আজ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন দেশের জনগণ। কারণ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচনের ওপর নির্ভর করছে দেশের অর্থনীতি। নির্বাচন-উত্তর অর্থনীতি কেমন যাবে সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তবে এটা নির্ভর করছে নির্বাচন কতটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে তার ওপর। ভোটার উপস্থিতি ৪০-৫০ শতাংশ যা কিছুই নির্বাচন কমিশন দেখাক না কেন, সেটা খুব একটা কাজে দেবে তা নয়। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে। কারণ হচ্ছে, দেশের একটি বড় রাজনৈতিক দল বা প্রধান বিরোধী দল এবং তাদের জোটের মিত্ররা নির্বাচনে নেই। প্রধান বিরোধী দল এবং তাদের জোটের মিত্রদের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষের বড় একটা অংশের কাছে যেমন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না, তেমনি পাবে না বিদেশিদের কাছেও। সামনের দিনগুলোতে ইনক্লুসিভ ইলেকশন নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে। আবার এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শ্রম অধিকার ইত্যাদি বিষয়।
বাংলাদেশ অতীতে যথেষ্ট বৈদেশিক ঋণ পেয়েছে, সেটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। কারণ, সেটা অতীতের ব্যাপার। সামনে আমরা কী পরিমাণ বৈদেশিক ঋণ পাব, তা নিয়ে একটা শঙ্কা রয়েছে। চীন বাংলাদেশকে কী পরিমাণ ঋণ দেবে বা ভারত কী পরিমাণ ঋণ দেবে বা আদৌ দেবে কিনা, সেটা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন কী ধরনের অবস্থান গ্রহণ করে, তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। দেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শ্রম অধিকার ইস্যু নিয়ে তারা কী ধরনের অবস্থান নেয়, তার ওপর নির্ভর করছে সবকিছু। কারণ এসব ইস্যুর ওপর নির্ভর করছে দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ বা ঋণ পাওয়ার বিষয়টি। তবে বাংলাদেশ ইতঃপূর্বে অনেক বেশি ঋণ নিয়ে ফেলেছে। এগুলো সুদে-আসলে ফেরত দিতে হলে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ ঋণ চাইলেও সেটা পাওয়া সহজ হবে না; কারণ, ঋণ সুদে-আসলে ফেরত দেওয়ার সক্ষমতা কমে যাচ্ছে বাংলাদেশের। ইতোমধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি ঋণ সুদ-আসলে ফেরত দেওয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ; যার কারণে আমাদের ব্যালেন্স অব পেমেন্টস নেগেটিভ টেরিটরিতে চলে গেছে। যেটা এক সময় সারপ্লাস ছিল কয়েক বছর আগেও, সেটাই এখন ঋণাত্মক অবস্থানে রয়েছে। এটি বাংলাদেশের জন্য হুমকিস্বরূপ।
বৈদেশিক ঋণ আগের তুলনায় বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের রপ্তানি, রেমিট্যান্স, এফডিআই (ফরেন ডাইরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট) মিলে যে ইনকাম হয়, তার থেকে ঋণের পরিমাণ বার্ষিক হিসাব করলে বেশি হয়ে যাচ্ছে। আর এ কারণে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। এটাকে ২০ বিলিয়ন প্লাস বা ২৫ বিলিয়ন প্লাস ডলারে ধরে রাখা কঠিন হয়ে যেতে পারে। দেনা যত বাড়বে, রিজার্ভের পরিমাণ ততই কমতে থাকবে। ইতোমধ্যে আমাদের কিছু দেনা পেন্ডিং আছে। আমরা সময়মতো দিতে পারিনি। কিন্তু আগে হোক পরে হোক, সেগুলো তো দিতেই হবে। সেটা নিয়ে সময় বাড়িয়ে লাভ নেই। বরং সময় নিলে সেটা সুদ-আসলে বাড়তেই থাকবে। এখন আমরা বাইরে থেকে বিদ্যুৎ আনছি বিদেশি মুদ্রায়। আমেরিকান কোম্পানি শেভরন থেকে যে গ্যাস কিনছি, তার মূল্য পরিশোধ করছি আমাদের স্থানীয় মুদ্রায়। কিন্তু স্থানীয় মুদ্রায় দিলে কী হবে, তারা সেটা ডলারে কনভার্ট করে নিয়ে যাচ্ছে।