ডলারের দাম বাড়ার সুফল মিলবে কি

www.ajkerpatrika.com চিররঞ্জন সরকার প্রকাশিত: ১৪ মে ২০২৪, ১১:১৩

দেশে ডলার-সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কখনো দাম নির্ধারণ করে দিয়ে, কখনো ‘চাপ’ সৃষ্টি করে, কখনো ব্যাংকের সুদহার বেঁধে দিয়ে ডলারের দাম বশে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু খুব একটা লাভ হয়নি। সর্বশেষ ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।


এই পদ্ধতি চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন করেছে। ক্রলিং পেগ পদ্ধতির আওতায় ডলারের মধ্যবর্তী একটি দাম নির্ধারণ করে ব্যাংকগুলোকে এই দামের আশপাশে স্বাধীনভাবে লেনদেন করতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মধ্যবর্তী এই দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১১৭ টাকা।


নতুন এই পদ্ধতি চালুর মধ্য দিয়ে ডলারের দাম একলাফে ৭ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ফলে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ; অর্থাৎ ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন হয়েছে। কারও কাছে থাকা ১ লাখ টাকার মান এখন ৯৩ হাজার ৬৪০ টাকায় নেমেছে। এ কারণে হঠাৎ করে বিপাকে পড়ে গেছেন আমদানিকারকেরা।


কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঘোষণায় ছোট ও মাঝারি ধরনের আমদানিকারকদের এলসি পেমেন্টে অতিরিক্ত খরচ বেড়েছে কোটি টাকার ওপরে। বড় আমদানিকারকদের খরচ আরও বেড়ে গেছে। এর আগে দেশে ডলারের দাম কখনো একসঙ্গে এতটা বাড়েনি। ফলে আরও চাপ তৈরি হতে পারে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দামের ওপর। কারণ ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানিতে অতিরিক্ত দরে ডলার কিনলেও বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মতো পণ্য আমদানিতে এত দিন ১১০ টাকা দামে ডলার দিত বাংলাদেশ ব্যাংক।


প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংক দীর্ঘ একটা সময় ধরে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেঁধে রেখেছিল। অর্থনীতিবিদেরা এত দিন একটি ভাসমান বিনিময় হারের কথা বলে আসছিলেন। তবে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি তাতে মোটেও কর্ণপাত করেনি। এতে ডলারের বাজারে অস্থিরতা আরও বেড়েছে। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নে মূলত রপ্তানিকারক ও প্রবাসীরা লাভবান হন। প্রতি ডলার ১১৭ টাকা হওয়ায় রপ্তানিকারকেরা এই আয় থেকে বাড়তি ৭ টাকা বেশি হাতে পাবেন। এতে প্রবাসীরা বৈধ পথে টাকা পাঠানোর ব্যাপারে উৎসাহিত হবেন বলে মনে করা হচ্ছে। বাস্তবে এই নীতি রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে কতটুকু সুফল নিয়ে আসবে, সেটা দেখার বিষয়।


তবে ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে ক্রলিং পেগ পদ্ধতির কারণে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের ওপরও ব্যাপক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে দেশের মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যেতে পারে। টাকার অবমূল্যায়নের আগে সাধারণ মানুষ যে পরিমাণ উপার্জন করতেন, এখনো তা-ই করছেন। তাঁরা চাইলেই আগের মতো একই পরিমাণ পণ্য বা পরিষেবা কিনতে পারবেন না। টাকার অবমূল্যায়নের কারণে ভ্রমণ, বিদেশে লেখাপড়া ও চিকিৎসা খরচ বেড়ে যাবে। টিউশন ফি ও ফ্লাইটের টিকিট ডলারে পরিশোধ করতে হয়। তাই এতে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হবে। যদিও এগুলোকে অন্তর্বর্তীকালীন সমস্যা হিসেবে দেখা হচ্ছে। শেষ বিচারে এর সুফল ফলবে বলেই অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন।


অর্থনীতিবিদেরা অবশ্য অনেক আগে থেকেই ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব করে আসছিলেন। কিন্তু সরকারের নীতিনির্ধারকেরা এ ব্যাপারে কান দেননি। ডলারের দাম বাজারের ওপর ছাড়া নিয়ে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের একধরনের স্পর্শকাতরতা লক্ষ করা গেছে। তাঁরা মনে করেছেন একবার দাম নির্ধারণের বিষয়টি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হলে সেটি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা ঠিক বলা যায় না। এ ছাড়া এটা আবার নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে কি না, তা নিয়েও সন্দিহান ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। বাজারের প্রতি একধরনের অবিশ্বাস বা অনাস্থার কারণেই এত দিন ডলারের দাম নির্ধারণে বাজারকে বিশ্বাস করা হয়নি। নানা রকম ব্যর্থ টোটকার পর এখন বাজারের হাতেই ডলারের দাম ছেড়ে দেওয়া হলো। যেটা আগে করা যেত, সেটা অনেক পরে করা হলো। মাঝখান থেকে ক্ষত আর ক্ষতি যা হয়েছে, তা কিন্তু মোটেও সামান্য নয়!


এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে পরামর্শ করে আমদানি ও রপ্তানি থেকে শুরু করে সাধারণ গ্রাহকের কাছে কত দরে ডলার কেনাবেচা করা হবে, তা ঠিক করত বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)। বিষয়টি নিয়ে অনেক সমালোচনা হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক কান দেয়নি। এখন শেষ পর্যন্ত বাজারের হাতে ছেড়ে দিয়ে সংকট থেকে উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বিরাট প্রভাব রয়েছে। বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের শর্ত হিসেবে আইএমএফ বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নমনীয় করার তাগাদা দিয়ে আসছিল।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও