প্রবীণদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ কমে যাওয়ার কারণ ও পরিণতি
অনেক সমাজে প্রবীণদের সম্মান করা সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের ভিত্তি যা পারিবারিক বন্ধনকে শক্তিশালী করে এবং সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখে। যা-ই হোক, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে প্রবীণদের প্রতি সম্মান হ্রাস নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। সামাজিক গতিবিদ্যার এ পরিবর্তনটি জটিল ও বহুমুখী।
বাংলাদেশের যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রবীণদের প্রতি শ্রদ্ধা হ্রাসের প্রাথমিক চালকগুলোর মধ্যে একটি হলো প্রজন্মগত ব্যবধান। একেকটি প্রজন্ম ভিন্ন ধরনের মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসে। সমাজ যেমন পরিবর্তন হয়, তেমনি ব্যক্তির মূল্যবোধ, প্রত্যাশা এবং বিশ্বদর্শনও পরিবর্তন হয়। তরুণরা, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং বিশ্বায়ন দ্বারা চিহ্নিত একটি ভিন্ন যুগে বেড়ে উঠছে। গতানুগতিক ঐতিহ্য, কর্তৃত্ব এবং শ্রেণীবিন্যাসের বিষয়ে তাদের প্রায়ই ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।
অন্য অনেক সমাজের মতো বাংলাদেশী সমাজ সাম্প্রতিক দশকে দ্রুত পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। তরুণ প্রজন্ম ক্রমবর্ধমানভাবে ইন্টারনেট, মিডিয়া ও শিক্ষার সুযোগের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী প্রভাবের সংস্পর্শে আসছে। এই এক্সপোজার তরুণ প্রজন্মকে জীবন সম্পর্কে একটি বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গির দিকে নিয়ে যেতে পারে এবং ঐতিহ্যগত নিয়ম ও অনুশীলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।
সমষ্টিগত মূল্যবোধ, কর্তৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ঐতিহ্যের প্রতি প্রশ্নাতীত আনুগত্য, যা বাংলাদেশী সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, এখন আরো সমালোচনামূলক দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে। তরুণ প্রজন্ম প্রশ্ন ছাড়াই এ মূল্যবোধগুলোকে গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করছে এবং প্রায়ই নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও চারপাশের পরিবর্তিত বিশ্বের আলোকে তাদের পুনর্ব্যাখ্যা করতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।
এক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আন্তঃপ্রজন্ম সম্মান এবং বোঝাপড়া বজায় রাখার জন্য প্রজন্মের মধ্যে কার্যকর যোগাযোগ অত্যাবশ্যক। যা-ই হোক, বয়সের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ব্যবধান, ভাষা, যোগাযোগের শৈলী এবং মূল্যবোধের পার্থক্য দ্বারা উদ্দীপিত বিষয় প্রজন্মের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি এবং বিচ্ছিন্নতার অনুভূতিতে অবদান রাখতে পারে।
অনেক ক্ষেত্রে প্রবীণরা তরুণ প্রজন্মের ভাষা এবং সাংস্কৃতিক মান বোঝার ক্ষেত্রে অপারগ হতে পারেন, যার ফলে তাদের পক্ষে অর্থপূর্ণ সংযোগ স্থাপন করা কঠিন হয়ে পড়ে। বিপরীতভাবে, যুবকরা অনুভব করতে পারে যে প্রবীণরা তাদের সমস্যা এবং চাওয়া-পাওয়া বুঝতে ব্যর্থ। ফলে তারা নিজকে তাদের থেকে আরো দূরে সরিয়ে রাখে। ভুল বোঝাবুঝি ও কার্যকর যোগাযোগের অভাব তরুণদের ভেতর বিরক্তি ও হতাশার দিকে পরিচালিত করে এবং আন্তঃপ্রজন্মীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে আদর্শ হওয়া উচিৎ এমন সম্মান নষ্ট করে।