রাজধানীর রাজপথে সমাবেশ, মিছিল, পদযাত্রা নতুন কিছু নয়। আগেও হয়েছে। এখনো হচ্ছে বিভিন্ন ইস্যুতে। কিন্তু গত ২৩ ডিসেম্বর শনিবার সকালে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে যে সমাবেশ ও পরে পদযাত্রা হলো, তা এককথায় অভূতপূর্ব। সমাজের সর্বস্তরের বিভিন্ন পেশার কয়েক হাজার মানুষ সেদিন সমবেত হয়েছিলেন শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা ও বিভিন্ন আকারের ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে। কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের ডাকে ওই সমাবেশ-পদযাত্রা হয়নি। প্রতিবাদী সমাবেশ ও পদযাত্রাটি ছিল সন্ত্রাস-নাশকতার বিরুদ্ধে, শান্তির পক্ষে। প্রতিবাদী মানুষদের প্রধান স্লোগান ছিল ‘নাশকতাকে না’।
২৮ অক্টোবরের পর সারা দেশে যানবাহন ও স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের যে নাশকতা ও সন্ত্রাস চলছে ধারাবাহিকভাবে, তার প্রতিবাদেই ছিল শনিবারের সমাবেশ-পদযাত্রা। পেশাজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বহু সংগঠনের মিলিত উদ্যোগে এ প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন ছাড়াও কিছু প্রতীকী উপস্থাপন পদযাত্রাটিকে আকর্ষণীয় করে তুলেছিল।
সম্প্রতি তেজগাঁও রেলস্টেশনে ঢাকাগামী একটি ট্রেনে আগুন দেওয়ায় তিনটি বগি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। এতে ট্রেনের পাঁচজন যাত্রী পুড়ে মারা যান। তাদের মধ্যে দুজন মা ও শিশু। হতভাগ্য নারী তার শিশুসন্তানটি বুকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলেন এবং ওই অবস্থায় আগুনে দগ্ধ হন। ট্রেন থেকে নামতে পারেননি। শনিবার আগুনে দগ্ধ মা ও শিশুর একটি কালো স্ট্যাচু তৈরি করে রিকশা-ভ্যানে রেখে মিছিলে বহন করা হয়।
তিনজন বয়স্ক পুরুষ তাদের শরীরে আগুনে পোড়ার ক্ষত রং দিয়ে এঁকে স্ট্রেচারে শুয়েছিলেন। আর একজন অগ্নিদগ্ধ মানুষের শরীর সাদা ব্যান্ডেজে মোড়ানো ছিল। তাদের মিছিলের সঙ্গে বহন করে নিয়ে যান স্বাস্থ্যকর্মীরা। এসব প্রতীকী উপস্থাপন অগ্নিসন্ত্রাসের নৃশংসতা ও ভয়াবহতা ফুটিয়ে তোলে।
প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন সংগঠন, ছাত্র, শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, চিকিৎসক, সাংস্কৃতিক কর্মী, অভিনয়শিল্পী, সাংবাদিক, আইনজীবী, নারী সংগঠন, ক্রীড়াবিদ, আলেম-ওলামাসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। মিছিলের শেষপ্রান্তে ছিলেন হিজড়াদের সংগঠনের বেশকিছু সদস্য। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত সুশৃঙ্খল সুসজ্জিত মিছিলটি ছিল সন্ত্রাস-নাশকতার বিরুদ্ধে দেশবাসীর প্রতিবাদের প্রতীক।