ক্রীড়ায় বিসিবি মডেল, নাকি অন্য কিছু
বেশ ক'মাস পর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ঢুঁ মারলাম একটা অনুষ্ঠানের ফাঁকে। মাঠে পা রাখতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। গ্যালারিতে ভাঙা চেয়ারের স্তূপ। এখানে-সেখানে এলোমেলোভাবে পড়ে আছে কিছু নির্মাণ সামগ্রী। অনেকদিন অব্যবহৃত থাকায় ড্রেসিং রুমে ধুলোর আস্তরণ।
লাল রংয়ের দেয়ালের একটা বক্স আছে পশ্চিম গ্যালারির ঠিক পাশেই। একটা সময় এটা ক্রিকেটের প্রেসবক্স হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এরপর কী কাজে লাগানো হয়েছে সঙ্গে থাকা সতীর্থ, সহকর্মী কেউ বলতে পারেননি।
ঠিক এই রকম একটা বক্স আছে ইংল্যান্ডের ওল্ড ট্রাফোর্ড ক্রিকেট মাঠে। যা এখন সম্ভবত হোটেলে রূপ দেওয়া হয়েছে। এর পাশের গ্যালারিকে ল্যাংকাশায়ার কাউন্টি কর্তৃপক্ষ ভালোবেসে নাম দিয়েছে রেড রোজ স্ট্যান্ড। মাঠটিতে ঢুকলেই সবার আগে চোখ চলে যায় এই লাল বক্সে।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের লাল বক্সও হতে পারতো এইরকম কিছু একটা। কিন্তু এখানে চোখ রাখলে যে কেউ বুঝতে পারবে, ভেতরে তৈরি হয়েছে আবর্জনার ভাগাড়। অথচ এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। প্রায় আড়াই বছর আগে এই মাঠের সংস্কার শুরু হয়েছে। বাজেট ছাড়িয়ে গেছে এরই মধ্যে শত কোটি টাকা। কিন্তু মাঠ, গ্যালারি কোনোকিছুরই সংস্কার হয়নি। কেন? পাশ থেকে একজন ফোড়ন কেটে বললেন মন্ত্রী চাননি, তাই কাজ এগোয়নি।
কথাটার সত্যাসত্য তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু একটা বিষয় বুকের ভেতর খচ করে উঠেছে। আরে তাই তো, বাংলাদেশের সদ্য সাবেক হওয়া যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী তার মেয়াদ কালের প্রায় অর্ধেক সময়ই কাটিয়ে দিয়েছেন দেশের এক নম্বর জাতীয় স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে। কিন্তু কাজটা শেষ করতে পারেননি। কিংবা হয়তো শেষ করতেই চাননি।
এসব ভেবে ভেবে যখন আনমনা হয়ে যাচ্ছিলাম দেশের ক্রীড়াঙ্গনে তখন তুমুল আলোচনা নতুন ক্রীড়ামন্ত্রীকে ঘিরে। প্রতিবার যখন মন্ত্রিপরিষদ গঠিত হয়, ক্রীড়াঙ্গনে একটা ভয় কাজ করে, না জানি এবার কার হাতে পড়ে দেশের খেলাধুলার গুরুভার। সেই সাদেক হোসেন খোকার পর ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত কেউ ক্রীড়া মন্ত্রী হননি। মন্ত্রীই-বা-বলছি কেন, ৩৪ বছর তো বাংলাদেশ কোনো ক্রীড়া মন্ত্রীই দেখেনি।
দেশ সামরিক শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার পর প্রতিমন্ত্রীরাই ক্রীড়াঙ্গনের দায়িত্ব সামলেছেন। অনেকদিন পর বাংলাদেশ এবার ক্রীড়ায় পূর্ণমন্ত্রী পেয়েছে।
শুধু তাই নয়। এই পদে এমন একজন এসেছেন যিনি সরাসরি এই অঙ্গনেরই মানুষ। অন্যদের যেমন বুঝতে বুঝতে মেয়াদ কালের অর্ধেক চলে গেছে, বাকি অর্ধেক হয় তারা নানা জায়গায় স্টেডিয়াম নির্মাণ করেছেন অথবা বর্তমান কোনো স্টেডিয়ামের সংস্কার করেছেন, নাজমুল হাসান পাপনের ক্ষেত্রে তেমনটা হওয়ার সুযোগ কম। চাইলে তিনি প্রথমদিন থেকেই কাজ শুরু করে দিতে পারেন।