![](https://media.priyo.com/img/500x/https://media.assettype.com/bdnews24%2F2024-03%2Fb548bd0b-4739-4c32-9411-b18689263a8c%2F2d949b3e-6696-4f78-aafd-f6fa00c1ec8e.jpg?auto=format%2Ccompress&fmt=webp&format=webp&w=800)
২৫ মার্চে ঢাকার গণহত্যা ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
২৫ মার্চ ১৯৭১। রাতেই পৃথিবীর ইতিহাসের ভয়াবহতম গণহত্যার শিকার হয় স্বাধীনতাকামী বাংলাদেশের মানুষ। ট্যাংক ও সাঁজোয়া বহর নিয়ে পথে নামে সশস্ত্র পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে কুখ্যাত অভিযানে কালরাতের প্রথম প্রহরে তারা শুরু করে গণহত্যা। রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, পিলখানার ইপিআর ব্যারাক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস, শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা, পুরান ঢাকার শাঁখরীবাজারসহ ঢাকা এবং সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা হত্যাযজ্ঞ চালায়।
স্বাধীনতা লাভের এতকাল পরেও কালরাতের প্রথম প্রহরের শহীদদের তালিকা আমরা চূড়ান্ত করতে পারিনি। সংরক্ষণ করা হয়নি গণহত্যার অনেক স্থানও, যা মোটেই কাম্য ছিল না।
কেমন ছিল একাত্তরের ভয়াল সেই কালরাত? এমন প্রশ্ন নিয়েই সে রাতে পাকিস্তানি সেনাদের নৃশংসতা প্রত্যক্ষ করেছেন এমন কয়েকজনের মুখোমুখি হই। তাদের চোখে দেখার চেষ্টা করি রক্তাক্ত ২৫ মার্চকে।
রাজারবাগে মানবতা পদদলিত হয়েছিল
কনস্টেবল মো. আবু শামা সামাদ। একাত্তরে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে অস্ত্রাগারের দায়িত্বে ছিলেন । পরে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে ৩ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেন।
তিনি বললেন রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের ভেতরের রক্তাক্ত ইতিহাস। তার ভাষায়, “রাজারবাগে তখন স্পেশাল আর্মড ফোর্সে ছিলেন সাড়ে পাঁচশর মতো সদস্য। তারা থাকতেন তৎকালীন চারতলা বিল্ডিংয়ে। নিচতলায় ছিল দুটি অস্ত্রাগার। আড়াইশ থেকে তিনশ সদস্য ছিলেন ইস্ট পাকিস্তান প্রভেনশিয়াল রিজার্ভ ফোর্সে (ইপিপিআরএফ)। চারটি টিনশেড ব্যারাকে থাকতেন এই ফোর্সের সদস্যরা। ডিএসবি, এসবি, বিভিন্ন সোর্স ও গোয়েন্দাদের মাধ্যমে আসছিল নানা খবর। পাকিস্তানের আইএসআই গোয়েন্দা সংস্থা রাজারবাগকে সিরিয়াসভাবে টার্গেট করে রেখেছে। কারণ ইস্ট পাকিস্তানের বৃহত্তম পুলিশ লাইনস ছিল রাজারবাগ, যেখানে বাঙালি সদস্য ছিলেন সবচেয়ে বেশি।
রাজারবাগের প্রতিরোধযুদ্ধে কোনো কর্মকর্তা কিন্তু নেতৃত্ব দেননি। সন্ধ্যার ঠিক পরের ঘটনা। তখনো পাকিস্তানের চাঁদতারা পতাকা উড়ছিল। আমরা ‘জয় বাংলা’ ও ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’ স্লোগান তুলে ওই পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দিই।
রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টা। একটা ওয়্যারলেস মেসেজ আসে তেজগাঁও এলাকায় প্যাট্রলে থাকা ওয়্যারলেস অপারেটর আমিরুলের কাছ থেকে। মেসেজে বলা হয়, ক্যান্টনমেন্ট থেকে ৩৭ ট্রাক সশস্ত্র সেনা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। খবরটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সেন্ট্রিও তখন পাগলা ঘণ্টি পেটায়।
অস্ত্রাগারে গিয়ে দেখলাম তালা মারা। সেন্ট্রি বলে, ‘হাশেম স্যার (সুবেদার আবুল হাশেম) তালা মাইরা চাবি নিয়া গেছে মফিজ স্যারের বাসায়।’ দৌড়ে গেলাম সেখানে। দেখি একটি ট্রাকের ভেতর মফিজ স্যার পরিবারসহ উঠে গেছেন। তাকে থামাই। অস্ত্রাগারের চাবি চাই। চাপের মুখে একটা অস্ত্রাগারের চাবি দেন।
ওই চাবি নিয়ে একটা অস্ত্রাগারের দরজা খুলে দিই। রাইফেল দিয়ে আরেকটা অস্ত্রাগারের তালার মধ্যে গুলি করেন একজন। তবু তালাটা ভাঙে না। এরপর একটা শাবল দিয়ে ওই তালাটা ভেঙে ফেলি। ভেতরের অস্ত্রগুলো তখন যে যার মতো নিয়ে যায়।
প্যারেড গ্রাউন্ডে একটা গ্রুপ, ১ নম্বর ও ২ নম্বর গেট, মূল ভবনের ছাদ ও বিভিন্ন স্থানে পজিশন নিয়ে অপেক্ষায় থাকি আমরা।
রাত আনুমানিক ১১টা। পাকিস্তানি কনভয়ের ওপর শান্তিনগরে ডন স্কুলের ছাদের ওপর থেকে পুলিশ প্রথম গুলি চালায়। স্বাধীনতার পক্ষে ওটাই ছিল প্রথম বুলেট।