![](https://media.priyo.com/img/500x/https://samakal.com/media/imgAll/2024February/hasan-mamun-1708797154.jpg)
মূল্যস্ফীতি তাহলে কমবে কীভাবে?
রাষ্ট্রায়ত্ত যেসব চিনিকল এখনও চালু আছে– সেগুলো কী পরিমাণ চিনি উৎপাদন করে, তা আমাদের জানা। এগুলোর উৎপাদন ব্যয় অনেক বেশি, সেটিও অজানা নয়। এসব চিনিকল বেসরকারি খাতে হস্তান্তরের একটি চিন্তা রয়েছে, তারও ইঙ্গিত মিলেছে সম্প্রতি। প্রসঙ্গটি এলো এসব চিনিকলে উৎপাদিত পণ্যের দাম হঠাৎ করে কেজিপ্রতি ২০ টাকা বাড়ানোর কাণ্ডে। কয়েক ঘণ্টা পরই অবশ্য সিদ্ধান্তটি বাতিল হয়। এতে চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন এবং শিল্প মন্ত্রণালয় জড়িত। তাদের কারা কী ভূমিকা এ ক্ষেত্রে রেখেছে, সেটি সরকারের উচ্চপর্যায়ই কেবল বলতে পারে।
এদিকে এনবিআর সম্প্রতি যে চারটি খাদ্যপণ্যে কর-শুল্ক কমিয়েছে, তার মধ্যে ছিল চিনি। চিনিতে শুল্ক অবশ্য সামান্যই কমানো হয়। তাতে প্রশ্ন তোলার সুযোগ বরং তৈরি হয়েছে, এমন পদক্ষেপে রমজানে চিনির দামে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা। পদক্ষেপটি নিতে সরকার দেরি করে ফেলেছে বলেও সমালোচনা রয়েছে। গোটা মুসলিম বিশ্বে এ সময়ে চিনির মতো পণ্যের চাহিদা লাফিয়ে বাড়তে দেখা যায়। সে জন্য কম দামে আগেভাগে আমদানির চেষ্টা করাই ভালো। তবু দেরিতে হলেও সরকার একটি পদক্ষেপ তো নিয়েছে এবং এর লক্ষ্য নিশ্চিতভাবে দাম কমানো। অনেক দিন ধরেই চিনির দাম বেড়ে আছে, কমার কোনো প্রবণতা নেই। এ অবস্থায় শুল্ক হ্রাসে এমন উদ্দেশ্যও থাকতে পারে– দাম অন্তত না বাড়ুক!
এর মধ্যে সরবরাহে অবদান যত কমই থাকুক– রাষ্ট্রায়ত্ত মিলের চিনির দাম আকস্মিকভাবে বাড়িয়ে দেওয়ার মানে কী? এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা কি চাইছিলেন, রমজানে চিনির দাম বাড়বে– এমন একটি সংকেত যাক বাজারে? তাও ভালো, সিদ্ধান্তটি দ্রুত বাতিল হয়েছে। নইলে আমদানীকৃত চিনির মূল বাজারটা অস্থিতিশীল হতো। মাঝখান দিয়ে কাঁচা টাকা কামিয়ে নিত তারা, যাদের হাতে চিনির ভালো মজুত আছে। পকেট কাটা যেত ভোক্তাদের, যাদের জোরালো ‘ভয়েস’ নেই। এ কারণে ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার।
চিনিকলগুলো কম ব্যয়ে উৎপাদনে অক্ষম বলেই যদি তাদের চিনির দাম বাড়ানো হয়ে থাকে, তবে কোনো যুক্তিশীল ভোক্তা সেটি কিনবে না। সন্দেহ নেই, এর ভালো চাহিদা রয়েছে। আখের ‘লাল চিনি’ লোকে একটু বেশি দামেও কিনতে চায়। স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায় কেনাকাটার এ প্রবণতা বেড়েছে। কিন্তু দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি হলে তারাও সেটি কিনবে না। আর এ মুহূর্তে রীতিমতো ঘোষণা দিয়ে চিনির মতো পণ্যের দাম বাড়ানোর তো কোনো সুযোগ নেই। কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেশিতে বিক্রি হলেও ওইসব চিনিকলের আয়ই বা কতটা বাড়ত? যাহোক, তাদের এখন উচিত হবে আগের দামে যতটা সম্ভব বেশি চিনি জুগিয়ে চাহিদা মেটানো। সরকারের উচিত হবে শুল্ক ছাড়ের যেটুকু প্রভাব চিনির বাজারে পড়ার কথা, সেটি নিশ্চিত করা। সঙ্গে এনবিআর কেন আরও বেশি শুল্ক ছাড় দিল না, সেটি তাদের জিজ্ঞেস করা।
রমজান সামনে রেখে চিনিতে আরেকটু বেশি শুল্ক ছাড় দিলে কতটাই বা রাজস্ব হারাত এনবিআর? নাকি তারা মনে করেন, এতে বাজারে কোনোই প্রভাব পড়বে না; রাজস্ব হারানোটাই হবে সার! তাহলে তো খতিয়ে দেখতে হয়– অন্য যে তিনটি খাদ্যপণ্যে বড় শুল্ক ছাড় দেওয়া হলো, তাতে কী ঘটছে? ইতোমধ্যে সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে অবশ্য। কিন্তু খেজুরের বাজারে অস্থিরতা কাটছে না। শুল্কায়ন জটিলতায় আমদানীকৃত অনেক খেজুর নাকি পড়ে আছে বন্দরে। শুল্ক কমাতে চাপ সৃষ্টির চেষ্টায়ও বিভিন্ন জরুরি পণ্যের আমদানিকারকরা অনেক সময় পণ্য খালাসে দেরি করে। রমজান সামনে রেখে এ প্রবণতা বাড়লে অবাক হওয়া যাবে কি?
- ট্যাগ:
- মতামত
- মূল্যস্ফীতি