 
                    
                    ব্যক্তি ও দলের চেয়ে দেশটা গুরুত্ব পাক
কী হয়, কী হতে পারে ইত্যাদি প্রশ্ন অধিকাংশ নাগরিকের মনে। উদ্বিগ্ন হয়ে কৌতূহল নিয়ে তারা তাকিয়ে আছে ৭ জানুয়ারির দিকে। এবারের নির্বাচনে উত্তাপ নেই। প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে জোরালো তোড়জোড় নেই। সহিংসতা যা-ও আছে, সেটাও অন্যান্যবারের মতো নয়। কেউ কেউ বলেন, এই সহিংসতা নিজেদের সঙ্গে নিজেদের। বৃহৎ দল হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে আওয়ামী লীগ। এই দলেরই একটা অংশ আবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হিসেবে উপস্থাপন করা এবং দলের সবাইকে মনোনয়ন না দিতে পারায় অমনোনীতদের সন্তুষ্ট করার জন্য স্বতন্ত্র বিধির প্রবর্তন করেছে এবার আওয়ামী লীগ, যা কখনোই হতে দেখা যায়নি। এটাকে আওয়ামী লীগের বোকামিও বলছে কেউ কেউ। প্রতিদ্বন্দ্বী কখনো বন্ধুসুলভ হয় না, তা-ও আবার ক্ষমতাকেন্দ্রিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা।
ইতিহাসে এমন দৃষ্টান্ত নেই যে, রাজনৈতিক সংগঠনের জন্য কেউ তার স্বার্থের জায়গা থেকে সরে এসেছে। দলের অন্য কারোর হাতে নিজের ক্ষমতার মন্ত্র তুলে দিয়েছে। উপরন্তু রাজনীতিতে বহুল প্রচলিত একটি আচরণ অন্তর্দ্বন্দ্ব; যে আচরণে হত্যা, খুনও সংঘটিত হতে দেখা গেছে। গণধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনাও ঘটে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হল দখল, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, টেন্ডারবাজি ইত্যাদিতে একই রাজনৈতিক দলে অন্তর্দ্বন্দ্ব নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। রাজনীতি মানে যেখানে ব্যক্তিস্বার্থে ক্ষমতা ও প্রভাব বিস্তারের উন্মাদনা, সেখানে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কে কতটা সহনশীলতা, উদারতা ও নিঃস্বার্থপরতার পরিচয় দিতে পারে বা পারবে, প্রশ্ন রয়ে যায়। শঙ্কা, আতঙ্ক তো থাকেই। বলতে দ্বিধা নেই, এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র বিধিতে সাধারণ জনগণের কৌতূহল বেশি যেমন, তেমনি আতঙ্কও রয়েছে।
পোস্টার কোথাও কোথাও ঝুলে আছে সড়কের ওপরে। অথচ পাল্টাপাল্টি মিছিল নেই, প্রচারণা নেই। নেই পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। তবে কোথাও কোথাও তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস রয়েছে। স্থানীয় জনগণ এবার প্রতীকের চেয়ে ব্যক্তিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে প্রচারমাধ্যমে জানা যায়। বিশেষ করে এবার যাঁরা আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাননি, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের রাজনৈতিক তৎপরতা ও জনসংযোগ অপেক্ষাকৃত বেশি বলে স্থানীয় জনগণ মনে করছেন। বিএনপির ভোট তারা পেতে পারেন বলে কেউ কেউ ধারণা করছেন। আবার বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে ক্রমেই তার অস্তিত্বকে ম্লান করছে বলে অনেকেরই ধারণা। নির্বাচন ছাড়া কখনোই একটি রাজনৈতিক দলের জনপ্রিয়তা যাচাই যেমন সম্ভব নয়, ঠিক তেমনি দলটির সঙ্গে জনসংযোগের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাও সম্ভব হয় না। জনসংযোগ ও জনসমর্থন ছাড়া রাজনৈতিক কার্যক্রম বাস্তবায়নের চিন্তাটা শূন্যে ওড়া ঘুড়ির মতো। সুতোয় মোড়ানো একটা নাটাই ছাড়া যার কোনো অবলম্বন শেষ অবধি থাকে না। অনেকেরই অভিমত, বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আরও শক্ত অবস্থানে যেতে পারত।
৭ জানুয়ারিতে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে না গেলে বাংলাদেশের জন্য তা ভালো হবে না—এমনই আভাস একজন নির্বাচন কমিশনারের। সম্প্রতি রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে নির্বাচন উপলক্ষে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে ইসি আনিছুর রহমান বলেছেন, ‘ভোট অবাধ, সুষ্ঠু না হলে রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়ে যাবে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘উদ্দেশ্য একটাই, সেটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করা। যদি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না করতে পারি, কোনো কারণে যদি আমরা ব্যর্থ হই, তাহলে আমাদের রাষ্ট্র নিজেই ব্যর্থ রাষ্ট্র হয়ে যাবে। আমরা সেটা চাইব না। কারণ আমরা সারা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাব।’ এমন মন্তব্য জনগণকে সংশয়ে ফেলে। অন্য ধরনের ইঙ্গিত দেয়। একজন নির্বাচন কমিশনার এভাবে বক্তব্য দিতে পারেন কি না, সেটা নিয়ে নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার ভাষা ও কৌশল হতে হবে ভিন্ন।
 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                 
                    
                -68f7ebaa39de2-6903ee942e8e5.jpg)