শিক্ষা–স্বাস্থ্যে বরাদ্দ কমালে মানবপুঁজি তৈরি হবে কি
১২ মার্চ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন করা হয়। সংশোধিত এডিপিতে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমানোর কারণ হিসেবে জানা গেছে, বরাদ্দ হওয়া অর্থ ব্যয় করতে না পারায় বরাদ্দ কমানো হয়েছে।
বাংলাদেশ বর্তমানে জনমিতিক লভ্যাংশ অর্জনের সময়কাল পার করছে। এ সময় বাংলাদেশের জনমিতিক লভ্যাংশ অর্জনে মানবপুঁজি তৈরিতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বরাদ্দ বা বিনিয়োগ যেখানে বাড়ানো দরকার, সেখানে এবার বরাদ্দ কমানো হলো।
বরাদ্দ হওয়া অর্থ ব্যয় করতে না পারায় এসব মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা বাড়ানোতে উদ্যোগ কোথায়? পূর্বে বরাদ্দ দেওয়া অর্থ মন্ত্রণালয়গুলো যে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেনি, তা শুধু যে এ বছরই ঘটেছে তা নয়, অতীতেও ঘটেছে। ফলে আগে থেকেই কেন সক্ষমতা বাড়ানোর কৌশল নেওয়া হয়নি? দেশের নীতিনির্ধারকেরা জনমিতিক লভ্যাংশ অর্জনের বিষয়টিকে যথাযথভাবে অনুধাবন করছেন কি না, তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।
একটি দেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যা (১৫-৬৪ বছর বয়সী) যদি বেড়ে যায় এবং নির্ভরশীল জনসংখ্যা (০-১৪ ও ৬৪+ বয়সী) যদি কমে যায়, তখন জনমিতিক নির্ভরশীলতার হার দেশটির অনুকূলে থাকে এবং এ থেকে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ত্বরায়ণের মাধ্যমে সর্বাধিক সুবিধা নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশে ৬৫ শতাংশের বেশি মানুষ কর্মক্ষম। তবে লক্ষণীয় যে জনসংখ্যার বেশির ভাগ মানুষ কর্মক্ষম হলেই যে একটি দেশ জনমিতিক লভ্যাংশ অর্জনের সুবিধা ভোগ করবে তা কিন্তু নয়। কেউ হয়তো মনে করতে পারেন বাংলাদেশে যেহেতু কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা বেশি, ফলে বাংলাদেশ এমনিতেই এ সুবিধা পাচ্ছে—বিষয়টি কিন্তু তা নয়।
বাংলাদেশ কেবল জনমিতিক লভ্যাংশের সুবিধা পেতে অনুকূল পরিবেশ পার করছে। তবে এ পরিবেশকে যদি সঠিকভাবে কাজে না লাগানো যায়, তাহলে এ ক্ষেত্রে সর্বাধিক সুবিধা গ্রহণ করা যাবে না। এখন এ সুযোগকে কাজে লাগাতে গেলে কতগুলো বিষয় লক্ষণীয়।
প্রথমত, আমাদের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী রয়েছে, কিন্তু এদের সুশিক্ষা পেতে হবে। দ্বিতীয়ত, তাদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে।
তৃতীয়ত, আর্থিক ক্ষেত্রে বিনিয়োগ এবং এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে। আর চতুর্থত, সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। এসব বাস্তবায়নে সহায়ক পরিবেশ যদি থাকে, তবেই জনমিতিক রূপান্তর মডেলের তৃতীয় পর্যায়ে জন্ম-মৃত্যুহার হ্রাসে বয়স-কাঠামোর পরিবর্তনে যে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে পাওয়া যাচ্ছে, তাদের কাজে লাগানো যাবে।
জনগোষ্ঠীর অনুকূল বয়স-কাঠামো, মানসম্মত শিক্ষা, উৎপাদনশীল সুস্বাস্থ্যবান-দক্ষ জনশক্তি, অর্থনৈতিক নীতি ও বিনিয়োগে কর্মসংস্থান, সুশাসন—এই প্রতিটি যদি সুবিন্যস্তভাবে কাজ করে, তবেই একটি দেশ জনমিতিক লভ্যাংশ অর্জনের সর্বাধিক সুবিধা পেতে পারে।