দলের চেয়ে নেতা বড়, নেতার চেয়ে কথা বড়
বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটছে। অসংখ্য ছোট ছোট রাজনৈতিক দলের অনেক বড় বড় নেতা। এই নেতারা প্রায়ই বড় বড় অনেক কথা বলেন, কিন্তু তাঁদের জনসমর্থন প্রায় নেই বললেই চলে। এই নেতাদের প্রায় কারও কোনো নির্বাচনী এলাকা নেই। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়ে আসার সম্ভাবনাও যাঁদের নেই, তাঁরা সামান্য কিছু সমর্থকের উপস্থিতিতে আয়োজিত সভা-সমাবেশে সরকারের বিরুদ্ধে হুংকার ছাড়েন, গণ-আন্দোলনের ভয় দেখান। কিছু গণমাধ্যমে এই নেতাদের বক্তব্য ছাপাও হয়। পত্রিকার পাতায় খবর ছাপা হয় বলেই সম্ভবত এই দলগুলো টিকে আছে, নেতারাও গলাবাজি করে যেতে পারছেন। কিন্তু এই দলগুলো কি কোনোভাবে কোনো ঘটনাকে প্রভাবিত করতে পারে?
কথাগুলো মনে হলো বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপদেষ্টা মনজুরুল আহসান খানের কিছু মন্তব্য পড়ে। একটি দৈনিকের সঙ্গে প্রবীণ এই কমিউনিস্ট নেতা অবশ্য সরকারের সমালোচনার পাশাপাশি নিজের দলেরও সমালোচনা করেছেন।
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ‘গাঁয়ে মানে না, আপনি মোড়ল’ এই বাম রাজনীতিক বলেছেন, কিছুদিন আগে দেশে যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে, তাতে খুব কম মানুষ ভোট দিয়েছে। গড়ে ২৭ ভাগ (নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ) ভোটার ভোট দিয়েছেন। এভাবে একটা স্থিতিশীল সরকার হতে পারে না।
আমরা যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নিই যে খুব কমসংখ্যক মানুষ গত নির্বাচনে ভোট দিয়েছে, তাহলেও তাতে সিপিবির কি উল্লসিত হওয়ার কিছু আছে? কম ভোট পাওয়ায় সরকার স্থিতিশীল যদি না হয়, তাতে সিপিবির লাভ কী? আওয়ামী লীগ সরকার যদি কোনো কারণে পড়েও যায়, তাহলে বামেরা কি ক্ষমতায় বসতে পারবে? বাংলাদেশে বামপন্থীদের সরকার গঠনের সম্ভাবনা একেবারেই শূন্য। একসময় সিপিবি একটি সম্ভাবনাময় রাজনৈতিক দল হয়ে উঠেছিল। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে এই দল ও দলের নেতা কমরেড মোহাম্মদ ফরহাদকে নিয়ে মানুষের মধ্যে আশাবাদ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু মোহাম্মদ ফরহাদের অকাল মৃত্যু এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সিপিবি যেন অনেকটা রাজনৈতিক এতিমে পরিণত হয়েছে। এখন সিপিবির নেতারা অতীত গৌরবের স্মৃতি রোমন্থন করে সুখ অনুভব করলেও রাজনীতির ময়দানে দলটির কোনো বসার জায়গা নেই।
সিপিবি নামে একটা দল এখনো আছে। পুরানা পল্টনে তাদের একটি বহুতল অফিসও আছে। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাব বলতে যা বোঝায় তা আর নেই। আবার দল ছোট হলেও দলের মধ্যে বিভেদ-বিভাজন আছে। তত্ত্বচর্চায় সিদ্ধহস্ত সিপিবিতে আছে অন্তঃকোন্দল।
মনজুরুল আহসান খান বলেছেন, বর্তমান সিপিবির নেতৃত্বে রয়েছে একটা সুবিধাবাদী গোষ্ঠী। এরা অতীতেও কোনো আন্দোলন করেনি, বর্তমানেও করে না। এমনকি আমরা শ্রমিকদের নিয়ে যে সংগ্রাম পরিষদ করেছি, তাদের আন্দোলনেরও বিরোধিতা করে। আমাকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। পাঁচ দফা অভিযোগ তুলে আমাকে শোকজ করেছে। যদিও শোকজ তিন মাস ধরে করেছে, কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস পায়নি, কেননা পার্টির অধিকাংশ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এর বিরোধিতা করবে। আমাকে মোট পাঁচবার পার্টি থেকে বহিষ্কার করেছে। এখন আরেকবার করতে চাইছে কিন্তু সাহস পাচ্ছে না। আমরা সম্মেলন করে বর্তমান নেতৃত্বকে সরিয়ে দেব।