রেলের অকেজো হাসপাতালের স্বাস্থ্য কতটা খারাপ?
ব্রিটিশ আমলে গড়ে ওঠা রেলের স্বাস্থ্য বিভাগ এখন অকেজো হলেও প্রতি বছর তাতে খরচ হয় অন্তত ১৫০ কোটি টাকা। রেলের স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী টাকার পরিমাণ কোনো কোনো বছর বাড়তিও হয়। অথচ এই বিপুল পরিমাণ টাকা কোনো কাজেই আসছে না। বর্তমানে রেলের লোকসান ঠেকেছে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকায়। সেই লোকসানের পাল্লা আরেকটু ভারি করছে অপরিকল্পিত অনুন্নত স্বাস্থ্য খাতের কারণে।
ব্রিটিশরা এই দেশে রেল সম্প্রসারণের পাশাপাশি তা টেকসই করতে গুরুত্ব দেয় কর্মীদের স্বাস্থ্যসেবার দিকে। রেলের কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে রেল, নেটওয়ার্কের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোয় গড়ে তোলে হাসপাতাল। বিশেষ করে যেসব এলাকায় বেশিসংখ্যক রেলের কর্মী কাজ করে সেইসব এলাকায় হাসপাতালগুলো গড়ে তোলে তারা।
এসব হাসপাতাল সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে বেশ আধুনিক ও কার্যকর ছিল। নিজেদের কর্মীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রত্যন্ত গ্রামের মধ্যেও হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়। ধীরে ধীরে রেল নেটওয়ার্কের পরিধি বাড়তে থাকায় সব এলাকায় হাসপাতাল গড়ে তোলা সম্ভব ছিল না, তাই রেল হাসপাতাল থেকে স্বল্প দূরত্বে বানানো শুরু হয় মিনি হাসপাতাল বা প্রাথমিক চিকিৎসার সব সুযোগ সুবিধা সম্বলিত ডিসপেনসারি।
রেলের কারখানার শ্রমিকদের যেকোনো দুর্ঘটনা কিংবা অসুখ-বিসুখে ভরসা ছিল এই হাসপাতালগুলো। সেই সময় দেশে এখনকার মতো এত বেশি হাসপাতাল না থাকায় সেই হাসপাতালগুলোয় সবসময়ই ভিড় লেগে থাকতো। তাছাড়া বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধপত্র দেওয়ার ফলে রেলের কর্মীরা তাদের যেকোনো সমস্যায় ছুটে যেত এসব হাসপাতালে। আর গুরুতর না হলে স্বাস্থ্যসেবার জন্য যেত রেল কারখানা, স্টেশন কিংবা কোয়ার্টারের কাছে থাকা মিনি হাসপাতাল বা ডিসপেনসারিতে। সেইসব রেল হাসপাতাল এখনো আছে, তবে নেই সেই স্বাস্থ্যসেবা।
আধুনিক চিকিৎসা সেবার কোনো সুযোগ-সুবিধা না থাকায় এখন আর রেলের কর্মীরা যায় না এসব হাসপাতালে। হাসপাতালগুলোয় এখন নামমাত্র ওষুধপত্র সরবরাহ করা হয়, অনেক হাসপাতালে সামান্য রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করার সুযোগও নেই। বরং হাসপাতালের চেয়ে পাশের ওষুধ বিক্রি করা ফার্মেসির চিকিৎসা সেবা এর চেয়ে ভালো। কার্যত রেলের হাসপাতালগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- রেলওয়ে হাসপাতাল