ছাত্ররাজনীতি, বুয়েট ও ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, দেশের সেরা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটে আবারও দলীয় রাজনীতি শুরু করার। এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে দেওয়া নোটিশের ওপর 'স্থগিতাদেশ' দিয়েছেন হাইকোর্ট। অপরদিকে, বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যাম্পাসে আবারও ছাত্ররাজনীতি চালুর বিষয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন—যার পেছনে রয়েছে বলিষ্ঠ, বেদনাদায়ক ও যৌক্তিক কারণ।
বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির সর্বশেষ বলি ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। বুয়েট ছাত্রলীগ নেতারা ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে তার ওপর রাতভর পাশবিক নির্যাতন চালায়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অসহনীয় ব্যথা ও অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়েছে আবরারের।
আবরারের এই মৃত্যু বুয়েট শিক্ষার্থীদের মনে যে দগদগে ঘা তৈরি করেছে, তার আর পুনরাবৃত্তি চায় না তারা।
কুষ্টিয়ায় মায়ের কোল থেকে ক্যাম্পাসে ফিরে আসার কয়েক ঘণ্টা পরেই আবরারের ওপর শুরু হয় নির্যাতন। তার একমাত্র 'অপরাধ' ছিল ফেসবুকে সমালোচনামূলক পোস্ট দেওয়া।
এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। এটা ছিল ছাত্রলীগকে জবাবদিহি ও নজরদারির বাইরে রাখার কারণে তৈরি হওয়া এক সংস্কৃতির ফল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পাশাপাশি ছাত্রলীগ একটি প্রশাসন তৈরি করে, যার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয় শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন জীবন, বিশেষ করে জুনিয়র শিক্ষার্থীদের। কোনো শিক্ষার্থী হলের সিট পাবে কি না, পেলে কোন হলের কোন সিট পাবে, দলীয় কার্যক্রমে তাদের কতটা অংশগ্রহণ করতে হবে এবং কতবার ও 'কীভাবে' নেতাদের 'সম্মান' জানাতে হবে, সেটাও নির্ধারণ করে দেয় এই প্রশাসন।
হলের ২০১১ নম্বর কক্ষটি ছিল কার্যত একটি টর্চার সেল, যেখানে অবাধ্য শিক্ষার্থীদের ধরে এনে বাধ্য করা হতো। আমরা হয়তো ভুলে গেছি, যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল, তখন তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলও একই কাজ করেছে। এ কারণে, সেইসব দিন আবারও ক্যাম্পাসে ফিরে আসার সামান্যতম সম্ভাবনাও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে।