রাষ্ট্র কি শুধুই সরকারি কর্মচারীর?
দেশে সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশের অনুপস্থিতি জীবনধারণের সব ক্ষেত্রেই এক ধরনের সংকট সৃষ্টি করছে ৷ সমাজে যারা শিক্ষক হিসেবে নিজেদের আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছেন, তাদের একাংশ প্রকৃতপক্ষে কতটা শিক্ষক হয়ে উঠছেন তা নিয়ে সংশয় আছে। রাজনৈতিক দল যখন দেশের স্বার্থবিরোধী কাজে লিপ্ত তখন শিক্ষক হিসবে পরিচিতি পাওয়া একশ্রেণির লোক ওই কাজে বিরামহীন সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। চরম তৈলমর্দন, অন্ধ অনুকরণ; শিক্ষকতার চেয়ে দলবাজিতে নিজেদের অধিক সময় নিমগ্ন রাখা; পদোন্নতিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাবার আশায় ক্ষমতাবানদের সন্তুষ্ট রাখায় তাদের বেশিরভাগ সময় পার করতে হয়।
মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকরা আগে মন্ত্রী-এমপি-আমলাদের সামনে সত্য বলতে ভয় পেতেন না, এখন শিক্ষকতার মুখোশধারীদের দেখা যায় মন্ত্রী-এমপি তো বটেই তস্য আমলাদের মিথ্যায় মদদ দিতে। স্থানীয় প্রশাসনের ভয়ে কাবু হয়ে থাকেন, থাকতে বাধ্যও হন। পুলিশকে নানান কারণে ভয় পেয়ে এড়িয়ে চলেন। যৌক্তিক সমালোচনাটুকুও করেন না, ছাত্রদের বিবেক কীভাবে জাগ্রত করবেন তারা? ছাত্রদের শেখানোর নৈতিক অধিকার হারানোর পর কী করে এমন লোকেরা সম্মান পাবেন বলে আশা করেন? নৈরাশ্যবাদী হয়ে কোনো উপকার হয় না। প্রতিবাদটা জারি রাখা চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ নুরুল হুদা প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদক ফিরিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে নজির স্থাপন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ধর্ষণ, দুর্নীতিসহ নানান অনাচারের ঘটনা ঘটছে। শিক্ষাঙ্গনকে কলুষমুক্ত করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। টেকসই শিক্ষাব্যবস্থা দরকার। সমাজের সম্মিলিত প্রয়াসেই মুক্তি মেলে। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের প্রকৃত শিক্ষকদের সম্মান আমাদেরকে জানাতেই হবে। শ্রদ্ধা-সম্মানটাই তাদের মূল পাওয়া। ভক্তি, শ্রদ্ধার প্রকৃত হকদার তারাই।
অনেক আগে থেকেই বাংলার সমাজে স্থানীয়ভাবে শিক্ষক ও ধর্মীয় নেতাদের বিশেষ একটা প্রভাব বিরাজ করত। বিভিন্ন অন্যায়-অবিচার, জুলুমের বিরুদ্ধে শিক্ষকরা মুখে কুলুপ আঁটায় এখন শিক্ষকদের নির্যাতনে সেরকম প্রত্যাশিত কোনো প্রতিক্রিয়া এই সমাজ আর দেখাচ্ছে না। শুধু ধর্মীয় নেতৃবৃন্দই না এমনকি প্রভবশালী বা প্রতাপশালী কোনো ব্যক্তির স্ত্রী কর্তৃক আর্থিকভাবে শক্তিশালী নন, এমন পেশার মানুষজন, যেমন গৃহপরিচারিকাকে নির্যাতনের মতো ঘটনাতেও স্থানীয় আলেম এবং শিক্ষকরা সক্রিয় ভূমিকা রাখতেন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলায় জড়িত নন— আলেমরা এই দাবি করেই ক্ষ্যান্ত দেন। ব্যতিক্রম দেখা গেছে শুধু কয়েক বছর আগে কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে কোরআন রাখাকে কেন্দ্র করে হামলার পর বরিশালে।
কিন্তু হামলাই বা ঘটছে কেন? পূজামণ্ডপে হামলাসহ অনুসারী সংখ্যা বিবেচনায় ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর নানান নির্যাতন চলছে, নারীর প্রতি বর্বরতা-অসভ্যতা দেদারসে বেড়েই চলেছে। সব ছাত্র শিক্ষক না হলেও সব শিক্ষকই একসময় ছাত্র ছিলেন। ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি তো স্বাধীন বাংলায় অসম্ভব, মস্ত এক অপরাধ হবার কথা। অথচ এই সস্তা ও আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের পক্ষে দাঁড়াতে দেখা গেছে মস্তক ধোলাই হওয়া দেশের সবচেয়ে নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মেধাবী শিক্ষার্থীদেরও! দেশকে রাজনীতি ও মেধাশূন্য করার গভীর এক চক্রান্ত এবং ষড়যন্ত্র চলছে। বিরাজনীতিকীকরণের মতো ঘৃণ্য অপচেষ্টায় লিপ্ত কুচক্রী মহল। দেশে যদি সুষ্ঠু ছাত্র রাজনীতি থাকত তবে শিক্ষার্থীরা সঠিক শিক্ষা-দীক্ষা পেতেন, শিক্ষকসহ সমাজের সবাই নিরাপদে থাকতেন, মানুষ হিসেবে সবারই কদরটা থাকত।
- ট্যাগ:
- মতামত
- রাজনৈতিক পরিবেশ
- সুষ্ঠু পরিবেশ