কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

You have reached your daily news limit

Please log in to continue


আইনের ভাষা এবং আদালতে বাংলা চালুর অভাবিত দিকসমূহ

এটা বেশ জনপ্রিয় মত যে, বাংলা ভাষা এবং আইনের মাঝে একটি বিয়োগাত্মক সম্পর্ক আছে। অনেকেই এই সম্পর্কের সুলুকসন্ধান করেন বাংলা ভাষা এবং আইনের ঔপনিবেশিক পর্বের ভেতরে। বাংলা ভাষা এবং এই অঞ্চলের মানুষের জন্য প্রচলিত আইন যখন আমাদের পরিচিত আকার লাভ করছে, তখনই কিছু বিয়োগের ব্যাপার ঘটেছে; কিছু বিষয়কে উপেক্ষা করে আইন রচিত হয়েছে বা আইনের প্রয়োগ হয়েছে— যা ঔপনিবেশিক শাসনের জন্যে হয়তো অপরিহার্য ছিল। যেমন, একটা দৃষ্টান্ত বোধহয় দেয়া যায়, উনিশ শতকে যখন ভারতবর্ষের জন্যে একটি দণ্ডবিধি প্রণয়নের কাজ চলছিল, সেই কাজের সূত্রধর ছিলেন লর্ড মেকলে। মেকলে বিস্তর জানাশোনা লোক হলেও, ভারতীয়দের বিদ্যাবুদ্ধি সম্পর্কে তার মূল্যায়ন ছিল খুবই অবমাননাকর। ১৮৩৫ সালের এক রচনায় তিনি বলছেন, “...a single shelf of a good European library was worth the whole native literature of India and Arabia.” মেকলে ভারত বা এর জ্ঞানের ঐতিহ্য সম্পর্কে কতটুকু জানতেন, সেই তর্কে না গিয়েও বলা যায়, মেকলে ভারত বা তৎকালীন বাংলাকে বোঝেননি।

তিনি ভুল বুঝেছেন বা উল্টো বুঝেছেন— যদিও এটা প্রমাণ করা আমার আলাপের উদ্দেশ্য না। তবে, যেটা বলা আবশ্যক মনে করি তা হলো, প্রাচ্যবাদী এইসব ভুল ঔপনিবেশিক শাসন বজায় রাখার জন্যে জরুরি ছিল। ভারত তথা বিশ্বের অ-ইউরোপীয় মানুষদের ওপর সাদা মানুষের শাসন এবং তার বৈধতার যে বয়ান শত বছর ধরে চলেছে, মেকলের ভুলভাল ভারত বোধন তার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ। এই মেকলে ভারতের জন্যে আইন সংহিতা লিখছেন, তিনি জানেন যে এটি রচনা করছেন সাবজেক্ট রেস বা পরাধীন জনগোষ্ঠীর জন্যে। একটি অধিপতি গোষ্ঠী যদি পরাধীন মানুষের জন্য আইন তৈরি করে, ওই আইন তার অস্থি-মজ্জায়, বয়ানে, ঢঙে, শক্তিতে, বোধনে, ব্যাখ্যায় হেজেমনির চিন্তার প্রতিফলন ঘটাবে। ভারত নিয়ে আইন তৈরি করতে গিয়ে, মেকলে সংখ্যাগুরু ভারতীয়দের চিন্তা, মত বা পর্যবেক্ষণ খুব আমলে নিয়েছেন এমন দলিল আমি দেখিনি। অবশ্য তার দরকার ছিল না। কারণ, ১৮৩০-এর দশকে প্রায় পুরো ভারত ব্রিটিশ শাসনের অধীন, যার অনেক গাঁও-গেরামে অর্ধশত বছর ধরে কোম্পানির আদালত বিচার দিয়ে আসছে। ব্রিটিশ বিচারকেরা ভারতীয় বিচারপ্রার্থী এবং সহকারীদের শক্তি এবং দুর্বলতা যেমন দেখেছেন, তেমনি তারা প্রাক-ঔপনিবেশিক বিচার সম্পর্কেও ধারণা রাখতেন। সন্দেহ নেই, যে মেকলের প্রণীত যে আইন তার ভাব এবং ভাষা দুটোই ইউরোপিয়ান হবে। ওপর থেকে নাজেল হওয়া এই আইন তাই নিম্নবর্গীয় সাধারণ মানুষের ভাব এবং ভাষা বুঝতে অপারগ। এই অপারগতা এখনো নানাভাবে জারি আছে। তার আলাপ একটু পরে করছি।

জনগণের ভাব, ভাষা, মেজাজ-মর্জি, সংস্কৃতি-ঐতিহ্য ইত্যাদির সঙ্গে যদি আইনের বয়ান খাপ না খায়, তারপরও তার কাজ চলে। চলে যে, সেই প্রমাণ আমরা পাচ্ছি, গত দুইশ বছর ধরে। এই চলার বহু কারণ আছে। কয়েকটা বলি। ব্রিটিশরা আসার আগেও ভারতে আইন ছিল, বিচার ব্যবস্থা ছিল। সেই আইন পঠন-পাঠন, ব্যাখ্যা ও বোধনে এখনকার মতো কোনো আইনজ্ঞ বা আইনজীবী শ্রেণি তখন ছিল না। লোকে সরাসরি কাজীর কাছে বিচার নিয়ে যেত বা কখনো সম্রাটের দরবারেও যেত। ব্রিটিশদের আমলে দেশে আইনজীবী শ্রেণি তৈরি হলো। আইন নিয়ে যাবতীয় কায়ক্লেশ নিজেরা সামাল দিয়ে মক্কেলদের আইন পড়ার ঝামেলা থেকে রেহাই দিয়ে ফেলেন আইনজীবীরা। এই প্রক্রিয়ার নানা ফল এবং অফল ছিল, আছে। ফল হলো, লোকের অত আইন না বুঝলেও চলত এবং এখনও চলে। অফল হলো, আইনের মতো একটি অতি জীবন-ঘনিষ্ঠ বিষয় গণমানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেল। আইন হলো ক্ষমতার কাছের, মানুষ থেকে দূরের বিষয়। লক্ষ্য করলে দেখবেন, আইনের আলাপ সাধারণ মানুষের কাছে কোনো প্রিয় বা অপরিহার্য আলাপ না। আমাদের দেশের লোকে বিপদে না পড়লে বা বাধ্য না করলে আইন-আদালতের বারান্দা মাড়াতে চায় না। আইনের এই একচেটিয়াকরণ ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের জন্যে দরকারি ছিল। যা হতে পারত অক্ষমতার নিদান এবং প্রতিষেধক তা হয়ে উঠল ক্ষমতার ভাষা। আইন ক্ষমতার ভাষা। আইনের এই বৈশিষ্ট্যই অর্থাৎ ক্ষমতার ভাষা হয়ে ওঠাই তাকে বাংলা থেকে দূরে এবং ইংরেজির কাছে নিয়ে আসে। ইংরেজি কেবল একটি ভাষা নেই, বরং তা ক্ষমতার এমন একটি প্রশস্ত বয়ান যার কাছে বহু ভাষা ইতোমধ্যেই নিজের ছাল-বাকল খুইয়ে বসে আছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন