কুইক লিঙ্ক : মুজিব বর্ষ | করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব | প্রিয় স্টোর

হুন্ডিতে পুঁজি পাচার না ঠেকিয়ে বাজারের হাতে ডলারের দাম ছাড়লেই সমাধান?

বণিক বার্তা ড. মইনুল ইসলাম প্রকাশিত: ০৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০৮:৫০

দেশের দুজন খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর ও ড. জাহিদ হোসেন বেশ কিছুদিন ধরেই ডলারের দাম নির্ধারণ বাজারের হাতে ছেড়ে দেয়ার জন্য ওকালতি করে চলেছেন। তাদের মত হলো, ডলারের দাম নির্ধারণ বাজারের হাতে ছেড়ে দিলে কিছুদিন ডলারের দাম বেড়ে একটা স্থিতিশীল পর্যায়ে এসে একক দামে ডলার বিক্রি হবে। এরপর হুন্ডিওয়ালারা ডলারের যে বেশি দাম দিচ্ছে সে সমস্যা নাকি আর থাকবে না। আমি তাদের এ মতকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি, কারণ তারা বাস্তবসম্মত বিশ্লেষণ না করেই এ মতামত ব্যক্ত করেছেন। হুন্ডি প্রক্রিয়ায় দেশ থেকে বিদেশে পুঁজি পাচারের চাহিদা-কাঠামো সম্পর্কে তারা যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন না বলেই সমস্যার সহজ সমাধান খুঁজে পাওয়ার দাবি করছেন বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আমি মনে করি, পুঁজি পাচারের জন্য ডলারের চাহিদাকারীদের দমন না করে শুধু ডলারের দাম বাজারের হাতে ছেড়ে দিলে ডলারের দাম বাজারে যতই বাড়বে তার চেয়ে ৫-৬-৭ টাকা বেশি দাম দিয়ে হুন্ডিওয়ালারা প্রবাসীদের কাছ থেকে বিদেশে ডলার কিনে নেবে। কারণ পুঁজি পাচারকারীদের কাছে তাদের অর্থ বিদেশে পাচার করাই মুখ্য উদ্দেশ্য। অতএব বাজারে ডলারের দামের চেয়ে হুন্ডিতে দাম কত বেশি সেটি তাদের বিবেচ্য নয়। আইনি ঝামেলা ছাড়া নিরাপদে যেহেতু পাচারকারীরা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার করতে পারে তাই হুন্ডিওয়ালার কাছ থেকে তারা বেশি দামে ডলার কিনতে মোটেও অনাগ্রহী হবে না। এর মানে, বাজারে ডলারের দাম বাড়তে থাকলেও হুন্ডি ব্যবস্থায় পুঁজি পাচার অব্যাহত থাকবে, বাজারে ডলারের একক দাম নির্ধারিত হবে না।


২০২৩ সালের ১৩ জুলাই ব্যুরো অব ম্যানপাওয়ার এক্সপোর্ট অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের (বিএমইটি) বরাত দিয়ে দেশের পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশ হয়েছে যে বাংলাদেশের ১ কোটি ৫৫ লাখ অভিবাসী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করছেন ও কর্মরত রয়েছেন। তারা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার ফরমাল চ্যানেলে দেশে পরিবারের সদস্যদের কাছে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। কিছুদিন আগে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, প্রায় অর্ধেক রেমিট্যান্স এখন হুন্ডি পদ্ধতিতে দেশে আসছে। আমি মনে করি, বাংলাদেশের সিংহভাগ রেমিট্যান্স প্রেরকরা হুন্ডি পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। অতএব ২১-২২ বিলিয়ন ডলার যদি ফরমাল চ্যানেলে দেশে রেমিট্যান্স আসে তাহলে কমপক্ষে আরো ২১-২২ বিলিয়ন ডলার বা তার চেয়েও বেশি রেমিট্যান্স (টাকার আকারে) হুন্ডি পদ্ধতিতে দেশের অর্থনীতিতে ঢুকছে। দেশের বেশির ভাগ প্রবাসী হুন্ডি পদ্ধতিতে রেমিট্যান্স প্রেরণ করায় প্রমাণিত হচ্ছে যে প্রবাসীদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে হুন্ডি পদ্ধতির জনপ্রিয়তা ক্রমবর্ধমান। এক্ষেত্রে শুধু দেশপ্রেমের ধুয়া তুলে তাদের এ ক্রমবর্ধমান আগ্রহকে সহজে দমন করা যাবে না। ফরমাল চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর জন্য সরকার আগে ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা প্রদান করত, সম্প্রতি এ প্রণোদনাকে ৫ শতাংশে বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ সত্ত্বেও প্রবাসীদের ফরমাল চ্যানেলগুলো ব্যবহারে যথেষ্ট উৎসাহিত করা যাবে কিনা তা দেখার বিষয়। কারণ হুন্ডিওয়ালারাও ডলার ক্রয়ের সময় ডলারের দাম আরো বাড়িয়ে দিয়ে হুন্ডির আকর্ষণ ধরে রাখার চেষ্টা করবে। গত আগস্টে আগের বছরের একই মাসের চেয়ে ২১ শতাংশ কম রেমিট্যান্স এসেছে ফরমাল চ্যানেলে, সেপ্টেম্বরে মাত্র ১৩৪ দশমিক ৩৬ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। অথচ দুই বছর ধরে প্রতি মাসে লক্ষাধিক বাংলাদেশী অভিবাসী বিদেশে যাচ্ছেন বলে খবর দিয়েছে এ সম্পর্কীয় সরকারি সংস্থা ব্যুরো অব ম্যানপাওয়ার এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং (বিএমইটি)। অবশ্য অক্টোবরে ১৯৭ দশমিক ৭৫ কোটি, নভেম্বরে ১৯৩ কোটি ও ডিসেম্বরে ১৯৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স ফরমাল চ্যানেলে দেশে এসেছে। তবুও আমার দৃঢ় অভিমত হলো, হুন্ডি ব্যবস্থার চাহিদা কাঠামোতে অবস্থানকারী পুঁজি পাচারকারীদের প্রতি অবিলম্বে সরকারের কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।


বহুদিন ধরেই আমি বলে চলেছি, হুন্ডি ব্যবস্থাকে কঠোরভাবে দমন না করলে ফরমাল চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহকে বাড়ানো কঠিন থেকে যাবে। কারণ হুন্ডি ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশ থেকে বিদেশে পুঁজি পাচার দেশের ‘এক নম্বর সমস্যায়’ পরিণত হয়েছে। সরকারের নীতিনির্ধারকদের অবিলম্বে এ সত্য মেনে নেয়া উচিত। এর মানে দেশের পরিবারের সদস্যদের কাছে রেমিট্যান্স প্রেরণেচ্ছু প্রবাসীদের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রাগুলো (প্রধানত ডলার) বিদেশের হুন্ডিওয়ালাদের এজেন্টের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। এর প্রধান কারণ ডলারপ্রতি তারা বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ন্ত্রিত বাজারের ডলারের দামের চেয়ে ৫-৭ টাকা বেশি দাম পাচ্ছেন। ফলে তাদের পরিবারের সদস্যরা হুন্ডিওয়ালাদের এ দেশীয় এজেন্টের মাধ্যমে ওই বর্ধিত দামে প্রেরিত রেমিট্যান্সের সমপরিমাণ টাকা অতিদ্রুত পেয়ে যাচ্ছেন কোনো ঝুটঝামেলা ছাড়া। হুন্ডি পদ্ধতিতে কোনো কাগজপত্র স্বাক্ষর করার প্রয়োজন হয় না। হুন্ডিওয়ালাদের স্থানীয় এজেন্ট প্রায়ই রেমিট্যান্স প্রেরক এবং রেমিট্যান্স গ্রহীতাদের পূর্বপরিচিত থাকার কারণে এসব লেনদেনে ঠকে যাওয়ার আশঙ্কাও তেমন থাকে না। আরো যেটা গুরুত্বপূর্ণ তাহলো, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পরিবারের বাইরের কেউ জানতেও পারে না যে পরিবারে রেমিট্যান্স এসেছে। টেলিফোনে খবর পেয়ে যথাস্থানে গিয়ে বা নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা পেয়েই রেমিট্যান্স গ্রহীতারা যথাসম্ভব দ্রুত তা নিকটবর্তী ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে আমানত হিসেবে জমা করে দেন, তাই আগের দিনের মতো চোর-ডাকাত-মস্তানদের আক্রমণের শিকার হতে হয় না পরিবারকে। যেহেতু বিশ্বস্ততাই হুন্ডি ব্যবসার সাফল্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, তাই সাধারণত রেমিট্যান্সের টাকা মার যায় না, লেনদেনের গোপনীয়তাও রক্ষা করা হয় সযতনে। ওপরে প্রবাসীদের জন্য হুন্ডি পদ্ধতির সাধারণ সুবিধাগুলোর যে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা প্রদত্ত হলো তার সঙ্গে ফরমাল ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণ কি পাল্লা দিতে পারবে?

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও