প্রভাতফেরির মুক্তি চাই

বণিক বার্তা একেএম শাহনাওয়াজ প্রকাশিত: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:৩৭

গত ডিসেম্বরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার একটি বক্তৃতা ছিল। সেমিনার শেষে নানা আলাপচারিতায় একজন অধ্যাপক প্রশ্ন করলেন, আপনাদের দেশে প্রভাতফেরি কি মুক্তি পেয়েছে? আমার মুখের ভাষা পড়ে বুঝলেন, একুশের বন্দিত্ব মুক্তি এখনো হয়নি। আমি প্রায় এক যুগ ধরে আহাজারি করে আসছি। আমাদের জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকদের অসীম কৃপা যে তারা আমাকে প্রশ্রয় দেন। অন্তত ফেব্রুয়ারি এলে এ বিষয়ে আহাজারি করে লেখা আমার কলাম তারা প্রকাশ করেন। ‘কৃপা’ শব্দটি অনেকে এ প্রসঙ্গে অনেকটা সংকীর্ণ শব্দ মনে করতে পারেন। সম্পাদকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ খুব প্রাণখোলা মনে নাও হতে পারে। আসলে প্রাণ খুলতে পারলাম না। কারণ এতগুলো বছরেও রাজনীতি অঞ্চলের মানুষ, বুদ্ধিজীবী, সাংস্কৃতিক কর্মীদের মতো একুশের চেতনার এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে সংবাদপত্রেরও একধরনের শীতঘুম আছে। তারা আমাকে কৃপা করলেও বিষয়টি অনুভব করে দায়িত্ব হিসেবে ঝাঁপিয়ে পড়েননি। সচেতন করার পদক্ষেপ নেননি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে।


অধ্যাপকের কথায় ফিরে আসি। এ প্রভাতফেরি হারিয়ে যাওয়ার আক্ষেপ ও ফিরে পাওয়ার আর্তি নিয়ে আমার কয়েকটি লেখা তিনি আগে পড়েছিলেন। এজন্যই আমাকে প্রশ্ন করা। হিন্দি ভাষার গ্রাসে পিষ্ট পশ্চিম বাংলার সংস্কৃতি কর্মীরা বহুকাল থেকেই একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন করেন প্রত্যূষে প্রভাতফেরির মধ্য দিয়ে, যা বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারির পর থেকে বাঙালি করে আসছিল। হিন্দি ভাষার আধিপত্য থেকে ভারতের বাঙালিরা বেরোতে পারেনি এখনো। তাই তারা প্রতি একুশে ফেব্রুয়ারি প্রভাতফেরি করে শহীদ মিনারে যাওয়া ও অনুষ্ঠান করা অব্যাহত রেখেছেন। এটিই তাদের প্রতিবাদের ভাষা।


সম্পূর্ণ আবেগ দিয়েই বাঙালি সংস্কৃতি ধারণ করতে চেয়েছিলেন আমাদের পূর্বসূরিরা। বাঙালির দিনের হিসাবকে পাশ্চাত্যের ২৪ ঘণ্টার হিসাবে মিশিয়ে ফেলেননি। তাদের স্মরণে ছিল বাঙালির দিন শুরু হয় প্রত্যূষে আর শেষ হয় সন্ধ্যায়। সেই মতে একুশের প্রথম প্রহর ২১ ফেব্রুয়ারি প্রত্যূষে অর্থাৎ কাকডাকা ভোরে। অন্য কোনো জাতীয় দিবস উদযাপন রীতির সঙ্গে একুশকে মেলানো যাবে না। তাই একুশ অনন্য। উদযাপন রীতিটাও আলাদা। পাকিস্তান আমল থেকে দেখে আসছি একুশ নিয়ে আলাদা প্রস্তুতি থাকত কিশোর-যুবা সবার। ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রস্তুতি থাকত এলাকার স্কুল-কলেজের শহীদ মিনার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করায়। পাড়ামহল্লায় শহীদ মিনার না থাকলে মহা উৎসাহে কলাগাছ কেটে বানিয়ে ফেলত প্রতীকী মিনার। এর-ওর বাগান থেকে সন্ধ্যার আগেই ফুল জোগাড় করা হতো। প্রায় নির্ঘুম রাত কাটত। প্রভাতে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো...’ গানের সুর-মূর্ছনা নিয়ে নগ্ন পায়ে মিছিল বেরোত। শহীদ দিবসের ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে মিছিল এগোত শহীদ মিনারের দিকে। কোনো রাজনৈতিক স্লোগান থাকত না এদিন। একটি ভাবগাম্ভীর্য শান্ত সমাহিত পরিবেশ স্বর্গীয় আভা যেন ছড়িয়ে দিত। একুশের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের এ অনন্য ধারা স্বাধীনতা-উত্তরকালেও অনেকদিন সচল ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে প্রত্যূষেই পরিচালিত হতো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষাশহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের কার্যক্রম। রাজধানীর নানা পথ ধরে প্রভাতফেরির মিছিল এসে পৌঁছত শহীদ মিনারে। ভাষার গানের সুর-মূর্ছনা ছড়িয়ে পড়ত চারদিকে। ঠিক অভিন্ন রূপ ছিল দেশের সর্বত্র।


এরপর নষ্ট রাজনীতির ঘূর্ণাবর্তে ঐতিহ্য হত্যা করতে থাকলাম আমরা। সম্ভবত আশির দশকের শেষ দিকে সামরিক শাসনের কাঠামোয় জেনারেল এরশাদ নিজের নিরাপত্তাবলয় তৈরি করে নিরাপদে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের জন্য সমস্ত রীতি ভেঙে মধ্যরাতকে একুশের প্রথম প্রহর বানালেন। রাত ১২টা ১ মিনিটে শুরু করলেন একুশে তর্পণ। আশ্চর্যের বিষয়, একুশে তর্পণের ঐতিহ্য ও মাহাত্ম্য ক্ষুণ্ন হলেও কোনো পক্ষ থেকেই প্রতিবাদ এল না। নির্বিবাদে মেনে নিল সবাই। সারা দেশে সরকারিভাবে মধ্যরাতে পালন শুরু হলো একুশে। একুশের অনন্য ঐহিত্য ‘প্রভাতফেরি’ যেন পরিকল্পনা করেই বিসর্জন দেয়া হলো। অথবা মধ্যরাতেই যেন ‘প্রভাতফেরি’র আয়োজন করা হলো।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও