আস্থার সংকটে ব্যাংক খাত
বছরজুড়ে ব্যাংকিং খাতের নানা ঘটনা বারবার উঁকি দিয়েছে। তার মধ্যে ব্যাংকের ওপর গ্রাহকের আস্থার ওঠানামা ছিল অন্যতম। অনেক গ্রাহক ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়েছেন। টাকা তোলার হিড়িক পড়ে ব্যাংকের কাউন্টারগুলোতে। বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে বাজারে নগদ টাকা বৃদ্ধি করে। একটা পর্যায়ে আস্থা ফিরে আসে। ব্যাংকের আমানত বেড়ে যায়। কিন্তু এটা টেকসই হয়নি। এমন অবস্থায় ব্যাংকে টাকা রাখবেন নাকি উত্তোলন করবেন, তা নিয়ে দোটানায় পড়েন গ্রাহক। ব্যাংকের টাকা গচ্চা যাবে নাকি ফিরে পাবেন, তা নিয়ে সংশয়ে অনেক গ্রাহক। সর্বশেষ ইসলামি ধারার পাঁচ ব্যাংকের তারল্য নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠিকে কেন্দ্র করে ডিসেম্বরে ফের আস্থার সংকট দেখা দেয়, যা এখনো কাটেনি।
দেশের অধিকাংশ ব্যাংকে তারল্যসংকট রয়েছে। এর মধ্যে, শরিয়াহভিত্তিক পাঁচটি ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংকের দশা একেবারে বেহাল। এসব ব্যাংকে গ্রাহকের আমানতের বিপরীতে নিরাপত্তা হিসেবে সিএলআর এবং এসএলআর রক্ষা করতে পারছে না। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক জরিমানা করায় তা পরিশোধের অবস্থাও নেই। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০ কার্যদিবস জরিমানা শোধের সময় বেঁধে দিয়ে লেনদেন বন্ধের হুমকি দেয়, যা নিয়ে সারা দেশে আতঙ্ক দেখা দেয়। অনেকে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করেন। তবে ব্যাংকগুলোকে পর্যাপ্ত নগদ টাকা সহযোগিতা দিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে আস্থার সংকটের দোলাচলে রয়েছেন অনেক গ্রাহক।
এদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ডলারের সংকটের জেরে খোলাবাজারে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে প্রতি ডলার ১২৯ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়। আবার ডলার কারসাজি করে বিভিন্ন ব্যাংক। এই অভিযোগে ১০টি ব্যাংককে জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি সমালোচনার মাঝেই জনতা ব্যাংকের ‘বিশেষ বিবেচনায়’ বেক্সিমকোকে ২২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নতুন করে আলোচনায় আসে।
অপর দিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পরামর্শে ঋণের সুদের সর্বোচ্চ সীমা তুলে দিয়ে ‘স্মার্ট’ পদ্ধতিতে ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের গড়ের ভিত্তিতে সুদহার নির্ধারণ করা হয়। সংস্থাটির পরামর্শের ভিত্তিতে একই পরিবার থেকে ব্যাংকের পরিচালক তিনজনের বেশি হতে না পারা একটি ভালো দিক। এ ছাড়া খেলাপি কমানো এবং রিজার্ভ গণনা পদ্ধতিতে বিপিএম ৬ ম্যানুয়াল অনুসরণ করায় আইএমএফ ৪৭০ কোটি ঋণের মধ্যে দুটো কিস্তি ছাড় করেছে। এতে রিজার্ভে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।