সর্বজনীন পেনশন প্রত্যয় স্কিম : শিক্ষকরা কেন বৈষম্যের শিকার?
১৪ মার্চ ২০২৪, অর্থ বিভাগের প্রবিধান শাখার জারি করা এক প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ১ জুলাই থেকে নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের জন্য সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার অধীনে 'প্রত্যয়' নামক একটি নতুন স্কিম চালু করা হবে। যারা বর্তমানে স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন, তারাও কমপক্ষে ১০ বছর চাকরি থাকা সাপেক্ষে এই স্কিমে যোগ দিতে পারবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়ে।
নতুন যে পেনশন স্কিম যারা পরিকল্পনা করেছে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াই জানে না। বলা হয়েছে ২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যারা নিয়োগ পাবে তারা নতুন এই পেনশন স্কিমের আওতায় আসবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ কি সরকারি কর্মকর্তা নিয়োগের মতো?
বিশ্ববিদ্যালয়ে কিন্তু প্রতিটি শূন্য পদের জন্য উন্মুক্ত বিজ্ঞাপন দিয়ে নতুনভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। একে অনেকেই প্রমোশন বলে কিন্তু আসলে প্রতিটি প্রমোশনই নতুন করে নিয়োগ।
তাহলে আজকে যিনি সহযোগী অধ্যাপক কালকে তিনি অধ্যাপক হিসেবে নতুন করে নিয়োগ পেলে অথবা অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোনো দেশ থেকে আসা কেউ সরাসরি অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পেলে তার ক্ষেত্রে কী হবে?
কেন শিক্ষকতা পেশাকে টার্গেট করা হলো? এক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়োগের সময় প্রতিটি প্রথম শ্রেণি বা বিভাগে রেজাল্টের জন্য ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হতো। এটা মেইক সেন্স যে ভালো ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষকতা পেশায় আনার জন্য এটি করা হয়েছিল।
তারপর পিএইচডি-র জন্য ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হতো। এটাও একই কারণে মেইক সেন্স। এইসব এখন উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে এখনো অনার্স ও মাস্টার্সে যেকোনো একটি বা দুটি ১ম শ্রেণির জন্য একটি ইনক্রিমেন্ট আছে।
শুধু তাই না পিএইচডিতে ৩টি ইনক্রিমেন্ট বহাল আছে। বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে রাখা হয়েছে কারণ আমলারা এখন পিএইচডি করে এবং তাদের জন্যই এটা বহাল রাখা হয়েছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য এই ব্যবস্থা নেই।
তাহলে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিগুলো করছে কী? সরকারি দল করা মানুষদের ভোট দিয়ে শিক্ষক সমিতির নেতা বানালে এই অবস্থায় হবে।
সমিতির নেতারা শিক্ষকদের মঙ্গল নিয়ে ভাবে না। তারা শিক্ষা ও গবেষণা নিয়ে ভাবে না। তারা কেবল এক-দুইবার শিক্ষক সমিতির নেতা হতে পারলে ভবিষ্যতে ভিসি-প্রোভিসি হতে পারবে সেই চিন্তায় থাকে সর্বক্ষণ। সরকারকে তুষ্ট না করে, সরকারের বিপক্ষে গিয়ে শিক্ষকদের পক্ষে কোনো দাবির জন্য আন্দোলন করলে তারা ওইসব পদ নাও পেতে পারে।
মূল বিষয় হলো, নতুন এই পেনশন স্কিমের কারণে আমার শিক্ষকতা পেশায় আমি কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হবো না। তাই বলে আমাদের আগামী প্রজন্মের শিক্ষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে জেনেও আমি চুপ থাকবো? তা কি হয়? আমি তো শিক্ষক নেতা নই যে, আমার পদের লোভ আছে।