কেন গুণী মানুষেরা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পান না
অভিমান করে চলে গেলেন আমাদের একজন অতিগুণী মানুষ, শহীদসন্তান এবং আমাদের রক্তধারা ’৭১-এর উপদেষ্টা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক কথাবার্তা হচ্ছে, কিন্তু মূল একটা প্রশ্ন—কেন গুণী মানুষেরা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পান না বা কারা কীভাবে পান?
ফেসবুকে একজন প্রশ্ন করলেন ২০২৪ স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের নিয়ে। তিনি বললেন, দুজন ছাড়া আর কাউকে চেনেন না অথবা কোন কৃতিত্বের জন্য তাঁরা এ সম্মান পেতে যাচ্ছেন, তা-ও জানা নেই। কিন্তু সাদি ভাই এবং তাঁর মতো আরও অনেকে হতবাক হচ্ছেন, কষ্ট পাচ্ছেন।
সাদি ভাই অবহেলিত, অপমানিত বোধ করেছেন বলে নিজেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন।
অপমানবোধটা এতই তীব্র ছিল যে তিনি বেঁচে থাকার ইচ্ছাটুকু হারিয়ে ফেলেন। কাউকে দোষ দেননি, শুধু ধুঁকে ধুঁকে কেঁদেছেন নিভৃতে।
হয়তো বলার মতো কোনো নীতিনির্ধারকদের কাউকে পাননি বা বলতে লজ্জা বোধ করেছেন। কী করে নিজের কথা বলা যায়! সাদি ভাই সেখানেই ভুল করেছেন।
শোনা যায়, মেধা নয়, রাজনীতি বা অন্যান্য বিষয় প্রাধান্য পেয়ে থাকে এ ধরনের পুরস্কারপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে। রাজনীতি বিষয় হলে সাদি ভাইয়ের সমস্যা ছিল না। তাহলে অন্য কোনো ব্যাপার আছে। কী ব্যাপার, তা খতিয়ে দেখা দরকার।
আজ আমি নিজের একটি অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে চাই। কারণ, ব্যাপারটা শুধু বেদনাদায়কই নয়, বরং হতাশাজনক, অপমানজনক।
২০১৯ সাল। আমি কয়েক বছরের স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের তালিকা দেখলাম, সঙ্গে তাঁরা কী কারণে সম্মানিত হলেন, তা-ও দেখলাম। মনে হলো আমার বাবা শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বুদ্ধিজীবী লে. কর্নেল মো. আবদুল কাদীরের কথা, যিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে ‘ভাষানী’ বলে পরিচিত ছিলেন তাঁর বাঙালিয়ানার জন্য।
আমি তৎকালীন ইঞ্জিনিয়ার-ইন-চিফ মেজর জেনারেল সিদ্দিকুর রহমান সরকারকে অনুরোধ করলাম বাবার জন্য আবেদন করতে। তাঁরা করেছিলেন, কিন্তু আশ্চর্যজনক কারণে তাঁর নাম তালিকাতেই ছিল না ২০২০ সালে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেছিলাম আবেদনের কথা। তিনি পরে বললেন, আবেদনটি তাঁর টেবিল পর্যন্ত পৌঁছায়নি। খোঁজ নিলাম এর রহস্য সম্পর্কে। কেউ একজন জানাল, তাঁর গেজেট আর মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট ফাইল ছিল না। কেন ছিল না? যাঁরা পাঠালেন কষ্ট করে, তাঁরাই বলতে পারবেন।
- ট্যাগ:
- মতামত
- রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি
- গুণীজন