নতুন আয়কর আইন সহজ কিন্তু প্রকৃতই সহজ কি
বাংলাদেশের কর-জিডিপি হার অন্যান্য দেশের তুলনায় কম (৮ দশমিক ৯ শতাংশ) কেন, এ কথা সর্বত্র রেফার করা হয়। পরিসংখ্যানও রয়েছে যেখানে দেখা যায় আফগানিস্তানে এ হার ৯ দশমিক ৩, শ্রীলংকায় ১১ দশমিক ৫, পাকিস্তানে ১১ দশমিক ৮, ভারতে ১৫ দশমিক ১ ও নেপালে ১৮ দশমিক ১ শতাংশ। করদাতারা বলেন, করহার অনেক বেশি, তার ওপরে করের ওপর কর তো রয়েছেই। কেউ বলেন, যারা কর দিচ্ছে তাদেরকেই বোঝা চাপানো হচ্ছে, কর নেটওয়ার্ক বাড়ছে না। রাজস্ব কর্মকর্তারা বলেন, করদাতা কর প্রদানে অনিচ্ছুক, তাই কর-জিডিপি হার কম। বাংলাদেশে করপোরেট করহারও সর্বাধিক। আবার করপোরেট করহার কম, কিন্তু কর-জিডিপি বেশি—এ উদাহরণও রয়েছে। দেখা যায়, সিঙ্গাপুরের ব্যক্তি ও করপোরেট করহার অনেক কম; মাত্র ১৬ শতাংশ, কিন্তু কর-জিডিপি হার ৩০ শতাংশ।
করপোরেট করহারের প্রশ্নে অনেকে বলেন জার্মানিতে ব্যক্তি করহার প্রায় ৫৪ শতাংশ, কোনো কোনো দেশে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যক্তি করহার রয়েছে। তবে সেখানে ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কনট্রিবিউশন রয়েছে। বাংলাদেশে এটি নেই, তাই করদাতারা কর প্রদানে উৎসাহী হন না। অন্যদিকে বাংলাদেশে বর্তমানে প্রত্যক্ষ কর যেভাবে নেয়া হচ্ছে যা মূলত পরোক্ষ করে পরিণত হচ্ছে, এটা একটা বড় সমস্যা। এ কারণে করপোরেট করহার ক্ষেত্র বিশেষে এমন পর্যায়ে দাঁড়ায় যা বহন করা খুবই দুঃসাধ্য। অর্থাৎ এত উচ্চ হারে কর প্রদান করে একটি কোম্পানির টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব। তাই কর কাঠামোয় প্রত্যক্ষ করের অবদান বাড়াতে হলে এ বিষয়গুলো চিন্তা করা দরকার।
তাহলে সমস্যাটা কোথায়। এসব নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল অনেক দিক থেকেই। সব দিক বিবেচনায় নিয়ে নতুন কর আইন ২০২৩ সহজ করে প্রণয়ন করা হয়েছে, যাতে করদাতা সহজে কর প্রদান করতে পারেন। কিন্তু এ সহজ আইন কতটা সহজ সেটা একটু আলোচনা করা যাক।
নতুন আয়কর আইন (আইটিএ) ২০২৩ বাংলাদেশের সংসদ কর্তৃক গত ২২ জুন অনুমোদিত হয় যা ১ জুলাই ২০২৩ থেকে কার্যকর হয়েছে। করের ভিত্তি প্রসারিত করা এবং কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে এখন কর কর্মকর্তারা অনেক বেশি সজাগ। আইনটিতে ২৫টি অধ্যায়, ৩৪৫টি সেকশন ও আটটি তফসিল রয়েছে। একটি একক পৃষ্ঠার রিটার্ন তৈরি করা হয়েছে যার মাধ্যমে যারা জিরো রিটার্ন ফাইল করবেন তারা নতুন এক পৃষ্ঠার রিটার্ন ফর্ম সহজে ব্যবহার করতে পারবেন। তবে কর-প্রফেশনালদের মতে, অনেকটা তড়িঘড়ি করেই অর্থাৎ আলোচনার তেমন সুযোগ না দিয়ে আইনটি পাস করা হয়েছে, আরো বেশি আলোচনা হলে করদাতাদের বুঝতে সুবিধা হতো।