উন্নতি দেখাতে গিয়ে কৃত্রিম পরিসংখ্যান অর্থনীতির ক্ষতির কারণ হতে পারে

বণিক বার্তা কায়সুল খান প্রকাশিত: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৬

সম্প্রতি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ৫২ বছর উদযাপনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের মানুষের গড় মাথাপিছু জিডিপি নিয়ে প্রবল আলোচনা চলছে। লক্ষণীয় যে সার্কভুক্ত প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের অর্থনীতিকে মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করে বাংলাদেশের অগ্রগতি পরিমাপ করা হচ্ছে। ব্রিটিশ ভারত থেকে ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভ করা পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর অপশাসন, পক্ষপাতমূলক আচরণ এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যের নীতিকে চ্যালেঞ্জ করে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাস আমরা কমবেশি সবাই জানি। কৃষি, বাণিজ্য, শিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সেবার মানে একসময় বাংলাদেশের চেয়ে প্রবলভাবে এগিয়ে থাকা রাষ্ট্র দুটিকে নির্দিষ্ট কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে সাফল্যের সঙ্গে পেছনে ফেলার ঘটনা অবশ্যই প্রণিধানযোগ্য। তবে একই সঙ্গে এটিও নজরে রাখা উচিত যে নিজেদের উন্নতির চিত্র উপস্থাপন করতে গিয়ে কৃত্রিম ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পরিসংখ্যানের অপব্যবহার যেন না হয়। সেটি দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হতে পারে। 


জিডিপি অর্থনীতির একটি কঠিন পারিভাষিক শব্দ। দৈনিক পত্রিকার পাঠকের বোঝার সুবিধার্থে সরলভাবে বলা যায়, নির্দিষ্ট কোনো সময় বা অর্থবছরে বাংলাদেশে আমাদের শ্রমিক-কর্মচারী এবং সেবাদানকারী নানা পেশার মানুষ কাজের মাধ্যমে যা কিছু দ্রব্য ও সেবা উৎপাদন করে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছে দেয়, সেগুলোর অর্থমূল্য অর্থাৎ টাকার অংকে যে দাম হয় তাকে জিডিপি বলে। এই জিডিপিকে দেশের মোট জনসংখ্যা এবং কর্মক্ষম নাগরিকের সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে যথাক্রমে জিডিপি পার ক্যাপিটা এবং জিডিপি পার ওয়ার্ক ফোর্স পাওয়া যায়। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কর্মক্ষম ব্যক্তির ওপর পরিবারের অন্যান্য সদস্যের নির্ভরশীলতা বুঝতে জিডিপি পার ওয়ার্ক ফোর্স জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জিডিপি-ভিত্তিক বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে দুটি বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখা জরুরি। দ্রব্য বা সেবা অবশ্যই দেশের ভৌগোলিক সীমার মাঝে উৎপাদিত হতে হবে এবং রফতানীকৃত দ্রব্যের মূল্য থেকে আমদানীকৃত দ্রব্যের মূল্যমানকে বিয়োগ দিয়ে যে নিট রফতানি থাকবে কেবল সেটিই জিডিপির অংশ হিসেবে বিবেচ্য হবে। 


জিডিপি কি আসলেই মানুষের জীবনযাত্রার মানকে বর্ণনা করতে সক্ষম? তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক উভয় উপায়েই এ প্রশ্নের নিঃশর্ত উত্তর মেলানো কঠিন। কেননা আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মূল্যস্ফীতি, বাজারে দ্রব্যের জোগান, আমদানি-রফতানির ভারসাম্য, ক্রেতার রুচি ও পছন্দ, ক্রয়ক্ষমতা এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য ব্যবহৃত বিশেষ ও নির্দিষ্ট মুদ্রার মানের বিপরীতে দেশীয় মুদ্রার মূল্যমান ইত্যাদি নাগরিকের ক্রয়ক্ষমতা কিংবা অর্থনৈতিক দ্রব্য ভোগের নিরিখে ভালো থাকার প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। একজন মানুষের আয় যত বেশিই হোক না কেন, ব্যয় যদি সামঞ্জস্যপূর্ণ কিংবা আয়ের চেয়ে কম না হয় তবে জীবনযাত্রার মানে বাস্তবিক অর্থে উন্নতি ঘটে না। কেননা শুধু ভোগ্যপণ্যের সংখ্যার বিস্তৃতি ঘটলেও জীবন থেকে অভাব দূরীভূত হয় না। আমরা জানি, পৃথিবীতে যাবতীয় অর্থনৈতিক সমস্যার মূলে রয়েছে সীমাহীন অভাববোধের বিপরীতে সীমিত সম্পদ থাকার চিরস্থায়ী দুর্বলতা। 


আমরা যদি সাম্প্রতিক সময়ের মূল্যস্ফীতির দিকে নজর দিই সেক্ষেত্রে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরে বাংলাদেশে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল যথাক্রমে ৯ দশমিক ২৯, ৯ দশমিক ৩৭ ও ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ। প্রায় দুই অংক ছুঁই ছুঁই এ মুদ্রাস্ফীতি বাংলাদেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। যদিও সরকার চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পরিপত্রে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছিল, কিন্তু সাফল্যের টালিখাতা কী অর্জিত হয়েছে তা তো উপর্যুক্ত পরিসংখ্যানেই সুস্পষ্ট। উচ্চ হারে মুদ্রাস্ফীতি জারি থাকায় গড় আয় বাড়ার পরও বাংলাদেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। ফলে বাস্তবে দারিদ্র্য বাড়ছে। 

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও