আমাদের চাওয়া-পাওয়া
জ্ঞানীরা বলে এসেছেন, সব দুঃখ ও অশান্তির মূলে আকাঙ্ক্ষা; শান্তি পেতে হলে আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করো। মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণ বলছেন, বিষয়াসক্তি ত্যাগ করে শুধু আমাকে পেতে চাও। রামকৃষ্ণ বলছেন, কামিনীকাঞ্চন ত্যাগ করো, ও দুটো বিষবৎ, জীবন নরক করে দেয়।
বুদ্ধ বলছেন, আকাঙ্ক্ষাই সব দুঃখের কারণ। বুদ্ধ তো শুধু ওটুকু বলেই থামেননি। তিনি বলছেন, জন্মও হয় জন্মানোর তৃষ্ণা থেকে। ওই তৃষ্ণাটাও ত্যাগ করো, যাতে জন্মে দুঃখ না পেতে হয়। এ সব মহাজ্ঞানীদের কথা এবং অবশ্যই শিরোধার্য, কারণ অপূর্ণ আকাঙ্ক্ষা এ আমাদের কী বিষম দুঃখ দেওয়ার ক্ষমতা রাখে, সেটা আমরা সবাই কমবেশি জানি। আর এ জন্যই আকাঙ্ক্ষা নিয়ে জ্ঞানীদের এত সাবধানবাণী।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, আকাঙ্ক্ষা থেকে মুক্তি পাওয়া কি সম্ভব? বুদ্ধ জন্মানোর আকাঙ্ক্ষাকেই জয় করতে বলছেন। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখি, চাওয়ার বাসনা থেকে মায়ের কোলে খেলতে থাকা শিশুও মুক্ত নয়। ওর বন্ধ মুঠো খুলে একটা কিছু ধরিয়ে ওটা ফেরত নেওয়ার চেষ্টা করুন, সে সহজে মুঠো খোলে না। যখন একটু বড় হয় এবং আঙুলগুলো ফুলের পাপড়ির মতো প্রস্ফুটিত হয়, তখন ওর হাতের একমাত্র কাজ আঙুল দেখিয়ে দেখিয়ে বস্তু চাওয়া। এটা দাও, ওটা দাও। এভাবে কত-কী চাইতে চাইতে সে বড় হয়, প্রাণধারণ করে, নানা কর্মযজ্ঞে সারা জীবন নিজেকে ব্যস্ত রাখে, বৃদ্ধ হয় এবং মৃত্যুশয্যায় শায়িত হয়। তখনো চাওয়া থেকে তার মুক্তি নেই।
সে তখন চায়, চিকিৎসাটা যেন তার ভালো হয়। মরতে তার আপত্তি নেই, কিন্তু কষ্টটা যেন কম হয়। ছোট ছেলেটা এখনো কিছু করতে পারল না, ওর যেন একটা রোজগারের বন্দোবস্ত হয়। নাতনিটার যেন ভালো বিয়ে হয়। বড় ছেলে ঢাকায় থাকে। মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে সে যেন বাড়ি আসে। কবরে যেন একটু মাটি দিতে পারে। বাজারের পাশের জমিটা বেদখল হয়ে যাবে মনে হয়। কিন্তু জমিটা উদ্ধারের ব্যাপারে কিংবা বিক্রি করে দেওয়ার ব্যাপারে একটা কিছু করা আর হয়ে উঠল না!
- ট্যাগ:
- মতামত
- প্রত্যাশা
- ব্যক্তি জীবন