জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব আছে
সম্প্রতি শেষ হয়েছে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন। এবারের সম্মেলনে গঠন হয়েছে লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড। গৃহীত হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মূল্যায়ন (জিএসটি) প্রতিবেদন। অন্যদিকে এবারো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানোর বিষয়ে একমত হননি বিশ্বনেতারা। ফলে বিষয়টি খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। কপ২৮ সম্মেলনের নানা দিক নিয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির।
বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন ২০২৩ শেষ হলো। প্রত্যাশা-প্রাপ্তি নিয়ে নানা বিশ্লেষণ হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর স্বার্থকে আমলে না নেয়ার বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন জানতে চাই।
ফারাহ্ কবির: বিশ্বের যতগুলো দেশ আছে, জাতিসংঘের এই যে প্রক্রিয়াটা, কপ আয়োজন করার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়গুলোকে নিয়ে আসতে পারে, সবাই একসঙ্গে বসে এ বিষয়ে ভাবতে পারে, এটাকে আমরা যদি বলি ‘স্পেস’, এই স্পেসটাকে আমরা মূল্য দিয়ে থাকি। আমরা সবসময় আশা করি, এখানে যে দেশগুলো থাকবে, যারা অংশগ্রহণ করছে, তাদের সামনে আমরা আমাদের চিন্তাগুলো তুলে ধরতে চাই। তো সে জায়গা থেকে পুরো পৃথিবীর সিভিল সোসাইটি বা সাধারণ মানুষের যে চাওয়াটা ছিল—এ শতাব্দী শেষে উষ্ণতা বৃদ্ধির পরিমাণ ১ দশমিক ৫-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা। এর আলোকে আগামী দিনের কাজকর্ম ও পরিকল্পনা ঠিক করা। ১ দশমিক ৫-এ টার্গেটটা কোনো কারণে আমরা যদি রক্ষা করতে না পারি, আমরা যে ধরনের দুর্যোগের মুখোমুখি হব, এখন যে ধরনের দুর্যোগের শিকার হচ্ছি, এসব থেকে বেরোতে পারব না। বরং আরো কষ্টের মধ্যে পড়ে যাব। বিশেষ করে হিট ইমিউশনের কারণে তাপমাত্রা বাড়ছে তো বাড়ছেই। এজন্য এটা আমাদের একটা বড় চিন্তার বিষয়। এবারের সম্মেলনে এটাই প্রথম চাওয়া ছিল ১ দশমিক ৫ টার্গেট রাখা। পাশাপাশি আমাদের ছিল ক্লাইমেট ফাইন্যান্স বা লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড গঠন করা। এ বিষয়টা নিয়ে আমরা সবাই কাজ করছিলাম। আমাদের লক্ষ্যমাত্রাও তাই ছিল। তো প্রথম দিনেই কপ প্রেসিডেন্সি ঘোষণা দিয়ে দিল, লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড গঠন করা হলো এবং তারা কিছু সংখ্যা বললেন, এই পরিমাণ দান করা হলো। আপনি জানেন, এখন পর্যন্ত ওয়ান মিলিয়নও আসেনি এ তহবিলে। তবে এ পদক্ষেপ অবশ্যই সাধুবাদ জানানোর মতো। কিন্তু এটা আমরা একেবারে হাত তুলে সাধুবাদ জানাতে পারছি না এজন্য—এখনো এ বিষয় পরিষ্কার হয়নি যে এটা কি ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে নাকি একবার দিয়েই শেষ হয়ে গেল। এ ফান্ডে এলে কত টাকা আসবে? এটা কীভাবে বণ্টন হবে? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যা-ই আসুক তা যেন একেবারে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রায়োরিটি দিয়ে বণ্টন করা হয়। আর এ বণ্টন হতে হবে খুব স্মুথ ও সহজ। দেখা গেল নানা নিয়মকানুন করে একটা ঝামেলা পাকিয়ে ফেলল। তাহলে কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তরা সহজেই অর্থটা পাবে না। এভাবে যেন মানুষকে বিব্রত করা না হয়। আমরা যারা এলডিসি দেশের মধ্যে আছি, উন্নয়নের সঙ্গেই যুদ্ধ করছি, দারিদ্র্য দূর করার যুদ্ধে অলরেডি আছি, তার মধ্যে বারবার জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নানা ধরনের দুর্যোগের ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছি। নিজেদের যতটুকু অর্থ আছে সেটা দিয়েও এগোতে পারছি না জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে।
জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানোর বিষয়টি খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। বিষয়টি আপনারা কীভাবে দেখছেন?
ফারাহ্ কবির: বিষয়টি নিয়ে খুবই চিন্তিত। অনেক আশা ছিল এবারের কপটা ফসিল ফুয়েল ফিজ আউট কপ হবে। সেখানে যে খসড়াটা এল, সেখানে দেখা গেল ফেজ আউট শব্দটা নেই। বরং তারা বারবার বলছে, রিডিউস কমিয়ে আনা, কীভাবে কমিয়ে আনবে সেটা নিয়ে কথা বলা যেতে পারে এবং এই যে কমিয়ে আনবে সেটাও কিন্তু ভলান্টারি করে রাখছে, বাধ্যতামূলক করছে না। আমরা জানি, যেসব দেশের উন্নতি হয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভর করে, ধনী দেশ, তাদের নিয়েই তো সমস্যা। তারাই তো বের হতে পারছে না। বের হতে রাজি হচ্ছে না। তারাই বাগড়া দিচ্ছে। প্রায় দেড়শরও বেশি দেশ ফসিল ফুয়েল থেকে বের হতে রাজি হয়েছে, সম্মতি দিয়েছে, কিন্তু হাতে গোনা ১০টি দেশ বারবার সেখানে বাধা তৈরি করছে। তো এ খসড়াটা আমাদের বড় চিন্তার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। সবাই যদি ফসিল ফুয়েল ব্যবহার কমানোর ব্যাপারে রাজি না হয় তাহলে আমরা ১ দশমিক ৫ টার্গেটে কীভাবে থাকব? আমাদের মতো দেশগুলো অনবরত কষ্ট করছি, অ্যাডাপটেশন করছি, আমরা সহনশীল হচ্ছি, কিন্তু ধনী দেশগুলো যেভাবে আছে তারা সেভাবেই চলছে, তাদের জ্বালানি নীতিতে কোনো পরিবর্তন আনবে না; তাহলে তো দুইটা দুই রকম হয়ে গেল না? এটা তো একটা বিরোধে এসে দাঁড়াল।