বাজারে চার পণ্যের দর ‘এক আনা’ও কমেনি
রোজার আগে দামের রাশ টানতে চাল, চিনি, ভোজ্যতেল ও খেজুরের আমদানি শুল্ক কমিয়েছে সরকার। তবে সপ্তাহ ঘুরলেও বাজারে পণ্যের দর ‘এক আনা’ও কমেনি। ফলে শুল্ক কমানোর কারণে সরকারের রাজস্ব ছাড়ের ‘বটিকা’ খুব একটা কাজে দিচ্ছে না। অনেকেরই ধারণা, শুল্ক কমালে বাজারে পণ্যের দর কমবে। তবে অতীত বলছে, ভোক্তারা এর সুফল পান না। পুরোনো নিয়মেই নানা ছুতায় ভোক্তার পকেট কেটে শেষ হাসি হাসে ব্যবসায়ীরাই।
আমদানিকারকদের দাবি, শুল্ক কমানোর ‘সুবিধা’ খেয়ে ফেলছে ডলার। এখন এক ডলার কেনাবেচা হচ্ছে ১১২ টাকার বেশি দরে। কোনো কোনো এলসির ক্ষেত্রে এর চেয়েও বেশি দাম গুনতে হচ্ছে। ডলারের দর না কমালে শুল্ক কমিয়ে লাভ নেই। তাদের মতে, ডলারের দর বাড়লে আমদানি কমে যায়। তাতে বাজারে পণ্যের ঘাটতি দেখা দেয়, যা স্বাভাবিকভাবেই দামকে উস্কে দেয়। সরকারের উচিত শুল্কের চেয়ে ডলারের দর কমানোর দিকে নজর দেওয়া। তাতে পণ্য আমদানি বাড়বে। তখন এমনিতেই কমে যাবে দাম। আবার কেউ কেউ বলছেন, যে পরিমাণে শুল্ক কমানো হয়েছে, তা একেবারেই কম। ফলে বাজারে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না।
বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, এলসি খোলার পর পণ্য দেশে এনে বাজারে আসা পর্যন্ত এক মাসের বেশি সময় লেগে যায়। তাই শুল্ক কমানোর দরকার ছিল অন্তত এক মাস আগে। তবু নতুন শুল্কের আওতায় যেসব পণ্য খালাস হয়ে বাজারে এসেছে, সেগুলোর দাম কমাতে নজরদারি জোরদার করা দরকার।
তাদের মতে, শুল্ক কমানোর চেয়ে আমদানির মাধ্যমে পণ্যের সরবরাহ বাড়ানো বেশি জরুরি। কারণ, তাতে বাজারে প্রতিযোগিতা তৈরি হবে। বেশি জোগানের কারণে দামও কমে আসবে।
রপ্তানিকারক দেশগুলোতে কোনো পণ্যে শুল্ক আরোপ, কিংবা রপ্তানিতে বিধি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেশের বাজারে এর বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। এ সুযোগে সৃষ্টি করা হয় পণ্যের কৃত্রিম সংকট। রাতারাতি দামও বেড়ে হয় দ্বিগুণ। তবে দেশে আমদানি শুল্ক কমালে কিংবা মৌসুমে পণ্যের জোগান বাড়লেও দাম কমার ক্ষেত্রে সেই প্রবণতা দেখা যায় না। এই যেমন, গত ডিসেম্বরে প্রতিবেশী দেশ ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার খবরে সঙ্গে সঙ্গে এক রাতেই দেশে পেঁয়াজের দর দ্বিগুণ হয়েছিল।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমিয়েছে। এনবিআরের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, খেজুরের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। তাতে সাধারণ মানের খেজুর আমদানি কেজিতে ১৬৪ থেকে কমে ১৩১ টাকা হয়েছে। অর্থাৎ, কেজিতে করভার ৩৩ টাকা কমবে। দামও অন্তত ৩৩ টাকা কমার কথা।