নোটিশ দিয়েই দায়িত্ব শেষ!
বেইলি রোডের ভবনটির ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর সরকারি সংস্থাগুলো জোরদার অভিযান চালাচ্ছে অনিয়ম খুঁজে বের করতে। প্রতিদিন সংবাদপত্রে সেই সব অভিযানের সচিত্র খবর প্রকাশিত হচ্ছে। সরকারি সংস্থাগুলোর অভিযানের বিবরণ পাঠ করে মনে প্রশ্ন জাগাটা স্বাভাবিক, দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে এই তাদের উৎসাহ এত দিন কোথায় লুক্কায়িত ছিল?
তাদের তৎপরতা দেখে মনে হওয়াটা স্বাভাবিক—এতকালের শীতনিদ্রা ভেঙে তারা বুঝি এইমাত্র জেগে উঠেছে। অবশ্য এটা নতুন কোনো ব্যাপার নয় আমাদের দেশে। সব দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেই এটা দেখা যায়। দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর কর্তৃপক্ষ নামের কুম্ভকর্ণদের ঘুম ভাঙে। তারা প্রথমেই গঠন করে তদন্ত কমিটি, সময় বেঁধে দেয় সে কমিটির তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের। সেই সঙ্গে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ‘কঠোর আইনি পদক্ষেপ’ নেওয়ার কথাও জানানো হয়।
কিন্তু সব সময় যেটা দেখা যায়, তা ‘বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো’র সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ। যে তদন্ত কমিটি গঠিত হয় তারা কী তদন্ত করে, কী রিপোর্ট বানায়, কাদের কাছে জমা দেয়—কিছুই জনগণের গোচরে আসে না। বেশির ভাগ তদন্ত কমিটির রিপোর্ট সূর্যালোকের মুখ দর্শন করতে পারে না। আবার কোনোটির তদন্তে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে, লালুর দায় কালুর মাথায় চাপানোর নজিরও আছে।
ফলে এসব কথিত তদন্ত কমিটি গঠন এবং তদন্ত-প্রক্রিয়ার প্রতি জনসাধারণের আগ্রহ-আস্থা কোনোটাই নেই। এরপরও প্রতিটি দুর্ঘটনার পরে তদন্ত কমিটি গঠিত হয় এবং ভবিষ্যতেও হবে। আর বেশির ভাগ তদন্ত কমিটি গঠনের পর এমনভাবে হারিয়ে যায় যে তারা কোথায় হারাল বা কী করছে, সেসব তদন্ত করার জন্য আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন অপরিহার্য হয়ে পড়ে। এবারও একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। তারা তদন্ত করে দেখবে বেইলি রোডের ওই ভবনে অগ্নিকাণ্ডের নেপথ্য কারণ কী। অবশ্য সেই তদন্ত রিপোর্ট কবে বের হবে, তা কেউ বলতে পারে না।