বঙ্গীয় পঞ্জিকা ও প্রকৃতিতে শীতকাল সবে শুরু হয়েছে। একটু উষ্ণতার জন্য গাঢ়তর শীতের দেশ সাইবেরিয়া থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পদ্মা-মেঘনা অববাহিকায় আসছে পরিযায়ী পাখির দল। যেন তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়েই রাশিয়া থেকে বাংলাদেশ অভিমুখে পাখা মেলা একটি বিবৃতি শীতের শুরুতে খানিকটা উষ্ণতা ছড়িয়েছে।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা ওই বিবৃতিতে বলেছেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল মনঃপূত না হলে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশেও ‘আরব বসন্তের মতো’ ঘটনা ঘটিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে তিউনিসিয়া থেকে শুরু হয়ে আরববিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্ষমতাসীন ব্যক্তি, সরকার বা মহলের বিরুদ্ধে এক গণঅভ্যুত্থান বা গণ আন্দোলনের যে ঢেউ আছড়ে পড়েছিল, সেটাই এক পর্যায়ে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম সূত্রে প্রাচ্য ও প্রতীচ্যে ‘আরব বসন্ত’ হিসেবে পরিচিতি পায়। ওই আন্দোলনের তোড়ে তিউনিসিয়ার বেন আলী, মিসরের হোসনি মুবারক, লিবিয়ার মুয়াম্মর আল-গাদ্দাফি, ইয়েমেনের আলী আব্দুল্লাহ সালেহর মতো দীর্ঘদিনের শাসকদের পতন ঘটে। কিন্তু রাজনৈতিক সেই বসন্ত প্রাকৃতিক বসন্তের মতোই বেশি দিন টেকসই হয়নি।
কয়েকজন ব্যক্তি একনায়কের বিদায় হলেও প্রতিষ্ঠানিকভাবে গোটা অঞ্চলে কর্তৃত্ববাদের মুষ্ঠি অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে শক্ত হয়েছে। গণআন্দোলনে জড়িত প্রজন্মের বেশির ভাগকে হয় দেশ ছাড়তে, না-হয় জেলে যেতে হয়েছে। এর বাইরে যারা ছিলেন, তাদেরও দিন কাটছে ভীতি ও হুমকির মধ্যে। আরব বসন্তের প্রতিক্রিয়ায় গোটা আরব অঞ্চলে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং লাখ লাখ পরিবার হয়েছে উদ্বাস্তু। বেড়েছে মানবাধিকার লঙ্ঘন, জঙ্গিবাদ, গৃহযুদ্ধ, দারিদ্র্য। যে কারণে বছর দুয়েকের মধ্যেই পশ্চিমা মিডিয়াই ওই পরিস্থিতির নাম দিয়েছিল ‘আরব উইন্টার’ বা আরব শৈত্য।
যাহোক, বাংলাদেশে আরব বসন্ত পরিস্থিতি ঘটানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হলে মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেছেন, ‘আমরা বাংলাদেশে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকে সমর্থন করি এবং এর চেয়ে বেশি বলার মতো আমার আর কোনো মন্তব্য নেই।’
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনও বলেছেন, ‘রাশিয়া কী বলেছে, এটা আমাদের ইস্যু নয়। এটা ওদের জিজ্ঞাসা করেন। অনেকে অনেক ধরনের কথা বলবে কিন্তু আমরা এটা নিয়ে কিছু বলতে চাই না। আমরা সার্বভৌম, আমাদের ভারসাম্য পররাষ্ট্রনীতি’ (সমকাল ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩)।
বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা বিষয়ে মস্কোর মন্তব্য নিয়ে ওয়াশিংটন সবসময় নিশ্চুপ থেকেছে এমন নয়। গত নভেম্বরেই রাশিয়া অভিযোগ করেছিল, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে এবং ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত সরকারবিরোধী আন্দোলনের পরিকল্পনা নিয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওই অভিযোগ অস্বীকার করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছিল, বাংলাদেশ বিষয়ে রাশিয়ার বক্তব্য তাদের ‘ধারাবাহিক অপব্যাখ্যার’ অংশ।