ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসির কাছে আমাদের প্রত্যাশা
সম্প্রতি পৃথিবীজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কিউএস ওয়ার্ল্ড র্যাংকিং ২০২৪-এর তালিকা প্রকাশ হয়েছে। এ তালিকা অনুসারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার ২৮০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝে ১৯তম, এশিয়ার ৮৫৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝে ১৪০তম এবং পৃথিবীর সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ৬০০-৭০০-এর সারিতে। বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম অবস্থানে থাকলেও বিশ্ব র্যাংকিংয়ে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি এবং এ অবস্থান সামনে এগিয়ে নিতে হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা, কাঠামো এবং পরিবেশের আধুনিকায়ন প্রয়োজন।
বিগত কয়েক দশকে বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিকল্পনার ক্ষেত্রে যে বিষয় অন্যতম প্রাধান্য পেয়েছে তা হলো উন্নত বিশ্বের মতো একটি আধুনিক কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা। তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে উন্নত বিশ্বের শিক্ষা ব্যবস্থা কেমন তা আর আমাদের অজানা নয়। বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষার আধুনিকীকরণের প্রসঙ্গ এলে আমরা যখন র্যাংকিংয়ের শীর্ষে থাকা উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক চিত্রটি দেখি, তার সঙ্গে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নানা প্রতিকূলতায় জর্জরিত মলিন ছবি হতাশা জাগায়। নিবিড় সবুজ শান্তিপূর্ণ ক্যাম্পাস, মনোরম শিক্ষা পরিবেশ, সুসজ্জিত ছাত্রাবাস, পরিচ্ছন্ন ক্যাফেটেরিয়া, উৎকৃষ্ট চিকিৎসা ব্যবস্থা, অত্যাধুনিক পাঠাগার ও গবেষণাগার, পর্যাপ্ত আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য, সময়োপযোগী পাঠক্রম, বরেণ্য শিক্ষক, বর্ণিল সংস্কৃতি ইত্যাদি পরিবেষ্টিত একটি আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে নিজেদের তুলনা যেন এক অসম প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়া।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে যদি আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করতে চাই তাহলে আমাদের কী করণীয়? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্যের কাছে আমাদের কী প্রত্যাশা রয়েছে?
২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর মহোদয়ের অনুমোদনক্রমে এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুসারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য প্রাক্তন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে উচ্চ শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা এ নিয়োগে সাধুবাদ জানিয়েছেন। অধ্যাপক মাকসুদ কামালের এ নিয়োগ কোনো অত্যাশ্চর্য সংবাদ নয়, বরং সময়ানুযোগে প্রত্যাশিত একটি সংবাদ ছিল। অধ্যাপক মাকসুদ কামাল শিক্ষক সমাজের প্রতিনিধি ও মুখপাত্র হিসেবে দীর্ঘদিন নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি হিসেবে চারবার ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনবার বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এছাড়া বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব হিসেবে তিনি একাদিক্রমে তিনবার দায়িত্ব পালন করেছেন। শিক্ষক নেতা হিসেবে দীর্ঘকালীন অভিজ্ঞতা ও বিভিন্ন প্লাটফর্মে তার বলিষ্ঠ ভূমিকা তার কৃতিত্ব ও জনপ্রিয়তা উভয়ই প্রমাণ করে। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে তার অভিষেক যে মত নির্বিশেষে সবার সমর্থন ও অভিনন্দনে সিক্ত হয়েছে তা খুবই স্বাভাবিক।
অধ্যাপক মাকসুদ কামাল একজন মেধাবী শিক্ষক ও গবেষক। বিশেষ করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিভিন্ন পর্যায়ে তার গবেষণালব্ধ পরামর্শ তার মেধা ও দেশপ্রেমের স্বাক্ষর হিসেবে বিবেচিত হবে। উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষার পরিবেশের উন্নতির জন্য তার একাগ্র পরিশ্রম ও বিভিন্ন দায়িত্বশীল ভূমিকা আমরা দেখেছি। বিশেষ করে একটি গবেষণাভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় বিনির্মাণে ও বিশ্ব র্যাংকিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান সামনের সারিতে আনার জন্য তিনি বিবিধ ক্যাটাগরিভিত্তিক উদ্যোগ নিয়েছেন। মেধার ভিত্তিতে স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষক নিযুক্তি ও গবেষণার শর্ত পূরণসাপেক্ষে শিক্ষকদের পদোন্নতি; এ দুই বিষয়ে তিনি আপসহীন অবস্থান নেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নিঃসন্দেহে এটি সুদূরপ্রসারী ফলাফল বহন করবে। এছাড়া ইনডেক্স জার্নালে গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করলে শিক্ষকদের জন্য আর্থিক প্রণোদনা, বার্ষিক গবেষণা ভাতা প্রদান, নতুন নিযুক্ত শিক্ষকদের জন্য বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, বিদেশে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার জন্য মেধার ভিত্তিতে ‘বঙ্গবন্ধু স্কলারশিপ’ প্রদান, আইকিউএসি প্রকল্পের অধীনে ইউজিসির তত্ত্বাবধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘পেডাগজিক্যাল ডেভেলপমেন্ট’ নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে কাজ করা, কভিড চলাকালীন ও কভিড-পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় পর্যায়ে সেশনজট হতে না দেয়া; এসব উদ্যোগ তার সফল শিক্ষা প্রশাসনের কয়েকটি উদাহরণ।