তু বেশি নম্বর দেবেন, শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে সেই শিক্ষক হয়তো এগিয়ে থাকবেন। যার কারণে শিক্ষকদের মধ্যে হয়তো শিক্ষার্থীদের অযৌক্তিকভাবে ‘বেশি নম্বর’ দেওয়ার প্রতিযোগিতা থাকবে, যা ইতোমধ্যে অনেক বিভাগে শুরু হয়ে গেছে।
বিপরীতে যেসব শিক্ষক ‘অপেক্ষাকৃত কম নম্বর’ দেবেন; শিক্ষার্থীরা তাদের ‘ভালো শিক্ষক’ বলে মূল্যায়ন হয়তো করতে চাইবে না। তাই যে করেই হোক, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ‘ভালো’ শিক্ষকের প্রশংসা নিতে ‘নম্বর’ নিয়েও ভাবতে হচ্ছে শিক্ষকদের। এ পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকরা বাড়তি চাপ বোধ করবেন এবং গুণগত মান কমে যাওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। শুনেছি, কোনো কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এ ধরনের চাপ বোধ করেন। এমন চাপ থেকে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন কতটা যথার্থ হবে, সেটিও বিবেচনায় রাখা দরকার।
- ট্যাগ:
- মতামত
- মূল্যায়ণ
- শিক্ষা পদ্ধতি