অবারিত গণহত্যায় ফিলিস্তিনে শান্তি অধরা
পশ্চিম এশিয়ায় হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে যে যুদ্ধটা বর্তমানে চলছে, তার মতো এত নৃশংস ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ওই অঞ্চলে আগে কখনো হয়নি। হাজার হাজার মানুষ প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছে। আর মৃত ও আহতদের অধিকাংশই ফিলিস্তিনের সাধারণ নাগরিক। অনিবার্যভাবেই অনেকগুলো প্রশ্ন উঠছে-ইসরাইলকে আক্রমণ করার আগে হামাস কি আন্দাজ করেনি যে, উলটো দিক থেকে কতখানি প্রতিক্রিয়া আসবে? হামাস কি জানত না, ইসরাইলি বাহিনীর ধ্বংসশক্তি হামাসের তূলনায় অনেক বেশি? সবকিছু জেনে-বুঝে, ঝুঁকি এবং লাভ-ক্ষতির হিসাব বিচার করেই কি তারা যুদ্ধে নেমেছে? নিরীহ ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুগুলোও কি তাদের হিসাবের মধ্যেই ছিল?
পাওয়ার প্লের নিয়মানুযায়ী, ইসরাইল হামাসকে ধ্বংসের নামে গাজাসহ সর্বত্র যাকেই শত্রু মনে করছে, তাদেরই ওপর গোলাবর্ষণ করছে। গাজার মানুষ বিদ্যুৎহীন, চিকিৎসাহীন, খাদ্যহীন থেকে শুধু রক্ত দিয়ে যাচ্ছে। দূরে দাঁড়িয়ে রেফারির ভূমিকায় থাকা জাতিসংঘ মানবাধিকার লঙ্ঘনের দোহাই দিয়ে কেবল হুইসেল বাজিয়েই যাচ্ছে। ইসরাইলের পাশে আছে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তাই ইসরাইলের থামার কোনো লক্ষণ নেই-মানুষ মরছে, তো মরছেই!
ফিলিস্তিন সমস্যা আজকের নয়। এ সমস্যা বহু পুরোনো। সেই কবে হিটলার গোটা বিশ্বে ইহুদিদের এক-তৃতীয়াংশ মানুষকে খুন করেছিল। এ প্রেক্ষাপটে হাজার বছর ধরে যাযাবর জীবনে অভ্যস্ত ইহুদিরা খুঁজে পেয়েছিল ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে তাদের স্বাধীন রাষ্ট্র। শিক্ষা-দীক্ষা, চেতনা, সমৃদ্ধি, বিজ্ঞানে এগিয়ে থাকা ইসরাইলিরা সামরিক শক্তিতে যখন সবল হয়ে দাঁড়াল, তখন তারা চাইল তাদের স্বাধীন রাষ্ট্রের আরও বিস্তৃতি। ফিলিস্তিনের মুসলমানরা চাইল তাদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র। ফলে সংঘাত একসময় অনিবার্য হয়ে দাঁড়াল। কিন্তু ইসরাইল নাছোড়বান্দা। তাদের যা চাই, পুরোপুরি চাই। তাদের গাজা চাই, পশ্চিম তীর চাই। ছোট্ট অংশে গাদাগাদি করে নিজভূমে পরবাসী হয়ে থাকা ফিলিস্তিনিদের গোটা ফিলিস্তিন থেকে বিতাড়িত করাই যেন ইসরাইলের সমর নায়কদের লক্ষ্য।
১৯৯৩ সালে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী আইজাক রবিন আর পিএলও নেতা ইয়াসির আরাফাতের সদিচ্ছায় ফিলিস্তিনে স্থায়ী শান্তি স্থাপনের এক সুবর্ণ সুযোগ এসেছিল। ইসরাইল মেনে নিয়েছিল আরাফাতের সরকারকে, আর আরাফাত মেনে নিয়েছিলেন ইসরাইলকে। স্বাক্ষরিত হয়েছিল অসলো চুক্তি। এ শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ইয়াসির আরাফাত ও আইজাক রবিনকে যৌথভাবে দেওয়া হয়েছিল নোবেল শান্তি পুরস্কার। কিন্তু এরপরই ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, ফিলিস্তিনে শান্তি প্রতিষ্ঠার দায়ে শান্তিবিরোধী উগ্রবাদী ইহুদিদের হাতে মরতে হলো ইসরাইলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আইজাক রবিনকে এবং উগ্রবাদী ফিলিস্তিনিরা শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার জন্য কাঠগড়ায় তুলল ইয়াসির আরাফাতকে। অসলো চুক্তি পুরোপুরি কার্যকর করে যেতে পারলেন না তারা দুজনেই। এমন আবহে ফিলিস্তিনে ধর্মকে হাতিয়ার করে শক্তিশালী হয়ে ওঠে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। ২০০৭ সালে তারা গাজায় ক্ষমতাসীন হতে সমর্থ হয়। কিন্তু ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল শুধু টিকেই থাকল না, উত্তরোত্তর শক্তিশালী রাষ্ট্র হয়ে পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে দিলেও ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল।