দেশের জন্য বিরূপ কিছু ঘটছে, পরে সামাল দেওয়া কঠিন হবে
৭ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত। একদিকে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ বেশ কিছু দল নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত; অন্যদিকে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো সরকার ও নির্বাচনের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু নাশকতার ঘটনাও ঘটেছে। সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুবউল্লাহ।
দুই সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কোন দিকে এগোচ্ছে বাংলাদেশ?
ড. মাহবুবউল্লাহ: আমরা আসলে একটা অনির্ধারিত গন্তব্যের দিকে এগোচ্ছি। আমরা এখন অজানা পথের যাত্রী। কোথায় গিয়ে আমরা পৌঁছাব, তার কিছুই জানি না। দারুণ অনিশ্চয়তায় আছে দেশ ও দেশের মানুষ।
নির্বাচনী লড়াইয়ে বিএনপি নেই। নির্বাচনের পর সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে, এমন ধারণাও করেন অনেকে।
ড. মাহবুবউল্লাহ: নির্বাচন হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু নির্বাচন কেমন হবে, তা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। বিরোধী দল নির্বাচনে না থাকার পরও সংঘাতের ঘটনা ঘটছে। তা ছাড়া ভোটারদের অংশগ্রহণ কতটা হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। কেউ বলছেন ভোটার উপস্থিতি হবে ৫ শতাংশ, কেউ ১০। কেউবা আবার বলছেন ২০ শতাংশের বেশি ভোটার ভোটকেন্দ্রে যাবেন না। অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য সরকার নানা চেষ্টা করছে। সরকারি দলের লোকজন বা তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল মানুষ সবাইকে ভোটকেন্দ্রে যেতে বলছেন। ভোটার তাঁর প্রার্থীকে ভোটে জিতিয়ে আনতে কেন্দ্রে যান। কিন্তু এবার মনস্তাত্ত্বিকভাবে ভোটারদের একটা বড় অংশ ভোটের সঙ্গে নেই। এই নির্বাচন সপ্তাশ্চর্যের মধ্যে একটি, ব্যতিক্রমী নির্বাচন।
আর কোথাও এমন ধরনের নির্বাচনের নজির আছে?
ড. মাহবুবউল্লাহ: আমাদের দেশেই তো আছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে কী ঘটেছে? আমি বলতে চাই, মনের তাগিদ না থাকলে মানুষ ভোটকেন্দ্রে যায় না। সেই তাগিদটা দেখা যাচ্ছে না। আসলে রাষ্ট্রের ভিত হলো জনগণের ঐক্য। জনগণের মধ্যে বিরোধ থাকে, মতানৈক্য দেখা দেয়। কিন্তু বৈপরীত্যের মধ্যেও একটা ঐক্য থাকে। জওহরলাল নেহরু যাকে বলেছিলেন ‘ইউনিটি ইন ডাইভার্সিটি’। কিন্তু আমাদের পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে, সেটাকে আমি বেদনাদায়ক বলি। প্রতিটি ক্ষেত্রে আইনের ব্যত্যয় ঘটছে। বাবাকে না পেয়ে পুলিশ ছেলেকে ধরছে, বড় ভাইকে না পেয়ে ছোট ভাইকে। এই সব কর্মকাণ্ড চিরতরে সমাজের মধ্যে একটা ভেদরেখা টেনে দিল। এটা জাতির জন্য বড় ক্ষতি। কথাই তো ছিল বিদেশে বাঙালিমাত্রই সজ্জন। সেটাও হারিয়ে গেছে। বিদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর বড় বড় সংগঠন হয়েছে। কিন্তু বাঙালিদের মধ্যে আগের সেই ঐক্য আর নেই।
বিএনপি এবার তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নতুন একটা ধারা যোগ করল—অসহযোগ। আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
ড. মাহবুবউল্লাহ: ১৯৭১ সালে যেমন অসহযোগ আন্দোলন হয়েছিল, এই অসহযোগ আন্দোলনের প্রভাব নিশ্চয়ই তেমন হবে না। এমনকি ব্রিটিশ আমলে যে বিলিতি পণ্য প্রত্যাখ্যানের অসহযোগ, তা–ও দেখা যাবে না। শেষ পর্যন্ত এটা হবে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখার কর্মসূচি। এই মুহূর্তে তাদের যে রাজনৈতিক কাঠামো বা সাংগঠনিক অবস্থা, তার মধ্যেও তারা হয়তো চেষ্টা করে যাবে। হয়তো কর্মী-সমর্থকদের তারা বলতে চাইছে আপনারা একটু ধৈর্য ধরুন। দলটির বহু নেতা–কর্মী কারাগারে। কেন তাঁরা কারাগারে, তা নিয়ে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক কিন্তু একটা টেলিভিশন চ্যানেলে সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিএনপির লোকজন বাইরে থাকলে গাড়িঘোড়া চলত না। তঁাদের এক রাতের মধ্যে বের করে আনাও সম্ভব ছিল, এমন মন্তব্যও করেছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক অবশ্য ভিন্ন দাবি করেছেন। এটা আসলে আওয়ামী লীগের একটা কৌশলও হতে পারে।