ফ্রিডম হাউজ সূচকে কেন আমাদের উন্নতি নেই
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘ফ্রিডম হাউজ’ সম্প্রতি তাদের ‘Freedom in the World 2024’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ২০২৩ সালে রাজনৈতিক অধিকারচর্চা ও নাগরিক স্বাধীনতায় ১৯৫টি দেশ ও ১৫টি অঞ্চলের পরিস্থিতি ফ্রিডম হাউজের এ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটির প্রধান ফাইন্ডিংস পর্যালোচনা করা এবং সূচকে বাংলাদেশের কেন উন্নতি হচ্ছে না, তা আলোচনা করাই এ নিবন্ধের উদ্দেশ্য।
প্রতিবেদনের প্রধান ফাইন্ডিংস হলো-ক. ২০২৩ সাল পর্যন্ত টানা ১৮ বছর ধরে বৈশ্বিক স্বাধীনতা নিম্নমুখী। এ বছর ৫২টি দেশে রাজনৈতিক অধিকারচর্চা ও নাগরিক স্বাধীনতা কমেছে। বিপরীতে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে মাত্র ২১টি দেশে। ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন ও সশস্ত্র সংঘাত মানুষের স্বাধীনতা খর্ব করছে, বিপদের মুখে ফেলছে। ২০২৩ সাল পর্যন্ত টানা ১৮ বছর ধরে বৈশ্বিক স্বাধীনতা নিম্নমুখী। এ বছর ৫২টি দেশে রাজনৈতিক অধিকারচর্চা ও নাগরিক স্বাধীনতা কমেছে। বিপরীতে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে মাত্র ২১টি দেশে। খ. সংঘাত ও স্বার্থপরতাসহ নির্বাচনসংশ্লিষ্ট ব্যাপক সমস্যা মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতা খর্ব করেছে। গ. সশস্ত্র সংঘাত এবং কর্তৃত্ববাদী আগ্রাসনের হুমকি বিশ্বকে কম নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক করে তুলেছে। কর্তৃত্ববাদী আগ্রাসন দ্বারা পরিচালিত তুমুল সংঘর্ষ বিশ্বের অনেক স্থানে মৃত্যু ও ধ্বংস ডেকে এনেছে এবং গণতন্ত্রকে বিপদাপন্ন করে তুলেছে। ঘ. বিশ্বের বিরোধপূর্ণ এলাকাগুলোতে (disputed territories) মানুষের রাজনৈতিক অধিকার ও নাগরিক স্বাধীনতায় অস্বীকৃতি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোয় (associated countries) গণতন্ত্রের অবনতি ঘটিয়েছে। আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ছাড়া বিরোধপূর্ণ এলাকাগুলোতে বসবাসকারী মানুষ কর্তৃপক্ষের অত্যাচারের কাছে অসহায়। ঙ.বহুত্ববাদ আক্রমণের মুখে পড়েছে। কর্তৃত্ববাদী নেতৃবৃন্দ ও সশস্ত্র গোষ্ঠীর বহুত্ববাদ প্রত্যাখ্যান ২০২৩ সালে গণতন্ত্রের ব্যাপক অবনতি ঘটিয়েছে।
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৫টি দেশ ও ১৫টি অঞ্চলের অবস্থান ফ্রিডম হাউজের এবারের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। রাজনৈতিক অধিকারচর্চা ও নাগরিক স্বাধীনতার ক্ষেত্রে এসব দেশ ও অঞ্চলকে ‘স্বাধীন’ (free), ‘আংশিক স্বাধীন’ (partly free) ও ‘স্বাধীন নয়’ (not free)-এ তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। এবারের সূচক অনুযায়ী, ৮৩টি দেশ স্বাধীন, ৫৬টি দেশ আংশিক স্বাধীন এবং ৫৬টি দেশ স্বাধীন নয়। ১০০ পয়েন্টের মধ্যে ১০০ স্কোর করে দেশগুলোর শীর্ষে রয়েছে ফিনল্যান্ড। গতবারও দেশটি ১০০ স্কোর করে সুইডেনের সঙ্গে যৌথভাবে শীর্ষস্থানে ছিল। সবচেয়ে কম ১ স্কোর পাওয়া দেশ হলো সিরিয়া।
ফ্রিডম হাউজের এবারের প্রতিবেদনে গত ১০ বছরে স্বাধীনতার অবনতি হয়েছে এমন দেশ ও অঞ্চলগুলোর একটি তালিকা রয়েছে। ওই তালিকায় বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, আফগানিস্তান, রাশিয়া, তুরস্ক, লিবিয়া, ইয়েমেন, আজাবাইজান ও মিসরসহ বেশ কয়েকটি দেশের নাম রয়েছে।
এখন বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আসা যাক। বিগত চারবারের মতো ফ্রিডম হাউজের এবারের সূচকেও বাংলাদেশ ‘আংশিক স্বাধীন’ শ্রেণিতে রয়েছে। রাজনৈতিক অধিকারচর্চা ও নাগরিক স্বাধীনতায় বাংলাদেশের সম্মিলিত স্কোর ৪০। এর মধ্যে রাজনৈতিক অধিকারচর্চার ক্ষেত্রে স্কোর ১৫, নাগরিক স্বাধীনতায় ২৫। এ দুই ক্ষেত্রে আগের বছরেও বাংলাদেশের স্কোর অভিন্ন ছিল। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত, ভুটান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের চেয়ে ভালো স্কোর করেছে। তাদের স্কোর যথাক্রমে ৬৬, ৬৩, ৬২ ও ৫৪। তবে এসব দেশও আংশিক গণতন্ত্রের শ্রেণিভুক্ত।