বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাঁচাবে কে?
বছর কয়েক আগে গোপালগঞ্জে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী প্রশ্ন তুলেছিলেন: বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী? এই প্রশ্নটি তিনি তুলেছিলেন কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণে অনিয়মের সংবাদ তৈরি করতে গিয়ে ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, বিশেষ করে তৎকালীন উপাচার্যের রোষানলে পড়েছিলেন। তিনি এমন এক সময়ে প্রশ্নটি তুলেছিলেন যখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ থেকে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনকে চাঁদা দেওয়া এবং উপাচার্যের পরিবারের লোকজনের অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর নিয়ে গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়া সরগরম ছিল। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী—২০১৯ সালে উত্থাপিত সেই প্রশ্নের সুরাহা বোধ হয় এখনও হয়নি। বরং সাম্প্রতিক নানা ঘটনায় যে প্রশ্নটি নতুন করে সামনে আসছে সেটি হলো: বিশ্ববিদ্যালয়ে হচ্ছে কী?
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অবন্তিকা আত্মহত্যা করার পর ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে এসে গেছে কয়েক দিন ধরে। শিক্ষক থেকে উপাচার্য পর্যন্ত প্রায় সবাই দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ পাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতি, প্রকল্পের নামে টাকা-পয়সার ভাগ-বাটোয়ারা, গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি শব্দগুলো যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমার্থক হয়ে গেছে। আর এই ভয়াবহ পরিস্থিতির হাত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বাঁচাবে কে?
কয়েকটি সংবাদ শিরোনামে চোখ বুলানো যাক:
১. জবি শিক্ষার্থী অবন্তিকার আত্মহত্যা: সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী ও শিক্ষক দ্বীন ইসলাম গ্রেপ্তার।
২. যৌন নিপীড়ন: জগন্নাথ শিক্ষক শাহেদ ইমন বরখাস্ত।
৩. স্বামীকে আটকে রেখে নারীকে ধর্ষণ: জাবির ছাত্রলীগ নেতাসহ ৪ জন কারাগারে।
৪. দুই মন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন; চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে শোকজ।
৫. ছলচাতুরীর মাধ্যমে ইনক্রিমেন্ট নিচ্ছেন কুবি উপাচার্য!
অনলাইনে সার্চ দিলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় তো বটেই, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েও এমন অনেক সংবাদ পাওয়া যাবে, যা পড়লে সেই পুরনো প্রশ্নই সামনে আসবে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কী এবং এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে কী হচ্ছে? জনমনে এই প্রশ্নও উঠতে বাধ্য যে, কারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হচ্ছেন। কোন যোগ্যতায়। কোন মানদণ্ডে?
এবারের আলোচনার কেন্দ্রে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। অবন্তিকা নামে একজন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার আগে যে সুইসাইড নোট লিখে গেছেন, সেখানে তিনি প্রক্টর এবং একজন সহপাঠীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও ক্ষমতার দাপট দেখানোর অভিযোগ করে গেছেন। যদিও এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী প্রক্টর গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, অবন্তিকার বিরুদ্ধে তার একাধিক সহপাঠীর অভিযোগ ছিল এবং এ নিয়ে থানায় জিডিও করা হয়েছিল। তবে প্রকৃত ঘটনা কী সেটি নিশ্চয়ই তদন্তে বেরিয়ে আসবে। এরই মধ্যে অভিযুক্ত শিক্ষক ও শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার হয়েছেন।
একই সময়ে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে একজন শিক্ষককে বরখাস্ত এবং আরেকজনককে বিভাগীয় প্রধানের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের একজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, তার কোর্স শিক্ষক তাকে অ্যাকাডেমিক কাজে নিজের কক্ষে ডেকে ‘যৌন হয়রানি’ করেন।
- ট্যাগ:
- মতামত
- যৌন হয়রানি
- পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়