মিয়ানমার নিয়ে কূটনৈতিক কৌশল বদলাতে হবে
মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী। সীমান্তবর্তী ওই রাজ্যে যে সহিংসতা চলছে, তা নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। এই সহিংস পরিস্থিতিতে নতুন করে রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রবেশের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। গত সেপ্টেম্বর থেকে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহী জাতিগোষ্ঠী ‘থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ যে সাঁড়াশি আক্রমণের ধারাবাহিকতা চালিয়ে যাচ্ছে, তার সুফল তারা ঘরে তুলে নিচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
মোট পাঁচটি জেলা নিয়ে গঠিত এই রাখাইন রাজ্য আবার ১৭টি টাউনশিপে বিভক্ত। গত কয়েক দিনের যুদ্ধে এই ১৭টি টাউনশিপের মধ্যে সাতটিই দখল করে নিয়েছে আরাকান আর্মি। এই শহরগুলো বাংলাদেশ সীমানার খুব কাছাকাছি। তবে এখনো কোনো পূর্ণাঙ্গ জেলা তারা নিজেদের দখলে নিতে পারেনি। এরই মধ্যে জান্তা বাহিনীকে পিছু হটিয়ে রাখাইনের রাজধানী সিতওয়ের কাছে পোনাজিউন শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ পুলিশ স্টেশনের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। পোনাজিউন শহরটি ইয়াঙ্গুন-সিতওয়ে মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। সামরিক গুরুত্ব বিবেচনায় এই শহর সরকারের জান্তা বাহিনীর লজিস্টিক সাপ্লাইয়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ পর্যন্ত ১৭০টি শক্ত ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তারা।
আরাকান আর্মির অব্যাহত আক্রমণের মুখে মিয়ানমার সেনাবাহিনী যে টিকে থাকতে পারছে না, সম্প্রতি তাদের বিভিন্ন তৎপরতা দেখেই বোঝা যায়। কিছুদিন আগেই তারা রাখাইনের উত্তরাঞ্চল থেকে তাদের সেনাসদস্যদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে। মিয়েবন শহরের দুটি গুরুত্বপূর্ণ তল্লাশিচৌকি থেকে হেলিকপ্টারে করে সেনাসদস্যদের দক্ষিণে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর স্থানীয় কর্তৃপক্ষ যখন নিশ্চিত হয়েছে যে আরাকান আর্মির সাঁড়াশি আক্রমণে তাদের পরাজয় অবধারিত, তখনই তাদের দ্রুত প্রত্যাহার করা হয়েছে। উত্তরাঞ্চলের এসব সেনাসদস্য দক্ষিণে সরিয়ে নিয়ে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় কমান্ডের অধীনে ন্যস্ত করা হয়েছে।
নতুন করে ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে এ লড়াই শুরু হওয়ার পর আরাকান আর্মি জান্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা বেশ কিছু নিরাপত্তা চৌকি দখল করে নিয়েছে। অন্যদিকে রাখাইনের মংডু ও বুথিডং শহরে নিয়ন্ত্রণ নিতে জান্তা বাহিনীর ওপর হামলা অব্যাহত রেখেছে আরাকান আর্মি।
রাখাইনে একের পর এক অঞ্চল ও সেনাচৌকির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে জান্তা সেনারা বেসামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আরাকান আর্মির প্রধান জেনারেল তুন মিয়াত নাইং মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মিন অং হ্ল্যাইং ও তাঁর অনুগত জেনারেলদের প্রতি রাখাইনে পরাজয় মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা বন্ধেরও অনুরোধ করেছেন।
অতি অল্প সময়ের মধ্যে আরাকান আর্মি রাখাইনের মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। রাখাইন জনগণের এমন সমর্থন পেয়ে আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যে তাদের পূর্ববর্তী স্বাধীন রাজত্ব আবারও প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। আরাকান আর্মির প্রতি মানুষের সমর্থন এত প্রবল যে, রাখাইনের প্রায় ৬০ শতাংশ এলাকায় তারা তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে বলে এর প্রধান জেনারেল তোয়াই মিয়াত নাইং সম্প্রতি দাবি করেছেন। তারা ইতিমধ্যে ওই সব এলাকায় তাদের প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন বলে দাবি করেছেন। বিচারব্যবস্থা, কর ব্যবস্থাপনাও তৈরি হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য তারা নতুন পুলিশ বাহিনীর প্রশিক্ষণও পরিচালনা করছেন।