যুক্তরাজ্যের বাজারে রফতানি বাড়াতে সহায়ক হবে ডিসিটিএস
যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহৎ রফতানি গন্তব্য। ২০২২-২৩ অর্থবছরে যুক্তরাজ্যে প্রায় ৪৮৬টি পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। এর আর্থিক মূল্যমান ৫৩০ কোটি ডলার যা বাংলাদেশের মোট রফতানির ৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ। অবশ্য এ রফতানির ৯৫ শতাংশই তৈরি পোশাক খাতের। অন্যদিকে যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশের আমদানি তার মোট আমদানির প্রায় শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ (২০২১) এবং সে হিসাবে বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যের ৩৮তম বৃহৎ আমদানি গন্তব্য। যুক্তরাজ্য থেকে ২০২১ সালে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ বা এফডিআই এসেছে প্রায় এক বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। বলাই বাহুল্য, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক রয়েছে, এ সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির সুযোগ আমরা নিতে পারি।
তৈরি পোশাকের পাশাপাশি আরো কিছু পণ্য বাংলাদেশ থেকে আমদানি করে থাকে যুক্তরাজ্য। সেগুলো হলো কৃষি এবং প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য, চামড়াজাত পাদুকা, বাইসাইকেল, আইটি, ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি। তবে তার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য নয়। তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভরতা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে এনে রফতানি বহুমুখীকরণে বাংলাদেশ প্রচেষ্টা নিলেও তা এ পর্যন্ত কার্যকরী হয়নি।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে যুক্তরাজ্য পূর্বের জিএসপি সুবিধার পরিবর্তে উন্নয়নশীল দেশের জন্য ট্রেডিং স্কিম বা ডিসিটিএস নামক একটি নতুন সুবিধা গত বছরের ১৯ জুন থেকে বাস্তবায়ন করছে। এটি মূলত যুক্তরাজ্যের বাজারে উন্নয়নশীল দেশগুলোর স্বল্পশুল্কে প্রবেশাধিকারের জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যের বাজারের মাত্র শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ দখল করে ৫০তম অবস্থানে আছে। বাংলাদেশ এ বাজারে কীভাবে তার বাণিজ্য হিস্যা বাড়িয়ে অন্তত ২০তম অবস্থানে আসতে পারে, সে ব্যাপারে প্রচেষ্টা নেয়া দরকার এবং এদিক থেকে উন্নয়নশীল দেশের জন্য এ নতুন ট্রেডিং স্কিম বেশ কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে। ইউকের বাজারে বাংলাদেশের রফতানি অন্তত দ্বিগুণ করা সম্ভব এবং এলডিসিতে উত্তরণ-পরবর্তী সময়েও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধি অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য ডিসিটিএস কার্যকর অবদান রাখতে পারে।
ডিসিটিএসের অধীনে তিন ধরনের অগ্রাধিকার বা প্রেফারেন্স দেয়া হয়েছে। যেমন কমপ্রিহেনসিভ প্রেফারেন্স (সিপি), এনহান্সড প্রেফারেন্স (ইপি) এবং স্ট্যান্ডার্ড প্রেফারেন্স (এসপি)। কমপ্রিহেনসিভ অগ্রাধিকারে ৪৬টি এলডিসিতে অস্ত্র (আর্মস) বাদে যেকোনো পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়া হয়েছে। এলডিসি হিসেবে উত্তরণের পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশ সিপির আওতায় শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে। এলডিসি-উত্তরণের পর বাংলাদেশ এনহান্সড প্রেফারেন্স বা ইপির আওতায় আসবে। অর্থাৎ এলডিসি-ভুক্ত দেশগুলো যেখানে ২৫ শতাংশ রুলস অব অরিজিন সুবিধা পাবে সেখানে এলডিসি-উত্তরণ পর্যায়ে রুলস অব অরিজিন হবে ৫০ শতাংশ। অন্যদিকে আমাদের সবচেয়ে অধিক রফতানিকারী পণ্য তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে ডাবল ট্রানজিশন অর্থাৎ ওভেন গার্মেন্টসের ক্ষেত্রে স্থানীয় ফ্যাব্রিকসের প্রয়োজন হবে এবং নিট গার্মেন্টের ক্ষেত্রে সুতা স্থানীয়ভাবে তৈরি হতে হবে।