চোখে ধুলো দেয়া বদলি ও মানুষের ভোটাধিকার সংরক্ষণ
প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের আগে কিছু বিশেষ চাকুরে বা সরকারী বেতনভূক মানুষের বদলি নিয়ে বিশেষ তৎপরতা চালাতে দেখা যায়। যে মানুষগুলো প্রার্থীদেরকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে থাকেন বলে লোকমুখে শোনা যায় এবং অনেক সময় গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। তবে শুধু জানা-শোনার ব্যাপার নয়, এটা নিয়ে আমাদের দেশে নির্বাচনী সংস্কৃতিতেও সাড়াজাগানো বদ্ধমূল ধারণা আছে।
এই ধারণার কারণ হলো তারা পক্ষপাতিত্ব করে যে কোনো প্রার্থীকে জিতিয়ে দিতে পারেন। অথবা নানাভাবে জিতিয়ে দিয়েছেন বলে প্রচলিত একটা বড় সন্দেহ জনমন থেকে জনপ্রশাসন পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করেছে। পক্ষপাতিত্বমূলক সন্দেহ থেকে এবারের জাতীয় নির্বাচনের আগে তাদের বদলির বিষয়টি ইতোমধ্যে নির্বাচনী মাঠ গরমের স্থান দখল করে ফেলেছে।
এবছর নির্বাচনের আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, নির্বাচন কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে একবছরের অধিক সময় কোনো কর্মস্থলে কর্মরত ইউএনওদেরকে এবং ছয় মাসের অধিক সময় কোনো কর্মস্থলে কর্মরত থানার ওসিদেরকে বদলি শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে ২০৫ জন ইউএনও এবং ৩৩৮ জন ওসিকে বর্তমান কর্মস্থল থেকে অন্যত্র বদলি করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। যশোরসহ কোনো কোনো জেলায় এসপিদের বদলি করার দাবি উঠেছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে এরুপ বদলিকরণ প্রক্রিয়া আমাদের দেশে নির্বাচনী কৃষ্টির অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
সাধারণত যারা নির্বাচনকে নিরাপত্তা দেন অথবা মাঠ পর্যায়ে নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য সরাসরি নিরাপত্তামূলক কাজের আঞ্জাম, সকল উপাদানের সংরক্ষণ, সঞ্চালন, পরিবহন, প্রকাশন ইত্যাদির সংগে সরাসরি জড়িত থাকেন তাদের উপর গভীর আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করা ছাড়া কোন গত্যন্তর নেই। সেজন্য তাদের সাথে প্রার্থীর পূর্ববন্ধুত্ব, আত্মীয়তা, বা কোন ধরনের দহরম-মহরম থাকার ইতিহাস-উদাহরণ কিছুই থাকে না বলে ধরে নেয়া হয়। কিন্তু আজকাল এসবের কোনোটিরই কোনো গ্যারান্টি নেই বিধায় সন্দেহের ঊর্ধ্বে উঠে গভীর আস্থার সাথে নির্বাচনের মতো একটি পবিত্র কাজকে পরিচালনা করা দুরুহ হয়ে উঠেছে। তবুও এক ধরনের ‘আই-ওয়াস’-এর মতো নির্বাচনের আগে প্রতিপক্ষগুলোকে পারস্পরিক আস্থার নিরপেক্ষতা বোঝানোর জন্য বদলি নামক কাজটি করতে হয়।
কিন্তু গতানুগতিক কায়দায় বদলি প্রক্রিয়া সেরে নেয়ার প্রবণতা আরো বেশি পক্ষপাতিত্ব ও সন্দেহের উদ্রেক তৈরি করে ফেলেছে। ইতোমধ্যে বদলি কার্যকর হতে শুরু করেছে। এই প্রক্রিয়ার প্রথমসারির চাকুরেদের মধ্যে জেলা-উপজেলা বা থানা পর্যায়ের বিভিন্ন দায়িত্বশীল ব্যাক্তিকে ইতোমধ্যে নিজ কর্মস্থল থেকে সরিয়ে নতুন কর্মস্থলে পাঠানো হয়েছে। হয়তো আরো অনেককে সরাতে হবে। আপাতদৃষ্টিতে এটি একটি ‘মন্দের ভাল’ প্রক্রিয়া- যা জনমনে সন্দেহ কমাতে পারে বলে বিশ্বাস করা হয়ে থাকে।