
বিতর্ক না বাড়িয়ে চলাই উত্তম নয় কি?
দুই হাজার তিনশ কোটি টাকার মতো ব্যয় ধরে যে নির্বাচন করা হচ্ছে, তাতে কারা জয়ী হবেন– সে ব্যাপারে কোনো অনিশ্চয়তা নেই। কোনো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই নির্বাচনে। এ ধরনের নির্বাচন অবশ্য এ দেশে নতুন নয়। ক্ষমতায় আসা-যাওয়া করা দুই প্রধান দলের সরকারেরই এমন নির্বাচন করার রেকর্ড রয়েছে। পরবর্তী অভিজ্ঞতা অবশ্য সব ক্ষেত্রে এক রকম হয়নি। তবে সাম্প্রতিককালে বিরোধী দলবিহীন নির্বাচন সেরে শাসন পরিচালনা করে যেতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। ‘অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত’ থাকলে ৭ জানুয়ারির ভোট শেষে গঠিত সরকার আগের মতোই শাসনকার্য পরিচালনা করে যাবে। ইতোমধ্যে তাদের তরফ থেকে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনের মতো এটাও আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। সিংহভাগ অনুগত ভোটারের দেশে ইশতেহার কখনও ভোটের ফলকে প্রভাবিত করেনি। এবার এর প্রভাব নিয়ে আলোচনাও প্রায় অনুপস্থিত।
বিগত নির্বাচনের তুলনায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ব্যয় তিন গুণেরও বেশি হবে কেন, এ আলোচনাও তেমন হচ্ছে না। রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থতার মুখে এর লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনতে চাওয়া সরকারও প্রশ্নটি তুলছে না। ইসিকে সহায়তা জুগিয়ে যাওয়া অবশ্য তার সাংবিধানিক দায়িত্ব। নির্বাচনটিও হচ্ছে সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী। সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় দলীয় সরকারের অধীনে এটি সম্পন্ন করছে ইসি। এমনি ধারার নির্বাচনে ২০১৪ সালে অবশ্য অধিকাংশ আসনেই ভোট করতে হয়নি। প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় বিনা ভোটেই জিতেছিলেন ১৫৩ আসনের এমপি। তাতে একটা লাভ হয়েছিল– নির্বাচন বাবদ ব্যয় কমে গিয়েছিল ইসির। এবার তেমনটি ঘটার কোনো সুযোগ রাখেনি সরকার নিজেই। ক্ষমতাসীন দল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড়ানোর সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে এবার। ‘ডামি’ প্রার্থীও আছেন। এ কারণে অনেকে এটাকে ‘ডামি নির্বাচন’ও বলছেন। তবে যে নামেই ডাকা হোক, এ নির্বাচনে অন্তত শতাধিক আসনে একটা ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতার ব্যবস্থা’ করা হয়েছে। তাতে সংঘাতময় পরিবেশ তৈরি হলেও এখন পর্যন্ত সেটা আছে মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে। বিজিবি ও সেনাবাহিনী মাঠে নামার পর পরিস্থিতির আরও উন্নতি আশা করা হচ্ছে।
ক্ষমতাসীনদের শীর্ষ পর্যায় থেকে যাওয়া নির্দেশনাও বিভিন্ন আসনে ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতার ধরন’ পরিবর্তনে ভূমিকা রাখবে নিশ্চয়। সীমিতভাবে হলেও এক ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টিতে তারা যে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছিলেন; তা শেষ মুহূর্তে যাতে ‘নিজেদের মধ্যকার কলহ’ বেশি বাড়িয়ে না ফেলে, সেদিকে সবিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। এর লক্ষ্য নাকি ছিল কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়িয়ে সেটাকে শতকরা ৫০-এর বেশি করা। সে জন্য আবার নির্বাচনের পরিবেশটা ভোটের দিন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ রাখা জরুরি। নির্বাচন বর্জনকারীদের তৎপরতা ঝিমিয়ে এসেছে বলে সরকারপক্ষে একটা স্বস্তি বিরাজ করছে। ভোটের আগে দেশের বাইরে থেকে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আসবে না বলে তাদের বিশ্বাসও জোরালো। এখন তাদের সব মনোযোগের কেন্দ্রে রয়েছে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করা।