শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো রাহুমুক্ত করার দায়িত্ব কে নেবে?

যুগান্তর একেএম শাহনাওয়াজ প্রকাশিত: ২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:৫০

এগারো শতকের মাঝপর্ব থেকে শুরু করে বারো শতকজুড়ে বাংলার শাসন ক্ষমতায় ছিলেন দক্ষিণ ভারতের কর্নাটক থেকে আসা ব্রাহ্মণ সেন শাসকরা। বৌদ্ধ পাল রাজাদের অধীনে সেনাবাহিনীতে চাকরি করতে এসেছিলেন সেনরা। শেষ দিকের পাল রাজাদের দুর্বলতার সুযোগে তারা সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে বাংলার রাজক্ষমতা কেড়ে নেন। অন্যায়ভাবে রাজসিংহাসন দখল করায় শুরু থেকেই শাসকরা ভীত ছিলেন গণমানুষকে নিয়ে। প্রতিবাদী বাঙালি প্রতিরোধ গড়ে তোলে কিনা এ দুশ্চিন্তা তাদের পেয়ে বসে। বাঙালিকে হীনবল করে দেওয়ার জন্য সমাজকে চার বর্ণে বিভাজন করে ফেলেন। সাধারণ বাঙালিকে কোণঠাসা করে ফেলেন শূদ্র অভিধা দিয়ে। সব ধরনের অধিকারবঞ্চিত করেন শূদ্রদের। অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করেও স্বস্তি পাননি শাসকগোষ্ঠী। বুঝেছিলেন গৌরবময় ঐতিহ্য থেকেই প্রতিবাদের শক্তি খুঁজে নেবে বাঙালি। তাই ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষকে শিক্ষাবিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছেন সেন রাজারা। প্রথমে সংস্কৃত ভাষায় লেখা ধর্মগ্রন্থ পাঠ শূদ্রদের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে ধর্মগ্রন্থ বাংলায় অনুবাদ করার ক্ষেত্রেও আরোপ করা হয় বিধিনিষেধ। চতুষ্পাঠী ও উচ্চশিক্ষা কেন্দ্র টোলে শূদ্রের অধিকার নিষিদ্ধ হয়। অর্থাৎ শাসকগোষ্ঠী ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছিলেন জাতিকে। এভাবে অন্ধত্বের পর্দা টানিয়ে নিশ্চিন্তে শাসন করতে চেয়েছিলেন শাসকরা। কিন্তু এতে করে শেষ রক্ষা হয়নি। বিক্ষুব্ধ বাঙালি বিদেশি মুসলমান আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেনি নিজ ধর্মের শাসকদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায়।


অতঃপর সুলতানি ও মোগল শাসন মিলিয়ে প্রায় ছয়শ বছর মুসলমান শাসন অব্যাহত ছিল। এ বিদেশি শাসকরা কর্ম ভূমিকায় যেন এদেশি হয়ে গিয়েছিলেন। সবার জন্য শিক্ষা গ্রহণ অবারিত করে দিয়েছিলেন। অর্থনৈতিক অধিকারও ফিরে পেয়েছিল সাধারণ মানুষ। শিক্ষা অবারিত ছিল বলেই বাংলাভাষা ও সাহিত্যের বিকাশ ঘটে মধ্যযুগে। দেশের সমৃদ্ধিও উচ্চতায় ওঠে। ঔপনিবেশিক শাসন যুগেও বাঙালি শিক্ষার অধিকার থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল না। কিন্তু নতুন করে সংকট তৈরি হয় পাকিস্তানি শাসকদের সময়। শোষক চরিত্র থাকায় পশ্চিমা শাসকরা বাঙালিকে ঐতিহ্যবিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছে। তাই চেয়েছে বাংলাভাষা ও সাহিত্যচর্চা বিচ্ছিন্ন করতে। বাংলা বাতিল করে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রাণান্ত চেষ্টা ছিল এ দৃষ্টিভঙ্গিরই প্রকাশ। একই ধারাবাহিকতায় ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিচ্ছিন্ন করার নানা কূটকৌশল আরোপ করতে চেয়েছে। প্রতিবাদ করেছে বাংলার মানুষ। ভাষা আন্দোলন ছিল এরই বহিঃপ্রকাশ।


মুক্তিযুদ্ধ-উত্তর বাংলাদেশের শাসকরা ভিনদেশি না হয়েও নিজেদের শাসন নিষ্কণ্টক রাখতে বাঙালিকে ঐতিহ্য-বিচ্ছিন্ন রাখতে চেয়েছে যেন। তাই নানামুখী শিক্ষা বহাল রেখে বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যচর্চাকে দুর্বল করার চেষ্টা করেছে। ক্ষমতাবানরা নিজ সন্তানদের নিরাপদ দূরত্বে রেখে দেশের শিক্ষাকাঠামো দুর্বল করেছে ক্রমাগত। গোলমেলে কারিকুলাম চাপিয়ে দিতে চেয়েছে বারবার। রাজনীতি চর্চার নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্রমে দুর্বল করে ফেলতে চেয়েছে। ফলে একটি লাগসই শিক্ষানীতি কার্যকর হয়নি এ দেশে। নানা নিরীক্ষায় আমাদের শিক্ষা কাঠামো ক্রমাগতভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে। তাই স্বাধীনতা-উত্তরকাল থেকে সবচেয়ে কম গুরুত্ব পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এর ব্যবস্থাপনা। সবকিছু রাজনীতি দিয়ে দেখতে গিয়ে উচ্চ শিক্ষাঙ্গন বিপজ্জনক অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও