বোরোর রেকর্ড উৎপাদনে মনোযোগ নিবদ্ধ করা হোক

বণিক বার্তা মো. আবদুল লতিফ মন্ডল প্রকাশিত: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:৪০

রাজধানী ঢাকায় ৭-৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সরকারি গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) বার্ষিক সম্মেলনে বলা হয়েছে, করোনার কারণে নতুন করে দরিদ্র হয়ে পড়েছে ২ দশমিক ৮ মিলিয়ন বা ২৮ লাখ মানুষ। ২০২২ সালের হিসাবে দারিদ্র্য বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা রেখেছে করোনা মহামারী। একই বছরে বৈশ্বিক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি অনেক পরিবারের জীবনযাত্রার ব্যয় সরাসরি বাড়িয়ে দিয়েছে। চলতি বৈশ্বিক মন্দা দারিদ্র্য পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে নিয়ে যেতে পারে। শুধু বৈশ্বিক মন্দার কারণে বাড়তি ৫০ হাজার মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমেছে। এছাড়া জাতীয় নির্বাচন ঘিরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন নিষেধাজ্ঞা দেশের খাদ্যনিরাপত্তাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আগামী মার্চে দেশে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা দেখছেন। ‘জাতীয় নির্বাচন ঘিরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা’ বা অন্য কোনো কারণে নিকট ভবিষ্যতে দেশে সম্ভাব্য খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা বা ‘দুর্ভিক্ষ’ দেখা দেয়ার ফ্যাক্টরগুলোকে দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করতে হবে। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, দেশে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা বা দুর্ভিক্ষের মূল কারণ হলো প্রধান খাদ্যশস্য চাল সরবরাহে স্বল্পতা এবং পণ্যটি সংগ্রহে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার অভাব। আসন্ন বোরো মৌসুমে পণ্যটির রেকর্ড উৎপাদনে কেন মনোযোগ নিবদ্ধ করা দরকার, তা আলোচনা করাই এ নিবন্ধের উদ্দেশ্য। 


খাদ্যের একাধিক উপাদান থাকলেও দেশে খাদ্য বলতে মূলত কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা উপাদান-সমৃদ্ধ চাল তথা চাল থেকে তৈরি ভাতকে বোঝায়। দেশের কমবেশি ৯০ শতাংশ মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত। দেহের মোট ক্যালোরি চাহিদার ৬০-৭০ শতাংশ শর্করা থেকে আসে এবং ভাতের অবদান এখানে সবচেয়ে বেশি। দেশে উৎপাদিত চালের কমবেশি ৫৫ শতাংশ আসে বোরো থেকে। এছাড়া দেশে চালের কমবেশি ৪০ শতাংশ উৎপাদন করে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আমন। বাকিটুকু আসে আউশ থেকে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের দিক থেকে বোরোর আবাদ আমনের চেয়ে অনেকটা কম ঝুঁকিপূর্ণ। বোরোর ফলন আমন ও আউশের চেয়ে ভালো। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৩-এর তথ্য মোতাবেক ২০১৯-২০, ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে যখন বোরো চালের উৎপাদন দাঁড়ায় যথাক্রমে ২ কোটি ১ লাখ ৮১ হাজার, ১ কোটি ৯৮ লাখ ৮৫ হাজার ও ২ কোটি ৯ লাখ ৭৭ হাজার টনে, তখন আমনের উৎপাদন ছিল যথাক্রমে ১ কোটি ৫৫ লাখ, ১ কোটি ৪৪ লাখ ৩৮ হাজার ও ১ কোটি ৪৯ লাখ ৫৮ হাজার টন। বোরোর ভালো ফলন যেমন চাষীদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলে, তেমনি দেশের খাদ্যনিরাপত্তাকে জোরদার করে। 


দেশে খাদ্যলভ্যতার মূল উৎস হলো কৃষি খাতে (শস্য উপখাত, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপখাত এবং বন উপখাত নিয়ে কৃষি খাত গঠিত) উৎপাদিত খাদ্যপণ্য। বিআইডিএসের উপর্যুক্ত সম্মেলনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে খাদ্যনিরাপত্তার চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হলো জলবায়ু পরিবর্তন। জাতিসংঘ গঠিত জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তঃসরকার প্যানেল (আইপিসিসি) বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে ঘোষণা করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বায়ুমণ্ডলীয় তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং সাইক্লোন-ঝড়ের পৌনঃপুনিকতা বৃদ্ধি অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মতো বাংলাদেশের কৃষি খাতের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। হ্রাস পাচ্ছে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হার। ২০০৯-১০ অর্থবছরে কৃষি খাতের ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়ে পরবর্তী এক দশকে গড়ে ৩ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়ায় (অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা ২০১৯-২০)। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৩-এ বলা হয়েছে, ‘২০২০-২১ অর্থবছরে কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ১৭ শতাংশ, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। সাময়িক হিসাব অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ২ দশমিক ৬১ শতাংশ।’ কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হ্রাসের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে শস্য উপখাতের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফসল এবং আমাদের প্রধান খাদ্যশস্য ধান তথা চালের ওপর। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মোতাবেক ২০১৯-২০ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে চাল উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি হার ছিল ১ শতাংশ। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২২ ও ২০২৩-এর তথ্য মোতাবেক চাল উৎপাদনে এ প্রবৃদ্ধি হার দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি হারের (২০২০ সালে ১ দশমিক ৩৭ এবং ২০২১ সালে ১ দশমিক ৩ শতাংশ) চেয়ে কম। দেশে চাল উৎপাদনে বোরো শীর্ষ অবস্থানে থাকায় এটির উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি হারে ঊর্ধ্বগতি দেশের সার্বিক চাল উৎপাদন পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাবে। বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি হারের তুলনায় চাল উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি হার বেশি হলে পণ্যটি আমদানির প্রয়োজন বহুলাংশে কমে আসবে। 


বোরোর উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। স্বল্পমেয়াদি কার্যক্রমগুলোর মধ্যে রয়েছে—এক. আসন্ন মৌসুমে বোরো চাষে জমির পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। গত মৌসুমে ৪৮ লাখ ৫২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয় বলে জানা যায়। এবার কমপক্ষে অতিরিক্ত দুই লাখ হেক্টর জমি বোরো চাষের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি হার বৃদ্ধির জন্য হাইব্রিড জাতের ধান চাষ বাড়াতে হবে। দুই. প্রত্যাশিত এল নিনো ফিরে এসেছে মর্মে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে। বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তেই প্রভাব ফেলবে এল নিনো। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার জন্য ২০২৪ সাল হতে পারে পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণ বছর। বিশ্বের কয়েকটি অঞ্চলের মতো দক্ষিণ এশিয়ায় বৃষ্টিপাত অনেক কমে যাবে বলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ হিসেবে ২০২৪ সালে বাংলাদেশেও অনেক কম বৃষ্টিপাত হতে পারে। যদিও বোরো সেচনির্ভর ফসল, তথাপি বৃষ্টিপাত কমে গেলে সেচের ওপর নির্ভরশীলতা আরো বেড়ে যাবে। এজন্য বোরো চাষে পানি সেচের জন্য ব্যবহৃত বিদ্যুচ্চালিত সেচযন্ত্রগুলোয় নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিলে আবাসিক বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে বোরো চাষের চাহিদা মেটাতে হবে। 

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও