আপনার স্ত্রীকে কিভাবে কন্ট্রোল করবেন?
একটি গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। এক ভদ্রলোক একটা বই লিখেছিলেন। বইটার নাম ছিল ‘হাউ টু কন্ট্রোল ইওর লাইফ’। এটার প্রচ্ছদ করতে গিয়ে একটি মারাত্মক ভুল হয়ে যায়। প্রচ্ছদে ভুলে লেখা হয়েছিল “হাউ টু কন্ট্রোল ইওর ওয়াইফ”। শুধু লাইফের পরিবর্তে ওয়াইফ- এই শব্দটার কারণে বইটা মিলিয়ন মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছিল।
চিন্তা করে দেখুন স্ত্রীকে কন্ট্রোল করার জন্য কত লোক মরিয়া। আমার দর্শক-শ্রোতা বন্ধুদের মধ্যে অনেকে বলছেন যে ‘আপনি তো খরচকে কমাতে বলেন, কিন্তু আমার স্ত্রী খরচ কমাতে চায় না’। যদিও এদের সংখ্যা কম। তারাও চায় স্ত্রীদেরকে কন্ট্রোল করতে। যেসব ভদ্রমহিলা আমার লেখা পড়ছেন তারা পুরো লেখাটা শেষ করার আগেই আমাকে বকা দেয়া শুরু করবেন না আশা করি । আমি বিশ্বাস করি আমার এই লেখা থেকে একটা উল্লেখযোগ্য এসেন্স আসবে যেটা হয়তো সবার চিন্তার ক্ষেত্রে একটা পরিবর্তন আনতে সহায়তা করবে।
স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক বোধ করি পৃথিবীর সবচেয়ে নিবিড়তম সম্পর্ক। যদিও দুজনের মধ্যে বিশেষ কোনো সম্পর্ক থাকে না বিয়ের আগে, কিন্তু বিয়ের পরেই হয়ে যায় দুজন দুজনার একমাত্র এবং অন্যতম আপনজন। যে সম্পর্কের কাছে অন্য সব সম্পর্ক গৌণ হয়ে যায়। এত যেখানে আন্তরিক সম্পর্ক, মধুর সম্পর্ক, যেখানে শুধু মধুরতা বিরাজ করবে, বিরাজ করবে প্রেম- ভালোবাসা- শান্তি- প্রশান্তি কিন্তু সেখানেই কেন এত দ্বন্দ্ব, সেখানেই কেন দুজনের মধ্যে এত অশান্তি? কখনো কখনো কলহ শেষ হচ্ছে খুনোখুনিতে, কখনো বা দুজনের মধ্যে সেপারেশন হচ্ছে কিন্তু কেন?
দেখা যাচ্ছে যে দুজন ৫-১০ বছর প্রেম করে, দুজন দুজনকে ভালোবেসে বিয়ে করেছেন কিন্তু বিয়ে করার ছয় মাসের মধ্যেই সম্পর্কে ফাটল ধরেছে, দুজন আর দুজনের মুখ দেখতে চাচ্ছেন না । মূলত ব্যাপারটা হচ্ছে বিয়ের আগে যেটা থাকে প্রেম বা প্রেমের প্রত্যাশা, বিয়ের পরে সেটা হয়ে যায় ম্যানেজমেন্টের বিষয়। যেহেতু বিষয়টা ম্যানেজমেন্টের, এই ম্যানেজমেন্ট না করতে পারার কারণে, ম্যানেজমেন্টটা এফেক্টিভলি বুঝতে না পারার কারণে দুজনের মধ্যে অল্প অল্প করে শুরু হয় দ্বন্দ্ব এবং সে দ্বন্দ্ব মিটাতে না পেরে দুজনের মধ্যে বিচ্ছেদ বা আরো খারাপ কিছু সংগঠিত হয়।
বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে সংসার ভেঙে যাওয়ার সংখ্যা বাড়ছে। এই সংসার ভাঙার সংখ্যা গ্রামের চেয়ে এবং অন্যান্য শররের চেয়ে রাজধানীতে অনেক বেশি। গত বছর ঢাকায় প্রতি ৪০ মিনিটে ১টি করে তালাক হয়েছে। বিচ্ছেদ বাড়ছে ঢাকার বাইরেও। বিশেষভাবে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে বিচ্ছেদের আবেদন নারীরা বেশি করছেন।
নির্যাতন-পীড়ন থেকে আত্মমর্যাদাবান নারীরা তালাকে খুঁজছেন মুক্তি। একটা সময় ছিল বিচ্ছেদের আবেদনের পর হরহামেশা সমঝোতা হয়ে যেত কিন্তু বর্তমানে সমঝোতা হচ্ছে খুবই কম—৫ শতাংশের নিচে। ঢাকার দুই সিটির মেয়রের কার্যালয়ের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ২০২২ সালে তালাকের আবেদন এসেছিল মোট ১৩ হাজার ২৮৮টি যাদের মধ্যে অতি সামান্য সংখ্যক দম্পতি বিচ্ছেদ থেকে নিজেদেরকে সরিয়ে এনেছিল।
একটা পরিবার গঠন করার পরে ডিভোর্সে যাওয়া একটা মারাত্মক সামাজিক ক্ষতি কিন্তু এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? উদ্দেশ্যতো সেটা না যে দুজন প্রতিনিয়ত মারামারি- ঝগড়াঝাটি করবে, পরিবারে অশান্তি হবে, একসময় তাঁরা সেপারেশানে যাবে।